E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চ কর আরোপের সুপারিশ

২০১৫ মে ৩১ ১৮:৫৯:০৮
তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চ কর আরোপের সুপারিশ

মামুনুর রশীদ : জাতীয় বাজেটে তামাকজাত পণ্যের উপর সম্পূরক শুল্কের হার ৭০শতাংশ নির্ধারণসহ তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ ও কর নীতিমালা চান সংসদ সদস্যরা। জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে এমন প্রস্তাবনা দিয়ে ডিও লেটার দিয়েছেন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অন্তত ১২ জন সংসদ সদস্য।

তারা হলেন, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, রাজশাহী সদর-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাহ, রাজশাহী-৪(পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৫(পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা, চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ, বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম রেজাউল করিম তানসেন, বগুড়া-৬ এর নুরুল ইসলাম ওমর, নওগাঁ-৩ আসনের সলিম উদ্দিন তরফদার, দিনাজপুর-৬ আসনের সিবলি সাদিক, নিলফামারী-৪ আসনের শওকত চৌধুরী ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের মোহাম্মদ রুহুল আমিন।

ডিও লেটারে রাজস্ব বোর্ডকে তামাক কোম্পানীগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার পরিবর্তে তামাক দ্রব্যের উপর বহুমাত্রিক করপ্রথা বাতিল করে সকল তামাক পণ্যের উপর নির্দিষ্ট পরিমান এক্সাইজ ট্যাক্স ও মূসক আরোপেরও তাগিদ দেন এই ১২ সংসদ সদস্য।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে প্রেরিত ডিও লেটার মারফত এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, তামাক ও তামাকজাত পণ্য স্বাস্থ্য হানিকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য গবেষণার তথ্যানুসারে তামাক ব্যবহারের ফলে তামাকজনিত কারনে বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত ৭৬ হাজার থেকে ১ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। এছাড়া তামাকের পরিমাপযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের জিডিপির কমপক্ষে ৩ শতাংশ। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষই তামাক আগ্রাসনের কবলে পড়ছে। ফলে সময়মত তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশে অকাল মৃত্যুর হার বৃদ্ধিসহ কৃষি জমির উর্বরতা কমে যাবে। এতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার আর্ন্তজাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসিতে স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসাবে সরকার ২০০৫ সালে তামাকের ব্যবহারের ক্ষতি হ্রাসে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার(নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করেন। এই আইনটি অধিকতর প্রয়োগের জন্য ২০১৩ সালের ২ মে জাতীয় সংসদে সংশোধিত আকারে গৃহীত হয় এবং এ সংক্রান্ত বিধিমালাটি চলতি বছরের ১২ মার্চ প্রণীত হয়। মহামান্য আদালত সংবিধানের আলোকে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ, তামাক নিয়ন্ত্রণ ও বিকল্প কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সরকারও আন্তুরিক ভাবে তামাক চাষীদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নিরলস ভাবে কাজ করছেন।

সংসদ সদস্যরা ডিও লেটারে দাবী করেন, তামাকের মূল্য বৃদ্ধি পেলে ভোগের পরিমান হ্রাস পায়। তবে বাংলাদেশে প্রচলিত পদ্ধতিতে তামাক দ্রব্যের কর বৃদ্ধির ফলাফল আশানুরপ নয়। তামাক পণ্যের ক্ষেত্র ভেদে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে করারোপ, সিগারেটের মূল্যন্তর বিন্যাস প্রথা বা বিড়ির উপর স্বল্প মাত্রায় ট্যারিফ ভ্যালুর ফলে ভোক্তা কমছে না। বরং সরকার রাজস্ব ফাঁকিতে পড়ছে। কোম্পানীগুলো নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দাম বৃদ্ধি পেলে গরীবরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে বলে ভ্রান্ত প্রচারণা করে আসছে।

ফলে তামাক কোম্পানীগুলো তামাক শিল্প থেকে লাভবান হচ্ছে; আর চাষী, শ্রমিক ও ব্যবহারকারী সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই দেশে তামাকজনিত রোগে মৃত্যুর হারসহ তামাকের ব্যবহার কমাতে আসন্ন বাজেট ২০১৫-১৬ কে সামনে রেখে তামাকজাত পণ্যের উচ্চহারে কর আরোপসহ সরকারের তামাক কর নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরী। বিশেষ করে বিড়ি, সিগারেট, জর্দ্দা ও গুলসহ সব ধরনের তামাক পণ্যের উপর সম্পূরক শুল্কের হার ৭০ শতাংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তবেই দেশের অর্থনীতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যর সুরক্ষা হবে।

নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ ও কর নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করে চিঠি দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে বেসরকারী সংষ্থা প্রজ্ঞা পরিচালিত (২০১১) গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ২৬ শতাংশ সিগারেট-বিড়ি-চুরুট এবং ১৪ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য অবৈধভাবে বিক্রি হয়। মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ইংল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ৫০টিরও বেশী দেশ থেকে আসা শতাধিক ব্রান্ডের অবৈধ তামাকপণ্যের বাজার এখন বাংলাদেশ। অবৈধ সিগারেট ও চুরুটের অধিকাংশই আসে সমুদ্র ও বিমানপথে।

ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের প্রায় পুরোটাই আসে স্থলপথে, এবং প্রধানত পার্শবর্তী দেশ ভারত থেকে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত তামাকপণ্যেরও একটা অংশ কর ফাঁকি দিয়ে বাজারজাত করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন এ্যলায়েন্স (এফসিএ) ও হেলথ ব্রিজ পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী (২০১০), বাংলাদেশে তামাকের অবৈধ বাণিজ্যের পরিমান বছরে ৯শ ৪৪ মিলিয়ন টাকা এবং এর ফলে প্রতিবছর সরকারকে ২ হাজার ৪৪৫ মিলিয়ন টাকার রাজস্ব হারাতে হয়।

রাজস্ব ক্ষতি ছাড়াও তামাকের অবৈধ বাণিজ্যের ফলে দেশে কেবল কমদামি সিগারেটের সহজ প্রাপ্যতাই বাড়ছে না একইসাথে তামাকপণ্যে আরোপিত করের প্রভাবও অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ফলে তামাকপণ্য ক্রমশ সস্তা হয়ে পড়ায় জনগন বিশেষ করে তরুন, নিম্নবিত্ত ও স্বল্প শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাঝে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্লোব্যাল এ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে অনুযায়ী (২০০৯), দেশে মাত্র ৫ বছরের (২০০৪ থেকে ২০০৯) ব্যবধানে তামাক ব্যবহারকারির হার বেড়েছে ৬ শতাংশ (৩৭% থেকে ৪৩%)।

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারির সংখ্যা ৪ কোটিরও বেশি। অন্যদিকে তামাকের অবৈধ বাণিজ্যের পথ ধরে দেশব্যাপি সংঘবদ্ধ চোরাকারবার, মাদকপাচার ও মানবপাচারের মত ভয়াবহ ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

(এমআর/এএস/মে ৩১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test