E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুলিশই সাকিরকে পিটিয়ে মেরেছে!

২০১৫ মে ১২ ২১:১১:০৮
পুলিশই সাকিরকে পিটিয়ে মেরেছে!

কাপাসিয়া(গাজীপুর) প্রতিনিধি : কাপাসিয়ায় উপজেলার কড়িহাতা বাজারে গত সোমবার সন্ত্রাসী ও পুলিশের হাতে বাজারের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সাকির নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে। সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সবার চোখে মুখে আতংকের ছাপ দেখা যায়। পুলিশ ও সন্ত্রাসী মুজিবুরের ভয়ে মানুষ এলাকা ছাড়া। ভয়ে এলাকার লোকজন রাস্তায় বের হয় না।

সোমবার দুপুরে সাকির কবিরের বাজার মসজিদ থেকে জোহরের নামাজ শেষে বের হবার সময় মজিবুর বাহিনীর হামলায় শিকার হন। পরে সাকির আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের লাঠি দিয়ে আঘাত করে । পরে সে মুত্যু কোলে ঢলে পড়ে। আজ মঙ্গলবার সকালে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক গোরস্তানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। মঙ্গলবার থেকে তিন দিন বাজার কমিটি শোক পালন কর্মসুচি গ্রহন করেন। জাকির হোসেন সাকির কড়িহাতা গ্রামের মৃত আবদুল হাইয়ের পুত্র। তাঁরা ৪ ভাই ও ৪ বোন এবং ভাইদের মাঝে সে দ্বিতীয়।

জানাজা শেষে কবিরের বাজারের নিহত চাউল ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সাকিরের বড় ভাই ঢাকা কলেজের অধ্যাপক আবুল হোসেন কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, বর্তমানে আমি এবং আমার পরিবার নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি। থানায় মামলা করে কিইবা হবে, আইন বা পুলিশের প্রতি এ এলাকার মানুষের আস্থা কম। মজিবুর দুর্ধষ সন্ত্রাসী, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করলে কেউ পার পাবেনা। যতবারই মজিবুরকে আটক বা মামলা দেয়া হয়েছে, ততবারই সে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে গেছে। নিহতের স্বজনরা জানান,প্রভাবশালী মহলের চাপে সাকির হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে এ মর্মে লিখিত দিয়ে গতকাল সোমবার গভীর রাতে থানা থেকে লাশ নিয়ে দাফন করতে হয়েছে। এলাকার জানে আলম কনক,বাজার ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া আলী আকবর জানান, মজিবুর রহমান এলাকার চিহ্নিত সুদের ব্যবসায়ী। তার পুত্র তারেকের রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। পকেটমারের পেশা থেকে আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মত আজ বহু টাকার মালিক বনে গেছেন। এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, দাঙ্গা হাঙ্গামা, মাদকসহ সকল অপকর্মের সাথেই এ বাহিনী জড়িত। মজিবুর তার স্ত্রী ও পুত্র তারেক একাধিকবার থানা পুলিশ আটক করলেও সরকার দলীয় নেতাদের দেনদরবারে ছাড়া পেয়ে যায়। আবদুল কবিরের নামে স্থাপিত কবিরের বাজারে প্রায় ১০ কাঠা জায়গায় প্রস্তাবিত লায়ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত ছিল এবং সেখানে ১৯৯০ সালে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ৪/৫ দিন পূর্বে উদ্যোক্তা আবদুর কবির ওই জায়গায় একটি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। জায়গাটির মালিকানা দাবী করে মজিবুর গতকাল সোমবার ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সীমানা প্রাচীরটি ভেঙ্গে ফেলে। সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহযোগিতায় কবিরের বাজারে ও আশে পাশের বাড়ি ঘরে ঢুকে নারী-পুরুষের উপর নির্বিচারে হামলা ভাংচুর ও এলোপাথারি মারপিট করে তান্ডবলীলা চালায়। একাধিক ব্যবসায়ী জানায়, কড়িহাতা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি মো: ফারুক এর নেতৃত্বে মাসুদ ,জাহিদুল, পাপন সহ আরো ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল,কাপাসিয়া থানার এস আই মোমেন সিরাজির সহায়তায় মোটর সাইকেল ও সিএনজিতে রাম দা ,হকিষ্টিক, টেটা বল্লম,লাঠিসোটা নিয়ে বাজারে ভাংচুর চালায়। এ সময়ে বাজারের লোকজন ভয়ে ছুটাছুটি দৌড়ে পালিয়ে যায়। ওই সময় নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হলে জাকির হোসেন সাকির সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে। আত্মরক্ষায় সে দৌড় দিলে পুলিশ তাকে আটকিয়ে মারপিট করলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদশীরা জানান, প্রায় মাস খানেক পূর্বে মুজিবুর ও তার পুত্র তারেকের নেতৃত্বে পিতা-পুত্রের বাহিনী স্থানীয় বেশ কয়েক জন যুবকে কুপিয়ে আহত করলে এলাকাবাসী কবিরের বাজারে তাদের দোকান, বাড়ি ভাংচুর এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে মজিবুর ও তার ছেলেরা এলাকায় আসে না। দীর্ঘদিন পর সোমবার পুলিশের সহযোগিতায় এলাকায় ফিরে আসে। প্রত্যক্ষদর্শী আলী আকবর জানান, স্থানীয় লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগে থানার এস আাই মোমেন সিরাজীর নেতৃত্বে ৩জন পুলিশ কবিরের বাজারে গিয়ে ভাঙচরু চালায় এবং বাজারের নিরিহ লোকদের উপর হামলা করে। রাস্তার মধ্যে পুলিশ সাকিরকে ধরে পিটিয়ে আহত করেছে। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। নিরিহ ও ভালোমানুষ হিসাবে তার এলাকায় পরিচিতি ছিল।

থানার ওসি আহসান উল্লাহ জানান, পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে হামলার শিকার হন। তবে এ ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি।

(এসকেডি/পি/মে ১২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test