E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে প্রচন্ড তাপদাহে মরছে ঘেরের চিংড়ি, দিশেহারা চাষী

২০১৫ জুন ০৯ ১৯:১৭:০৩
বাগেরহাটে প্রচন্ড তাপদাহে মরছে ঘেরের চিংড়ি, দিশেহারা চাষী

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটে প্রচন্ড তাপদাহে বাগদা চিংড়ি ও সাদা মাছের চাষে বিপর্যয় নেমে এসেছে।

বাগেরহাট জেলা সদরসহ সকল উপজেলার চিংড়ি ঘেরগুলোতে মাস খানেক ধরে ব্যাপক হারে মাছ মরে যাচ্ছে। তার ওপর এবার রপ্তানি বাজারে বাগদার দাম গত বারের তুলনায় কিছুটা কম।

প্রচন্ড তাপদাহ, পর্যাপ্ত পানির অভাব, অতিরিক্ত লবণ ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে ঘেরের বাগদা চিংড়ি মারা যাচ্ছে বলে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে।

এদিকে অধিকাংশ ঘেরে মাছ মরে যাবার কারণে এবার এ অঞ্চলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া মাছ মরার কারণে চিংড়ি চাষীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দারুণ হতাশা। এ অবস্থায় বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন চিংড়ি চাষী ও মৎস্য ঘের মালিকরা।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, লবণ পানি অধ্যুষিত বাগেরহাটে প্রায় আড়াই যুগ আগ থেকে ধানের পরিবর্তে বছরের প্রায় ৮ মাসই বাগদা চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। ৭১ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে বাগদা, গলদা ও সাদা মাছের চাষ হয়। এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে ঘেরের সংখ্যা ৭৪ হাজার ৯৯২টি।

বাগেরহাট সদরের উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর শেখ জানান, ফেব্রুয়ারী মাসে ঘেরে পোনা মাছ ছাড়ার পর এপ্রিল মাস থেকে বিরতিহীনভাবে ঘেরে মাছ মরে ভেসে উঠছে। ঘেরের ভেড়ীর পাশে লালচে আকার ধারণ করে মরা মাছ পড়ে থাকছে। আবার যে সামান্য পরিমান জীবিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই দুর্বল। এগুলো নড়াচড়া করতে না পেরে মাটির সাথে মিশে থাকছে।

মংলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী আনিস ও চিলা গ্রামের মাহবুবুর রহমান টুটুল জানান, শতাধিক বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিনি এবার বাগদা চাষে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা লগ্নি করেছেন। এবারের চলতি মৌসুমের মাঝামাঝি এ ঘের থেকে যে পরিমান মাছ পাওয়ার আশা ছিল তাতে তার এ খাতে লগ্নি করা টাকার অধিকাংশই উঠে আসার কথা। কিন্তু মাছ মরে যাওয়ায় তিনি এখন পর্যন্ত এক লক্ষ টাকার বেশী মাছ পাননি।

এদিকে ব্যাপক হারে চিংড়ি মাছ মরার কারণে চিংড়ি চাষীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দারুণ হতাশা। মাছ মরে যাওয়ায় ইতোমধ্যে অনেক চাষীর সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

চাষীরা জানায়, মহাজন, ব্যাংক ও ধারদেনা করে তারা এবার ঘেরে পোনা ছেড়েছেন। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে বেশী হারে মাছ মরে যাচ্ছে। তার উপর যাও পাওয়া যাচ্ছে তার দাম গতবারের তুলনায় অনেক কম। কিভাবে এ দেনা পরিশোধ করবেন তা নিয়ে হা-হুতাশে রয়েছেন। ইতোমধ্যে দেনা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকের অর্থনৈতিকভাবে সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার গোড়াপাড়া, পশ্চিমভাগসহ কয়েকটি গ্রামের কয়েকজন চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, সরকার চিংড়ি মাছ রপ্তানী করে শত শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলেও চিংড়ি উৎপাদনকারীদের সমস্যা সমাধানে কোন পদক্ষেপ নেয় না। উপজেলা মৎস্য অফিসও চিংড়ি চাষীদের সচেতন করার জন্য কোন পদক্ষেপ নেয় না।

কয়েকজন চিংড়ি চাষী জানান, এ পর্যন্ত কোন ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি ঘেরে গিয়ে কি কারণে মাছ মারা যাচ্ছে বা আমাদের কি করা উচিত সে বিষযে তাদের কোন দিক নির্দেশনা আমরা পাইনি। ফলে আমাদের একমাত্র জীবিকা- চিংড়ী চাষ নিয়ে আমরা খুবই সমস্যার মধ্যে আছি।

ব্যাপকহারে মাছ মরে যাওয়ার কারণে উপজেলার চিংড়ি উৎপাদন গতবারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক বলে দাবী করেছেন চিংড়ি চাষী ও ডিপো মালিকরা।

মংলা উপজেলা চিংড়ি বনিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো: মাহে আলম জানান, এবারে মাছ মরে যাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। গতবারের তুলনায় মংলার মাছের আড়তগুলোতে মাছের আনা-গোনা প্রায় অর্ধেক। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, চিংড়ি ঘেরে ভয়াবহ আকারে মাছ মরে গেলেও উপজেলা মৎস্য কর্মকতাসহ সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে রহস্যজনক কারণে চাষীদের কোন খোঁজ খবর নিচ্ছেন না।

বাগেরহাট জেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মন্ডল বলেন, বিভিন্ন কারণে বাগদা চিংড়ি মারা যায়। অতিরিক্ত লবণের কারণে বেশী সাদা মাছ মারা যাচ্ছে। তবে এবারে প্রচন্ড তাপদাহ, পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চিংড়ি মারা পড়ছে। কিছু কিছু ঘেরে এই সমস্যা হচ্ছে। তবে যেভাবে বলা হচ্ছে তেমন না। কারণ এখনও পুরাপুরি মাছ চাষের মৌসুম শুরুই হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন কারণে চিংড়ি মাছের মধ্যে এক ধরনের ‘পীড়ন’ তৈরী হয় আর যার শেষ পরিণতি মৃত্যু। চিংড়ী চাষীদের সচেতনতা তৈরীতে আমরা চিংড়ি চাষীদের ট্রেনিং-র ব্যবস্থা করেছি ও সেমিনারের মাধ্যমে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর কোন এলাকায় মড়ক লাগার খবর পেলে আমরা সাথে সাথেই সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করি-বলে তিনি দাবি করেন।

(একে/পিএস/জুন ০৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test