E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন

২০১৫ মে ১৪ ১৬:৪১:২০
শরীয়তপুরে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : বিয়ের দাবিতে প্রেমিক সুজন বৈদ্য ওরফে শান্তর বাড়িতে অনশন পালন করছেন প্রেমিকা পোষণ বেপারী (১৯)। বুধবার রাত থেকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরমধ্যপাড়া গ্রামের প্রেমিক সুজন বৈদ্যর বাবা সনাতন বৈদ্যর বাড়িতে বিয়ের দাবিতে তিনি এই অনশন পালন করছেন। সুজনের সাথে বিয়ে না হলে বিষ পানে আত্মহুতির হুমকি দিয়েছে পোষণ। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন সুজন বৈদ্যের বাড়ি গিয়ে ও মেয়ের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ডামুড্যা উপজেলার পৈতকাঠি গ্রামের সুশান্ত বেপারীর মেয়ে শরীয়তপুর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী পোষণ বেপারীর সাথে সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের চরমধ্যপাড়া গ্রামের সনাতন বৈদ্যর ছেলে সুজন বৈদ্য শান্তর প্রায় ৩ বছর আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের ঘটনা উভয়ের পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলে ছেলের পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে না নিলে প্রায় ১ বছর আগে পোষণ বেপারী বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিয়ে ঠিক হয়। ছেলের পক্ষ থেকে বিয়ের আর্শীবাদ ও স্বর্ণবস্ত্র প্রদান করা হয়।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিয়ের কয়েকদিন আগে ছেলের বাবা সনাতন বৈদ্য মেয়ের বাবা সুশান্ত বেপারীর কাছে ৩ লাখ টাকা বিবাহের খরচ হিসাবে যৌতুক দাবি করেন। দরিদ্র সুশান্ত বেপারী যৌতুকের ৩ লাখ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় সুজন বৈদ্যর বাবা সুশান্ত বৈদ্য বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে স্বর্ণবস্ত্র ফিরত নিয়ে আসেন। বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও সুজন বৈদ্য ও পোষণ বেপারীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক বজায় থাকে। সুজন পোষণকে বলে আমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে তোমাকে বিয়ে করবো। এ অবস্থায় নড়িয়া উপজেলার কাঞ্চনপাড়া গ্রামের বাবুল মন্ডলের মেয়ে সুবর্ণা মন্ডলের সাথে ১৪ মে বৃহস্পতিবার সুজনের বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। প্রেমিকা পোষণ বেপারী তার প্রেমিক সুজন বৈদ্যর বিয়ের খবর জানতে পেরে বুধবার রাত থেকে প্রেমিক সুজন বৈদ্য শান্তর বাড়িতে এসে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করে।

পোষণ বেপারী বলেন, সুজনের সাথে আমার প্রায় ৩ বছর যাতব প্রেমের সম্পর্ক। আমি তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহন করেছি। এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে ৪ বার আমার বিয়ের প্রস্তাব এলে সুজন সবগুলো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। তার পরেও সুজনের মা বাবা আমাকে গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানালে আমি নিজেকে শেস করে দেয়ার চেষ্টা করি। পরে সুজনের বাবা আমাদের মেনে নিয়ে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করেন। কিন্তু সুজনের বাবা ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। আমার বাবা গবীর হওয়ায় যৌতুক দিতে না পারায় সুজনের বাবা বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এখন আমাকে বিয়ে না করে আমার সাথে প্রতারণা করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করছে। আমাকে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা ছাড়া কোন পথ থাকবে না। তাই আমি বিয়ের দাবিতে তাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছি।
পোষনের মা রীতা রানী বলেন, আমার মেয়ের সাথে সনাতন বৈদ্যর ছেলে সুজন বৈদ্যর সম্পর্ক হলে উভয় পক্ষের সম্মতিতে ছেলের পরিবার বিয়ের আশীর্বাদ ও স্বর্ণবস্ত্র দিয়ে যায়। পরে ছেলের বাবা ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুক দিতে না পারায় ছেলের পরিবার বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এরপরেও ছেলে সুজন বৈদ্য আমার মেয়ের সাথে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ রাখে। তাকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে পোষনের ৪টি বিয়ের প্রস্তাব সুজন ভেঙ্গে দেয়। এখন মোটা অংকের টাকা যৌতুক পেয়ে ছেলেকে অন্যত্র বিয়ে দিচ্ছে। আমার মেয়ের কোন ক্ষতি হলে ওদের আমি ছারবোনা।


সুজন বৈদ্যর বাবা সনাতন বৈদ্য বলেন, বিয়ের খরচের জন্য মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তারা তাদের মেয়েকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে না দিয়ে আমাদের স্বর্ণবস্ত্র ফিরিয়ে দেয়। তাই আমার ছেলেকে অন্যত্র বিয়ে দিচ্ছি।
সুজন বলেন, পোষনকে বিয়ে করার মত কোন সম্পর্ক আমার সাথে ছিল না। আমি ওকে ভালবাসিনা। আর ওকে বিয়েও করবো না।
স্থানীয় আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের চেয়ার ম্যান আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, আমি এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছি। তবে ছেলে মেয়ে উভয়ের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে এদের মধ্যে কোন কারনে বিয়ে হলেও ভবিষ্যতে বনিবনা ও শান্তি আসাবেনা।
(কেএনআই/পিবি/মে ১৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test