E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে আহরণ মৌসুমেও দেখা নেই রূপালী ইলিশের

২০১৫ জুন ১২ ১৮:১৭:০৩
সুন্দরবনে আহরণ মৌসুমেও দেখা নেই রূপালী ইলিশের

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনের নদ-নদীতে ইলিশ আহরণ মৌসুমেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছেনা রূপালী ইলিশের। প্রতি বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৬ মাস ইলিশ আহরণ মৌসুম হলেও এখনও সুন্দরবনে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছেনা। ফলে ইলিশ না পেয়ে সুন্দরবন থেকে জেলেরা ফিরছে খালি নৌকা নিয়ে। বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দরের আড়ৎদার, জেলে ও পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

চলতি এই প্রথম বছর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫দিন ফিশিং ট্রলারে করে সব ধরনের মৎস্য সম্পদ আহরন নিষিদ্ধ করে। ফলে চলতি ইলিশ আহরন মৌসুমের ২০ দিনের মধ্যে আহরনের প্রধান এলাকা বঙ্গোপসাগর থেকে ট্রলারের মাধ্যমে রূপালী মাছটি ধরা বন্ধ হয়ে যায়।

এরআগে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বন সম্পদ ও বন্য প্রাণী রক্ষায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সুন্দরবনে সব ধরনের ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ও ছোট নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত দরিদ্র জেলেদের মুখের হাসি কেড়ে নেয়। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইলিশের আশায় নৌকা নিয়ে দল বেধেঁ জেলেরা ছোটে সুন্দরবনের ১ হাজার ৮শ’৭৪ বর্গ কিলোমিটার জল ভাগের প্রধান প্রধান নদ-নদী বলেশ্বর, কুংগা, মালঞ্চ, রায়মঙ্গল, শিবসা, পশুর, বেতমোর, মরাপশুর, হংরাজ, আড়পাঙ্গাসিয়া, যমুনা, শ্যালা, চুনকুড়ি, খোলপেটুয়া, কটকা, আড়–য়াশিবসা, শাকবাড়িয়া, ঝাপা, বল, হড্ডা ও কাগাতে। সুন্দরবনের এসব নদ-নদী থেকে প্রতি বছর আহরিত হয় প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন রূপালী ইলিশ।

জেলেরা ইলিশের আশায় সুন্দরবনের নদ-নদীতে জাল ফেলে নৌকায় অপেক্ষার প্রহর গুনলেও ইলিশ ধরা পড়ছেনা। জালে দু’একটি ইলিশ ধরা পড়লেও তা বেচে জেলেদের খরচ উঠছেনা। এই অবস্থায় সুন্দরবন উপকূলের জেলে পল্লীগুলোতে জেলেদের মুখে হাসি নেই। এবার তাদের ঘরে ঘরে নেই ইলিশ খিচুড়ি খাওয়ার ধুম। অথচ ইলিশের এই ভরা মৌসুমে এসব জেলের প্রধান খাদ্যই ছিল ইলিশ খিচুড়ি। ইলিশের এই ভরা মৌসুমেও দিনরাত জাল ফেলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। যাও ধরা পড়ছে তা খাওয়া থাক দূরের থাক বিক্রি করে তাদের সংসারই চলছেনা। জেলেরা বলছে সুন্দরবনে নদ-নদীগুলোয় একের পর এক অয়েল ট্যাংকার, সার ও সিমেন্টের কাচামাল বোঝাই লাইটারেজ জাহাজ ডুবিতে মারাত্বক পরিবেশ বিপর্যয় গটেছে। সেকারনে সুন্দরবনে নদ-নদীতে এখন আগের মতো ইলিশ মাছ মিলছেনা।

ইলিশের এই ভরা মৌসুমেও বাগেরহাটের ইলিশের প্রধান মৎস্য বন্দর শহরের বাঁধ সড়কের কেবি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ নেই। অথচ গত বছরও ইলিশের পাহাড় জমতো এখানে। এই মৎস্য প্রধান বন্দরের বাইরেও মাইক বাজিঁয়ে ফেরি করে বিক্রি হয়েছে বিশালাকার সব ইলিশ। কোনো কোনো মাছ বিক্রেতা আবার বাড়ি-বাড়ি গিয়েও ফেরি করেছে সেসব ইলিশ মাছ। মৎস্য আড়ৎগুলোর সামনে সাড়িবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতো সারি-সারি ট্রাক। ট্রাক বোঝাই সেসব ইলিশ পাঠানো হতো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলেরাও মাছ বিক্রি করে বেশ অর্থ উপার্জন করে ভালোই ছিল। কিন্তু এবার আর সে অবস্থা নেই।

বাগেরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়ৎদার ইদ্রিস আলী জানান, এ ভরা মৌসুমে মাছ আসছে চাহিদার শত ভাগের তুলনায় এক ভাগ মাত্র। এ বছর প্রতিদিন এ মোকামে মাছ আসছে সর্বোচ্চ ১/২ মণ। মাছের সাইজও তেমন ভালো নয়। অথচ গত বছরো এখানে এ মৌসুমে প্রতিদিন ২০০/৩০০ মণ ইলিশ এসেছে। তিনি জানান, প্রতিদিন এ মৎস্য বন্দরে ৫’শ মণের মতো মাছের চাহিদা থাকলেও তা আমরা পাচ্ছি না।

অপর মৎস্য আড়ৎদার অরূপ কুমার দাস জানান, এবারে বাজারে মাছের দাম গত বছরের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি। বর্তমানে এখানে সবচেয়ে বড় সাইজের (কেজির ওপর) ইলিশ প্রতি মণ ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর ছিল ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এক কেজির নিচে ৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা দরে। যা গত বছর ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর ছোট সাইজের প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১৬ হাজার টাকা দরে। যা গত বছর ছিল মাত্র ৬/৭ হাজার টাকা।

প্রতি বছর ইলিশ আহরন মৌসুমে বাগেরহাটের এই মৎস্য বন্দর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ খুলনা, যশোর,পাবনা,সিরাজগঞ্জ,টাঙ্গইল, মাগুরা ফরিদপুর, রাজশাহী,রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মানসিং, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদাহ, ভেড়ামাড়া, পাংশা, ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। চলতি বছর জেলেদের জালে মাছ ধরা না পড়ায় কেবি মৎস্য বন্দরে ইলিশ মাছের শূন্যতা দেখা দিয়েছে। গত বছর কয়েক বছর আগেও এখান থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পর্যাপ্ত ইলিশ রফতানি করা হয়েছে।

জেলেরা অর্থ সংকটে পড়ছে। এখানে যেসব শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো, মাছ না থাকায় তারা আজ অসহায় হয়ে পড়েছে। যে পরিমাণ মাছ আসছে সে তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই সারাদিন কাজ না করেও বসে থাকতে হয়। বর্তমান বাজারে একদিনে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না। ইলিশের এই ভরা মৌসুমেও এখন অনেকের ঘরের চুলো জ্বলছে না।

(একে/এএস/জুন ১২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test