E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গৌরীপুরের শিশু কল্পনার উপর নির্যাতন,গ্রেফতার ১

২০১৫ মে ১২ ১৫:১৬:৩২
গৌরীপুরের শিশু কল্পনার উপর নির্যাতন,গ্রেফতার ১

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : পিতৃহীন পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের অভাবের সংসারে হাল ধরতে চেয়েছিল কল্পনা। ওদের ভরণপোষনের জন্য মাত্র ২ হাজার টাকা বেতনে আত্মীয় আরশেদ আলী মাধ্যমে গৃহ পরিচারিকার কাজে যোগ দেয় কল্পনা। কোথায়, কি কাজ করছে কিছু জানে না কল্পনার পরিবার! এক বছর পূর্বে সাক্ষাতের জন্য ছুটে যান তার মা রেজিয়া খাতুন। দরজার আড়াল থেকে এক নজর দেখেই আরশাদ আলীর সঙ্গে ফেরত আসতে বাধ্য হন। সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী রুনা আক্তারের নির্যাতনে কল্পনা আজ মৃত্যুপথযাত্রী!

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের বড়ইকান্দা গ্রামে মৃত আব্দুস সালামের কন্যা মোছাঃ কল্পনা (১৮)। পিতৃহীন পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের অভাবের সংসারে ঝি’র কাজ করার প্রলোভন দেখায় আত্মীয় আরশাদ আলী। মাসে ২হাজার টাকা বেতনে কল্পনাকে নিয়ে যায় আরশাদ আলী। কিন্তু দীর্ঘদিন মেয়ের খোঁজ না পেয়ে মেয়ে কোথায় আছে তা জানানোর জন্য আরশাদ আলীর ওপর চাপ দেন মা রেজিয়া খাতুন। মেয়েকে পাচার বা অর্থনৈতিক কাজে জড়ানোর অভিযোগ এনে ময়মনসিংহের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মেয়ের সন্ধান চেয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর/১৪ তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৫ ধারায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির পর মামলা থেকে বাঁচতে অবশেষে পাশ্ববর্তী সিংচাপুর গ্রামের সৈয়দ আলীর পুত্র আরশাদ আলী (৫০) ঢাকা থেকে মেয়েটিকে নিয়ে ময়মনসিংহে আসেন। অর্ধমৃত মেয়েটিকে স্বাভাবিক, কোন নির্যাতন করা হয়নি, সুস্থ্য অবস্থায় অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর করার হয়েছে মর্মে এফিডেভিট করান বলে স্বীকার করেন আরশাদ আলী। মেয়েটিকে কোন কিছু না বলেই নানা কাগজে নেয়া হয় টিপসই। একই গ্রামের কাউসার ও মোনাক কোর্ট আঙ্গিনায় কল্পনাকে দেখতে পেয়ে আরশাদকে আটক করে রবিবার রাত্র ১০টার দিকে ভিকটিমসহ বাড়িতে নিয়ে আসে।
যে ফুটফুটে মেয়েটিকে পাঠিয়েছিলো সেই মেয়েটিকে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় দেখে যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না পড়েন আত্মীয়-স্বজন। সুন্দর সেই মেয়েটিকে যেন চেনার জো নেই। মেয়েকে দেখে চিৎকার আর বুকফাটা আর্তনাদে ভেঙ্গে পড়েন মা রেজিয়া। মেয়ের করুণ অবস্থা দেখে গ্রামবাসী পুলিশকে খবর দেয়। আরশাদের লোকজনের কবল থেকে গৌরীপুর থানার এসআই আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ মেয়েটি উদ্ধার ও আরশাদ আলীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।
ভিকটিমকে উদ্ধারের পর থানায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়েটি সারা শরীর জুড়ে রয়েছে অসংখ্য নির্যাতনের চি‎হ্ন। কল্পনা জানায়, হাত-পা বেঁধে-মুখে ওড়না দিয়ে আটকিয়ে নির্যাতন চালানো হতো তার উপর। ফুটানো পানি ভরা এল্যুামিনিয়ামের পাত্র মাথায় বসিয়ে গরম ছেকা দেয়া হয়েছে। এতে মাথার চামড়া পুড়ে চুল উঠে গেছে। ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে দু’হাতের আঙ্গুল। নির্যাতনে ভেঙ্গে গেছে উপরের পাটির ৩টি দাঁত। দু’পায়ে নির্যাতনের স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে পচন ধরেছে। কানে উপর্যুপুরি মুচড়িয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। পিটে-গাড়ে, বুকের উপর, কোমড়সহ পুরো শরীরে আঘাতের কালো দাগ।
আরশাদ আলী জানায়, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা বর্তমানে পদ্মা সেতুতে দায়িত্বরত লেঃ কর্নেল ফেরদৌস আলমের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতে দিয়েছিলাম। কল্পনা জানায়, সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী রুনা আক্তার নানা অজুহাতে বর্বরোচিত এ নির্যাতন চালিয়েছে। গৌরীপুর থানা ওসি মোহাম্মদ আলী শেখ জানান, গ্রেফতারকৃত আরশাদ আলী ও উদ্ধারকৃত ভিকটিম কল্পনাকে বিজ্ঞ বিচারকের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
(এমএইচএম/পিবি/মে ১২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test