E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভেঙ্গে পড়েছে বেইলী ব্রিজ

ছাতক-দোয়ারা সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

২০১৫ মে ২১ ২২:০৩:২৯
ছাতক-দোয়ারা সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কের কাড়ইলগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী চৌধুরী খালের বেইলী ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ায় ৯ দিন ধরে ২ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

১৪ মে রাত ১টার দিকে ছাতক থেকে দোয়ারাগামী একটি পাথর বোঝাই ট্রাক পারাপারের সময় ব্রিজ ভেঙ্গে ট্রাক পানিতে পড়ে যায়। এরপর থেকে ছাতকসহ সারা দেশের সাথে দোয়ারাবাজার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এ ঘটনায় ১৫ মে ট্রাক চালক ও মালিক রফিকুল ইসলাম ফেনুর বিরুদ্ধে ছাতক থানায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেছেন ছাতকের সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রমজান আলী।

১৭ মে থেকে ভেঙ্গে পড়া বেইলী ব্রিজের পাটাতনগুলো স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ১৮ মে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি চৌধুরী খাল থেকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে এ ট্রাকটি পুলিশের জিম্মায় রয়েছে।

বেইলী ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ায় যাত্রীরা চরম ভোগান্তির কবলে পড়েছেন। খালের দু’পাড়ে বসানো হয়েছে অস্থায়ী দু’টি সিএনজি অটোরিকশা ষ্ট্যান্ড। ফলে ছাতক থেকে দোয়ারা যাওয়া-আসার পথে যাত্রীরা এখানে গাড়ি বদল করে যাতায়াত করছে।

খালের উপর দেয়া হয়েছে একটি বাঁশের সাঁকো। এ সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারী-পুরুষ, শিশু, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন যাতায়াত করছে। বাঁশের সাকো স্থাপনের আগে একটি নৌকায় ২ টাকা দিয়ে খাল পারাপার হতো যাত্রীরা।

ঘটনার দু’দিন পর অতিরিক্ত যাত্রী উঠায় নৌকাটি ভেঙ্গে যায়। পরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাঁশের সাকো স্থাপন করা হয়। কিন্তু প্রত্যহ অসংখ্য মানুষের পদচারণায় এখন সাকোটিও ভেঙ্গে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

বুধবার সরেজমিন কাড়ইলগাঁও ভেঙ্গে পড়া বেইলী ব্রিজ এলাকা ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, প্রায় ২৫ বছর আগে তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলে ১০০ ফুট দীর্ঘ বেইলী ব্রিজটি কাড়ইলগাঁও চৌধুরী খালের উপর স্থাপিত হয়।

প্রায় ১০ বছর আগে একটি রোলার পারাপারের সময় ব্রিজের একটি অংশ ভেঙ্গে পড়লে জোড়াতালি দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু করে। ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় গাড়ি চলাচল করলেও কর্তৃপক্ষ ব্রিজটি পুনঃনির্মানের কোন উদ্যোগ নেয়নি। দীর্ঘদিন এ ঝুঁকিপূর্ন ব্রিজ দিয়ে গাড়ি চলাচল করায় অবশেষে রফিকুল ইসলাম ফেনুর মালিকানাধীন ট্রাক ৪০০ ফুট পাথর নিয়ে পারাপারের সময় ট্রাকসহ এটি ভেঙ্গে পড়ে।

জানা গেছে, এ সড়কে লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট ফ্যাক্টরী সংলগ্ন ঠেঙ্গারগাঁও-সাহেবখাল, নৈনগাঁও-নিয়াজের খাল ও লক্ষীবাউর খালের উপর মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ন আরো ৩টি বেইলী ব্রিজ রয়েছে।

এর মধ্যে নিয়াজেরখাল দোয়ারা উপজেলায় ও সাহেবখাল, লক্ষীবাউর ও চৌধুরীখালের অবস্থান ছাতক উপজেলায় অবস্থিত। ঝুঁকিপূর্ন ব্রিজগুলোকে আরসিসির আওতায় এনে পুনঃনির্মানের দাবি এলাকাবাসীর।

ভেঙ্গে পড়া ব্রিজের নির্মাণ কাজের ঠিকাদার আবদুস শহীদ জানান, ব্রিজের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। ব্রিজটি সম্পন্ন করতে আরো ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের আহসানমারা ব্রিজের পাটাতনগুলো দিয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করা হবে। মালামাল ইতোমধ্যে ছাতক শহরে পৌছে গেছে। আগের ১০০ ফুট থেকে এখন ব্রিজের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১২০ ফুট। এটি পুনঃনির্মাণ করতে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে বলে তিনি ধারণা করছেন।

নোয়ারাই সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের ম্যানেজার বাবুল মিয়া তালুকদার ও দোয়ারা স্ট্যান্ডের সভাপতি মাসুক মিয়া জানান, ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে।

ছাতক উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সওজ) মোহাম্মদ রমজান আলী জানিয়েছেন, বেইলী ব্রিজটি নির্মাণ করতে আরো ৮/১০ দিন সময় লাগবে।

দুর্ঘটনা ঘটানো সেই পাথর বোঝাই ট্রাকের অজ্ঞাত চালক ও মালিক রফিকুল ইসলাম ফেনুর বিরুদ্ধে ছাতক থানায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করা হয়েছে। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত মালামালসহ বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে ট্রাক চলাচল করে সরকারী বেইলী ব্রিজ ভাঙার কারণে এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ সড়কে মোট ৮টি বেইলী ব্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি ব্রিজের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। এগুলো গার্ডার দ্বারা তৈরী হবে। ঝুঁকিপূর্ন রয়েছে টেংগারগাঁও এবং অতি ঝুঁকিপূর্ন নৈনগাঁও সংলগ্ন ব্রিজ।

(সিএম/পিএস/মে ২১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test