E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে ২ দিনে একই বিদ্যালয়ের ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ

২০১৫ মে ১৩ ২২:১৫:২০
শরীয়তপুরে ২ দিনে একই বিদ্যালয়ের ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পর পর দুই দিনে ৩৫ জন ছাত্রী অসুস্থ্য হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অসুস্থ হওয়া শিক্ষার্থীরা সবাই সপ্তম ও অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কাছে না থাকায় উপজেলা সদর থেকে চিকিৎসক এনে অসুস্থ্য হওয়া ছাত্রীদের স্কুল ঘরে এবং সখিপুর বাজারের বিভিন্ন ফার্মেসীতে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন সকল ছাত্রীরা এখন আশংকামুক্ত।

সখিপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকালে ক্লাস চলা অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ করেই প্রথমে অষ্টম শ্রেনীর ও পরে ৭ম শ্রেনীর দুই ছাত্রী মাথা ঘুরে পরে যায়। এর পর ৫ মিনিটের মধ্যে আরো ৯ জন ছাত্রী অসুস্থ্য হয়ে পরে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রতি বুধবার স্কুলমাঠে গরুর হাট বসায় এইদিন প্রভাতকালিন ক্লাস থাকায় বুধবার সকাল পৌনে ৮ টায় ক্লাস শুরু হয়। এসময় বিজ্ঞান শিক্ষিকা শামীমা আক্তার ৮ম শ্রেনীতে শিক্ষর্াীদের পাঠদান করাচ্ছিলেন।

তিনি বলেন, ১৫ মিনিট ক্লাস চলার পর হঠাৎ সকাল ৮টার সময় রাফিউ আক্তার মাথা ব্যাথা ঘুরাচ্ছে এই কথা বলতে বলতে মাটিতে পরে যায়। তাকে ধরাধরি করে বেঞ্চের উপরে শোয়াতে গেলে মুহুর্তের মধ্যে মিতু, সোহাগী, সুমাইয়া, জান্নাতী, জান্নাতুল ফেরদৌস-১, জান্নাতুল ফেরদৌস-২, লাবনী, সুমা,জুরাইদা, ফারজানা ও কবিতা আক্তারসহ অন্তত ১৫জন ছাত্রী মাথা ঘুরে মাটিতে পরে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। এসময় তাদের দাত লেগে যায়। তখন ছাত্রীদের তারাহুরো করে ক্লাস রুমে মাটিতে ও বেঞ্চিতে শুইয়ে তাদের মাধায় পানি ঢেলে সেবা দেয়া হয়। স্থানীয় সখিপুর বাজারের বিভিন্ন ঔষুধের দোকানে নিয়েও অনেককে চিকিৎসা করানো হয়। পরে ভেদরগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক এনে পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা দিয়ে দুপুর ২টার পরে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক (মো. লিটন গাজী) বলেন, এই অঞ্চলের শতকরা ৭০জন শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের। গত এক সপ্তাহ যাবৎ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কয়েকজন সহকারি শিক্ষক মিলে ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যতামূলকভাবে জনপ্রতি মাসে ৩ শত থেকে ৪ শত টাকা করে কোচিং করানোর নিয়ম চালু করেছে। অপর দিকে গরুর হাটের কারনে প্রতি বুধবার মর্নিং স্কুলও করতে হয়। কোচিং ক্লাশ করার জন্য ছেলে-মেয়েরা ভোর ৬ টায় কেউ খেয়ে কেউ না খেয়ে স্কুলে যায়। ৬ টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত না খেয়ে স্কুলে থাকতে হয়। সে কারনেই পর পর দুই দিন মেয়েরা অসুস্থ্য হয়ে গেছে। আমরা অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকদের এই কোচিং বন্ধ করানোর জন্য অনুরোধ করলে তারা সামনের পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে না দেয়ার হুমকি দেয়ায় বাধ্য হয়েই বাচ্চাদের কোচিং করতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অষ্টম শ্রেনীর এক ছাত্রী (সোহাগী) বলেন, আমরা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অনেক সময়ে রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পরি। স্কুলে নতুনভাবে কোচিং চালু করার কারনে খুব সকালে ৩ কিমি পায়ে হেটে স্কুলে যেতে হয়। সকালে বাড়ি থেকে কিছু খেয়ে যেতে পারিনা, আর টাকা না থাকায় বাইরেও টিফিন করতে পারিনা। তাই ক্ষুধা ও মানষিক চাপে স্কুলে অসুস্থ্য হয়ে পরছি।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা হাসাপাতালের চিকিৎক মো. শফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, সকালে না খেয়ে স্কুলে আসার কারনেই ছাত্রীরা অসুস্থ্য হয়ে পরেছে। কয়েকজনকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাদের শরীরে রক্ত শুন্যতাসহ পুষ্টির অভাব রয়েছে। না খেয়ে থাকার কারনে শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতাও অনেকের এই অসুস্থ্যতার কারন।

সখিপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক তাদের অপর দুই বিশ্বস্ত সহকর্মীকে নিয়ে অষ্টম ও দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের ভোর বেলা কোচিং করানো বাধ্যতা মূলক করেছে। সেই কারনে মেয়েরা সকালে অনেকে না খেয়ে স্কুলে আসে এবং কোচিংসহ পরবর্তি ক্লাসে অংশ গ্রহন করেত গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পরেছে।

প্রধান শিক্ষক মো. শাহিন মিয়া বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের পরামর্শক্রমে সামনে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সকালে ২ ঘন্টা অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই কারনে সকালে অনেকে না খেয়ে স্কুলে আসে। স্কুলে আসার আগে অনেকে প্রাইভেট পড়ায়ও অংশ গ্রহন করে। ফলে দীর্ঘক্ষন অভুক্ত থাকায় তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে অসুস্থ্য হয়ে থাকতে পারে। গত দুই দিনে ৭ম ও ৮ম শ্রেনীর অন্তত ৩০-৩৫ জন ছাত্রী এভাবে অসুস্থ্য হয়।

(কেএনআই/অ/মে ১৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test