E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘বাইচ্চা থাকলে বুড়া বয়সে রাস্তায় ঘুরতে হইতো না’

২০১৫ মে ১৩ ১৩:৫২:৫০
‘বাইচ্চা থাকলে বুড়া বয়সে রাস্তায় ঘুরতে হইতো না’

কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : ‘দুইডা মাইয়া হইছিলো, কিন্তু বাচে নায়। জন্মের বছর না ঘুরতেই এ্যাক এ্যাক কইর‌্যা জ্বর হইয়া মইর‌্যা গ্যাছে। হগলডি কইছে আর একটা বাচ্চা নে। কিন্তু আবার যদি মইর‌্যা যায় হেই কষ্টে আর বাচ্চার কথা চিন্তা করি নাই। ৩০ টা বছর তো পোলামাইয়া ছাড়াই কাডাইয়া দিছি। কিন্তু এ্যাহন বুজছি একটা পোলামাইয়া থাকলে এই বুড়া বয়সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হইতো না। মানুষের কাছে হাত পাততে হতো না’। প্রায় এক নিঃশ্বাসে এই কথাগুলো বললেন সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধ মোখলেস মৃধা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামের গুচ্ছগ্রামের ১২ নং কক্ষে স্ত্রী কপূরজান বিবিকে নিয়ে এখন মোখলেস মৃধার সংসার। অন্যের বাসায় ঝি’র কাজ করে স্ত্রী একবেলা যে ভাত-তরকারি পায় তা খেয়েই এখন তাদের বেঁচে থাকা।

লোন্দা খেয়া ঘাটে বসে আলাপ হয় মোখলেস মৃধার সাথে। যাত্রী ছাউনির এক কোনে বসে আছে। তার দুই পা ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। এলার্জি ও চর্মরোগে সারা শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। লাঠি ভর করে তাকে এখন চলতে হচ্ছে। অথচ কয়েক বছর আগেও এলাকায় কর্মঠ মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলো তার। কিন্তু কেন এ অবস্থা জানতে চাইলে বলেন,‘এ্যাকদিন ঝড়ের বিকালে মাঠের গরু-মহিষ গোয়ালে নেওয়ার সময় মহিষের খুড়ার নিচে চাপা পড়ি। হেইয়ার পর থাইক্কা আর হাঁটতে পারি না। কাম কাইজও বন্ধ হইয়া গ্যাছে। হেই থেইক্কা মুই অচল। মাইনষের কাছে হাত পাইত্তা দুই/চাইর টাহা পাই। হেইয়া দিয়াই চলে। হাসপাতালে গেছিলাম ডাক্তার দেহাইতে। কিন্তু অনেক টেষ্টপাতি দেছে। টাহা নাই তাই আর চিকিৎসাও করাইতে পারি নাই। এ্যাহন শুধু আল্লার ডাকের অপেক্ষা’এ কথা বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে। এ সময় চোখের কোনে জমে থাকা জল টুপটুপ করে পড়তে থাকে।
মোখলেস মৃধার আর্তি-বাচ্চা দুইডা বাইচ্চা থাকলে এই বুড়া বয়সে রাস্তায় ঘুরতে হইতো না। বুড়া হইয়া মরার উপক্রম হইছি, কিন্তু এ্যাহনও নাকি মোর বয়স্ক ভাতা পাওয়ার সময় হয় নায়। গত ৫/৭ বছর ধরে একটি কার্ডের জন্য ঘুরলেও তার ডাকে সাড়া দেয়নি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
লোন্দা খেয়াঘাটের একাধিক মানুষ জানান, তারা মাঝে মাঝে তাকে ৫/১০ টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। কিন্তু এখন তার যে অবস্থা তাতে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। সেই সাথে প্রয়োজন আর্থিক সহায়তা। তার কোন ছেলে-মেয়ে নেই তাতে কি তার চিকিৎসা হবে না। জীবনের অন্তিম লগ্নে একটু পেট ভরে খেতে পারবে না। সবাই একটু এগিয়ে আসলে আমরা এই বৃদ্ধ দম্পতির মুখে আবার হাসি ফোটাতে পারি।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য আব্বাস মোল্লা জানান, তিনি নতুন মেম্বর নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন করে বয়স্ক ভাতার কার্ড আসলে তাঁকে একটি কার্ড দেয়া হবে। কিন্তু তা কবে তা নিজেও জানেন না তিনি।
(এমআর/পিবি/মে ১৩,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test