E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৩১ মে বিশ্ব তামাক দিবস

২০১৫ মে ৩১ ১৪:৪৬:০৭
৩১ মে বিশ্ব তামাক দিবস

মামুনুর রশীদ : তামাক কোম্পানীর নগ্ন থাবায় এবং তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রতি বছর অন্তত ৫৭ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। আর প্রতিদিন গড়ে মারা যাচ্ছে ১৫০ থেকে ৪০০ জন মানুষ। এর সাথে পঙ্গুত্ব বরণ করছে আরো অন্তত ৪ লাখ মানুষ। ক্রমবর্ধমান হারে তামাকজাত পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারী শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি। দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৪৩.৩ শতাংশই তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করেন। তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চটকদার ও অভিনব বিজ্ঞাপনী প্রচারণা চালালেও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় দেশে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসেব মতে দেশে মোট জনগোষ্ঠীর ৪৩.৩ ভাগ মানুষ তামাক ব্যবহার করছে এবং ৪২ ভাগ জনগোষ্ঠি ধুমপান না করেই আক্রান্ত হচ্ছে। মোট জনসংখ্যার ৫৮ ভাগ পুরুষ, ২৯ ভাগ মহিলা এবং ধুমপায়ী ২৩ ভাগ মানুষ তামাক ব্যবহার করছে। আর মোট জনসংখ্যার ২৭ ভাগ মানুষ জর্দ্দা, গুল ব্যবহার করে। এরমধ্যে পুরুষ ২৬ ভাগ এবং মহিলা ২৮ ভাগ। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই তামাক আগ্রাসনের কবলে পড়ছে। ফলে সময়মত তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশে অকাল মৃত্যুর হার বৃদ্ধিসহ কৃষি জমির উর্বরতা কমে যাবে। এতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, দেশে প্রায় ৪কেটি ১৩ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করছে। তামাকজনিত কারনে ৮টি রোগে প্রতি বছর ৫৭ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। পঙ্গুত্ব বরণ করছে অন্তত ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ। প্রায় ১২ লাখ মানুষকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান বিভাগের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, দেশে ১৫ বছর ও তদুর্ধ বয়সের প্রায় ৪৩ ভাগ মানুষ সরাসরি তামাকের সাথে জড়িত। এদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে ৬৩ ভাগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫ ভাগ মানুষ ধুমপান বা তামাক সেবনের সাথে জড়িত। সে হিসাব অনুযায়ী দেশে ধুমপায়ীর সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ এবং অধুমপায়ীর সংখ্যা ৪ কোটি ২০ লাখ। অপরদিকে জর্দ্দা খায় ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। ৪ কোটি ২০ লাখ জনগোষ্ঠী ধুমপান না করেই তামাক জনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে অর্জিত রাজস্বর দ্বিগুনের চেয়ে বেশি টাকা খরচ হয় তামাক আক্রান্ত রোগীদের পেছনে। অর্থাৎ প্রতি বছর তামাক জনিত রোগে আক্রান্ত ১২ লাখ মানুষকে চিকিৎসা গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০০৪ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গ্র“প গবেষণা চালিয়ে ৮টি রোগ নিয়ে কাজ করে। এদের মধ্যে ৫টি রোগে চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
সূত্রে প্রকাশ, সারা দেশের ৩১টি জেলায় ১১৭টি বিড়ি ফ্যাক্টরী ও ৩১২টি জর্দ্দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ লাখ শ্রমিক কাজ করে। এক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, প্রতি বছর ৬৬ হাজার মিলিয়ন ষ্ট্রিক সিগারেট ও ৪৮ হাজার ৬২৪ মিলিয়ন বিড়ি উৎপাদন হয়। এদের মধ্যে ৪৮টি ব্র্যান্ডের বিড়ি উৎপাদন হয়।

কৃষি বিভাগের একটি সুত্রমতে,চলতি মৌসুমে দেশে ১ লাখ ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। আগের বছর ২০২-১৩ মৌসমে ৭০ হাজার হেক্টর, ২০১১-১২ মৌসুমে ৫০ হাজার হেক্টর,২০১০-১১ মৌসুমে ৪৮ হাজার ৮১৭ হেক্টর, ২০০৯-১০ মৌসুমে ৩৮ হাজার ২৭০ হেক্টর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকের অবৈধ্য বানিজ্য তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে। গোটা দেশকে দ্রুত তামাক মহামারির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর তামাকের কারণে সারা বিশ্বে বছরে মারা যায় প্রায় ৬০ লাখ মানুষ, যার ৬ লাখই পরোক্ষ ধূমপায়ী।

তাই অনতিবিলম্বে এই বিপুল সংখ্যক মৃত্যু ঠেকাতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করা গেলে, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এই মৃত্যুর পরিমাণ বছরে ৮০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে এবং এই মৃত্যু টোল-এর ৮০ ভাগই বহন করতে হবে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে।
এছাড়া তামাকের কারনে রাজস্ব ক্ষতি ছাড়াও তামাকের অবৈধ বাণিজ্যের ফলে দেশে কেবল কমদামি সিগারেটের সহজপ্রাপ্যতাই বাড়ছে না একইসাথে তামাকপণ্যে আরোপিত করের প্রভাবও অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ফলে তামাকপণ্য ক্রমশ সস্তা হয়ে পড়ায় জনগণ বিশেষ করে তরুন, নিম্নবিত্ত ও স্বল্প শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাঝে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্লোব্যাল এ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে অনুযায়ী (২০০৯), দেশে মাত্র ৫ বছরের (২০০৪ থেকে ২০০৯) ব্যবধানে তামাক ব্যবহারকারির হার বেড়েছে ৬ শতাংশ (৩৭% থেকে ৪৩%)।

তামাকের পরিমাপযোগ্য নীট সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ, ২০১৪-১৫ অর্থ-বছরের হিসেবে, বছরে কমপক্ষে ১৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, তামাকজাত পণ্যের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ ও সুষ্ঠু কর-ব্যবস্থাপনা তামাকজাত পণ্যের ভোগের পরিমাণ এবং যুবক ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ধূমপায়ী হবার প্রবণতা কমায়। এতে অকালমৃত্যু কমে, স্বল্পমেয়াদে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ে, এবং তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার উদ্ভূত স্বাস্থ্য সমস্যা নিরসনে সরকারি ব্যয় কমে। অথচ, বাংলাদেশ সরকারের তামাক-কর সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা এখনো নেই।

তামাকজাত পণ্যের উপর এখনো উল্লেখ যোগ্য হারে কর আরোপ করা হয় না। ফলে তামাকজাত পণ্য সস্তা এবং ব্যাপক মানুষের কাছে সহজলভ্য। বর্তমানে বিভিন্ন তামাকজাত পণ্যের উপর বিভিন্ন হারে কর আরোপ করা হচ্ছে। তবে এমন কি, ভিন্ন ভিন্ন মূল্যস্তরের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন হারে কর আরোপের কারণে তামাক-কর কাঠামোয় জটিলতাও বেড়েছে যার সুবিধা মূলত নিয়ে যাচ্ছে দেশী বিদেশী তামাক কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে তামাকের অবৈধ বানিজ্যের পথ ধরে দেশব্যাপি বাড়ছে সংঘবদ্ধ চোরাকারবার, মাদকপাচার ও মানবপাচারের মত ভয়াবহ ঘটনার ঝুঁকি। এমতাবস্থায়, দেশে তামাকজনিত রোগে মৃত্যুর হারসহ তামাকের ব্যবহার কমাতে আসন্ন বাজেট ২০১৫-১৬ কে সামনে রেখে তামাকজাত পণ্যের উচ্চহারে কর আরোপের বিকল্প নেই বলে মত প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।

(এমআর/পিবি/মে ৩১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test