E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরে অদৃশ্য সাপ আতঙ্ক

'জ্বীন সাপের কাম কাইজ, সাপ বাতাসের মত আহে'

২০১৫ মে ১১ ২১:৫৮:০১
'জ্বীন সাপের কাম কাইজ, সাপ বাতাসের মত আহে'

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের মুসারকান্দি, লুন্দি, হাসানকান্দি, মাঝকান্দি, সাতবাড়িয়া এবং মাদারীপুর সদর উপজেলার শ্রীনদী, চরনাচনা, বাহাদুরপুর, গ্রামবাসী গত ৪ দিন ধরে অদৃশ্য সাপ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

ইতোমধ্যে অদৃশ্য সাপের কামড়ে অর্ধ শতাধিক মানুষ অসুস্থ্য হয়েছে বলে এলাকাবাসী দাবী করেছে।

গ্রামবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের মুসারকান্দি, লুন্দি, হাসানকান্দি, মাঝকান্দি, সাতবাড়িয়া এবং সদর উপজেলার শ্রীনদী, চরনাচনা, বাহাদুরপুর গ্রামের অর্ধশতাধিক লোককে অদৃশ্য সাপ কামড় দিয়েছে। নিজেদের সাপ কামড় দিয়েছে বলে যারা দাবী করছেন তাদের বেশি ভাগই নারী।

অপরদিকে রাজৈর থানার মোড় এলাকার কবিরাজ আবুল কালামের বাড়িতে সাপের বিষ নামানোর জন্য গ্রামবাসী ভিড় করছে।

ঐ কবিরাজ দাবী করে বলেন, ইতিমধ্যে সে বিনা পয়সায় প্রায় ৩০ জনের বিষ নামিয়েছে।

অদৃশ্য সাপ সম্পর্কে কবিরাজ আবুল কালাম বলেন, এ সব জ্বীন সাপের কাম কাইজ। এ সাপ দেখা যায় না। বাতাসের মত আহে।

এর কারণ জানতে চাইলে ঐ কবিরাজ আরও বলেন, নাগ-নাগীন এক সাথে আছিলো। মনে হয় কেউ একটা মাইরা ফেল্যাইছে। তাই আরেকটা ক্ষ্যাইপে এহন কামড়াইতেছে। যাদের কামড়ায় তাদের আমার কাছে নিয়া আসে আর আমি বিনা পয়সায় বিষ নামাইয়া দেই।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, ঐ কবিরাজ বিষ নামাতে বকশিস হিসেবে ৫০৫ টাকা করে নিচ্ছেন। হঠাৎ একটা আতঙ্ক গ্রামের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে কবিরাজ ব্যাপারটিকে কাজে লাগিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কোন কারণে কেউ অসুস্থ হলেই গ্রামের সাধারণ সহজ সরল মানুষ ভয়ে ঐ কবিরাজের কাছে গিয়ে বিষ নামিয়ে আনছে।

এ সময় তারা আরো বলেন, মূলত এটা সাপটাপ কিছু না। আতঙ্ক থেকে এই কাজ করছে। আর কেউ সাপ কামড়িয়েছে দাবী করে ঐ কবিরাজের কাছে গেলে সে মাছের কাটা দিয়ে হাত বা পা থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্ত বের করে। আর সেই রক্তকে বিষ বের করেছে বলে দাবী করে। এই পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ মারা যায়নি বা কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়নি। মূলত এটি সম্পূর্ণ মানসিক ব্যাপার।

এ ব্যাপারে স্থানীয় শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ি মোজাম্মেল হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, এটা সর্ম্পূণই মনের ব্যাপারে। গ্রামের মানুষ ভয় পেয়ে এমন করছেন। কোন কারণে একটু অসুস্থ হলেই মনে করছে তাকে অদৃশ্য সাপে কামড় দিয়েছে। তাই এই আতংক থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য দরকার সচেতনতা।

স্থানীয় কামাল বেপারী, মোহন খান, গৃহবধু শিউলি বেগমসহ একাধিক গ্রামবাসী জানান, দিনে দিনে এই অদৃশ্য সাপের কামড়ের সংখ্যা বাড়ছে।

তারা আরো বলেন, এটা হচ্ছে জ্বীন সাপ। বাতাসের মত গায়ে পড়ে কামড় বসিয়ে চলে যায়।

লুন্দি গ্রামের আসাদুজ্জামান জানায়, আমাদের গ্রামের জুলি, পারভিন, ভুলু, করিম মুন্সী, তামান্না ও আলীরাজকে এ অদৃশ্য সাপে কামড়িয়ে আহত করে।

হাসানকান্দি গ্রামের মান্নান রহমানের স্ত্রী পারভীন বেগম, চরনাচনা গ্রামের গৃহবধু মনোয়ারা বেগম, সাতবাড়িয়া গ্রামের পরিমল বাড়ৈর স্ত্রী সবিতা বাড়ৈর নিজেদের অদৃশ্য সাপে কামড় দিয়েছে বলে দাবী করে বলেন, হঠাৎ দেখি শরীর কেমন যেন করছে, মাথা ঘুরছে, পায়ে জ্বালাপোড়া করছে। তখন বুঝেছি অদৃশ্য সাপে কামড় দিয়েছে। কবিরাজের কাছে গিয়ে বিষ নামিয়ে আসার পর আমরা এখন সুস্থ।

মাঝকান্দি গ্রামের আরেক গৃহবধূ জায়েদা বেগম বলেন, আমি আসরের নামাজ শেষ করা মাত্রই দেখি মাথা ঝিমঝিম করছে। পরে দেখি পায়ের পাতার চামড়া উঠে গেছে। পা জ্বলছে। তখন বুঝতে পারি অদৃশ্য সাপে
কামড় দিয়েছে।

অদৃশ্য সাপ কি এই সম্পর্কে ঐ গৃহবধূর কাছে জানতে চাইলে সে চুপ করে থাকে, কোন উত্তর দিতে পারেনি।

রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার প্রদীব কুমার মন্ডল বলেন, আমাদের এখানে একজনও সাপে কামড়ানো রোগী আনা হয়নি। এটা মূলক কুসংস্কার। বিজ্ঞানে এ ধরণের কোন কিছুই নেই। এই আতঙ্ক বন্ধের জন্য সচেতনতা দরকার।

এ ব্যাপারে জানার জন্য রাজৈর থানা অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে ফোন দেওয়া হলে, তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।

(এএসএ/পিএস/মে ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test