E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরণখোলায় বিশুদ্ব পানির সংকট

২০১৫ জুন ০৪ ১৩:৪৬:৫৮
শরণখোলায় বিশুদ্ব পানির সংকট

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে সুপার সাইক্লোন সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলা উপজেলায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটের কারণে পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শরণখোলা হাসপাতালে গত ৩ মাসে দেড়শত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে রোগী। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। অপরদিকে, চলতি শুস্ক মৌসুমে পানি সংকটের কারণে ডায়রিয়াসহ পানি বাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবার আশংকার মেডিকেল অফিসার, উপসহকারী কমিনিউটি মেডিকেল অফিসার ও স্বাস্থ্য সহকারীদের সমন্বয়ে উপজেলায় ৫টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সুপার সাইক্লোন সিডরে লন্ডভন্ড শরণখোলায় শুস্ক মৌসুম এলেই উপজেলার ১৫১.২৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ৪ ইউনিয়নের দেড়লাখ মানুষ বাধ্য হয়ে খাল,বিল,পুকুর,ডোবা ও নদীতে পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন। উপকুলীয় এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পানি সংকট নিরসনের জন্য ২০০৭ সালের প্রলয়ংণকারী ঘূর্নিঝড় সুপার সাইক্লোন সিড়র পরবর্তী সময় এ অঞ্চলে সরকারি,বেসরকারি উদ্দেগ্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ৪ ইউনিয়নে প্রায় সহস্রাধিক রেইনওয়াটার হারবেষ্ট্রিং ও পিএসএফ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সংস্থাগুলোর কাজের নিম্ন মান, সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকাসহ এলকাবাসীদের মধ্যে সচেতনতার অভাবে নির্মাণকৃত পিএসএফ গুলোর ৯৫ ভাগ অকেজ হয়ে পড়েছে। যা এলাকাবাসীর কোন উপকারে আসছেনা।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিস সূত্র জানায়, তাদের স্থাপিত ৪ ইউনিয়নে ২০১৫টি নলকূপের মধ্যে অধিকাংশই নষ্ট। ২/১ টি ভাল থাকলেও শুস্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে তাতে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। কোথাও পানি পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত লবণাক্তার কারনে নতুন করে টিউবয়েল স্থাপন করা যাচ্ছেনা। উপজেলার পূর্বখাদা গ্রামের বাসিন্দা স্কুল ছাত্রী-আসমা আক্তার সুমি বলেন, তার বাড়ির কাছাকাছি ভাল কোন পানির ফিল্টার (পিএসএফ) না থাকায় তিনি প্রতিদিন ১ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে তার ৩/৪ বান্ধবীদের সাথে পরিবারের জন্য পানি সংগ্রহ করতে বিকেলে উপজেলা পরিষদে আসতে হচ্ছে। উপজেলার আওয়ামী লীগের সাবেক ইউনিয়ন সভাপতি ও খোন্তাকাটা গ্রামের আঃ করিম বলেন, তার এলাকায় কয়েকটি পিএসএফ থাকলেও সবগুলো নষ্ট। বাধ্য হয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরত্ব থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয় তার গ্রামবাসীদের। কিন্তু তাও শতভাগ নিরাপদ নয়। তার মতে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর স্থানীয় অফিসটি কাজ কর্মহীন ঠুটোজগন্নাত হিসেবে রয়েছে।
সুন্দরবন সংলগ্ন রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, তার বিদ্যালয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের একটি ট্যাংক ছিল। কিন্তু তার পানি গত ২ মাস পূর্বে শেষ হয়ে যাওয়ায় স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীসহ শিক্ষক কর্মচারীরা তাদের বাড়ি থেকে পানি নিয়ে আসেন। আওয়ামী লীগ নেতা সমাজ সেবক মোঃ ফরিদ খাঁন মিন্টু বলেন, তার এলাকার পাশেই বলেশ্বর নদী। ওই নদীতে অনেক পানি থাকলেও তা বিশুদ্ধ নয়। এ ছাড়া সিড়র পরবর্তী সময় নির্মানাধীন পিএসএফ গুলোর বেহাল দশা যা দিয়ে এলাকা বাসীর কোন উপকার হচ্ছে না। শুস্ক মৌসুম এলেই শরণখোলায় পানি সংকট দেখা দেয়। স্থানীয় ভাবে ব্যাক্তি মালিকানায় ২টি পানি সরবরাহের প্রতিষ্ঠান থাকলেও তার মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এ ব্যাপারে শরণখোলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কর্মকর্তা মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে হলে তার কার্যলয়ের জনবলসহ নানা সংকট দূর হওয়া প্রায়োজন।
শরণখোলা হাসপাতালের (টিএইচও) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ অসীম কুমার সমাদ্দার জানান, বিশুদ্ধ পানি সংকটের কারনে ও প্রচন্ড গরমে ডারিয়ার রোগীর সংখ্যা বাড়লেও ভয়ের কিছু নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেডিকেল অফিসার, উপসহকারী কমিনিউটি মেডিকেল অফিসার ও স্বাস্থ্য সহকারীদের সমন্বয়ে উপজেলায় ৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
(একে/পিবি/জুন ০৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test