E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনের নদীতে চলছে চিংড়ি পোনা আহরণের মহোৎসব

২০১৫ জুন ১২ ১৯:২৫:২৬
সুন্দরবনের নদীতে চলছে চিংড়ি পোনা আহরণের মহোৎসব

বাগেরহাট প্রতিনিধি: সুন্দরবন উপকুলের বাগেরহাটের শরণখোলা  চাদপাই রেঞ্জের  ভোলা, বলেশ্বর , মংলার পশুর ও চিলানদীসহ  সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদীতে চলছে চিংড়ি পোনা আহরনের মহোৎসব। উপকুলীয় এলাকার প্রভাবশালীরা সুন্দরবন ও নদী সংলগ্ন দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের মাঝে লাখ লাখ  টাকা (অগ্রিম প্রদান) দাদন  সুন্দরবন সংলগ্ন উপকুলের সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে এক প্রকার মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের প্রতিযোগীতায় নেমেছে।

অভিযোগ উঠেছে,সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য বিভাগ ও বন বিভাগসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রায় শতাধিক মৎস্য আড়তের মহাজনরা বা দাদন ব্রবসায়ীরা চালাচ্ছে অবৈধ চিংড়ি রেনু পোনার রমরমা ব্যবসা। মংলা উপজেলার ৬টি ও শরণখোলা উপজেলার চার ইউনিয়নে বসবাসরত প্রায় ৪ লাখ মানুষের মধ্যে বড়একটি অংশ দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে ।

আর এ অবস্থায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাদের দারিদ্রতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর রেনুপোনা আহরণ মৌসুমের শুরুতে কয়েক কোটি টাকা (অগ্রিম প্রদান) দাদন দেয়। পোনা আহরন, পরিবহন ও বাজারজাত করণ আইনের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ হলেও তা মানছে না এপ্রভাবশালীরা ।

প্রশাসনিক নজরদারীর অভাবে উপকুলীয় এলাকা গুলোতে চিংড়ি পোনা আহরণ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা শত শত প্রজাতির রেনু পোনা অংকুরে বিনষ্ট করছে। একারনে ইতি মধ্যে বাংলা দেশের অন্যতম মৎস্য ভান্ডার খ্যাত সুন্দরবনের নদী নালা থেকে প্রায় শতাধিক প্রজাতির মাছ হারিয়েগেছে । একারনে মাছের বংশ বিস্তার বাড়াতে এবং সাদা সোনা হিসাবে খ্যাত বিভিন্ন প্রজাতির পোনা ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষা করতে বর্তমান সরকার জেলেদের মাঝে জেলে কার্ডসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আসলেও তার সঠিক সুফল মিলছে না এ অঞ্চলে।

একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব মতে একটি রেনু অথবা বাগদা চিংড়ির পোনা নদী থেকে আহরণ কালে বিভিন্ন প্রজাতির ২৫০/২৮০ টি পোনা বিনষ্ট করছে আহরণকারীরা। তাদের মতে দেশের এই জাতীয় সম্পদ ধ্বংশের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে দ্রƒত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে না পারলে ভবিষ্যতে মৎস্য ভান্ডার খ্যাত সুন্দরবনের নদী নালাতে মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পরার আশংকা রয়েছে। এবিষয়ে এনজিও ফোরামের নেতা মীর সরোয়ার হোসেন বলেন, প্রশাসন, জন প্রতিনিধি রাজনৈতিক দলের নেতা সহ সমাজ সচেতন ব্যাক্তিদের নিয়ে অনৈতিক কাজে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে মৎস্য সম্পদকে রক্ষা করা সম্ভব।

শরণখোলা উপজেলার জেলে সমিতির সভাপতি মোঃ দুলাল ফরাজী বলেন, প্রসাশন তৎপর হওয়ার পাশাপাশি উপকুলীয় এলাকার জেলে সম্প্রদায়ের মাঝে সভা করে তাদের সচেতন করা হলে অন্যান্য প্রজাতির পোনা বিনষ্ট কিছুটা কমতে পারে। পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ কামাল আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, সুন্দরবনের নদ-নদীতে কেউ পোনা ধরেনা। তবে বলেশ্বর নদীতে কিছু গরীব মানুষ পোনা ধরে পেট চালাচ্ছে বলে শুনেছি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খন্দকার মোঃ শহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কারও মাছ আহরনে ব্যাঘাত ঘটলে তারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। কিন্তু এসব অভিযোগের কোন বাস্তবতা নেই। এছাড়া পোনা নিধন ঠেকাতে কারও কোন সহায়তা পাওয়া যায় না। স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সাহায্য চাইলে তারা কৌশলে এড়িয়ে যান। কারণ সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন তাই কেউ ভোটের ব্যাঘাত ঘটাতে চান না। গত ছয় মাসে উপজেলা মৎস্য বিভাগ প্রায় কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকার নিষিদ্ধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে দিয়েছে। তার পরেও পোনা আহরনকারীরা থেমে নেই। তারা পোনা নিধন করে চলছেই। এদেরকে ঠেকাতে হলে সম্মিলিত উদ্দেগ্যের প্রয়োজন। এছাড়া কর্তৃপক্ষ অভিযানের জন্য এক বছরে যে বরাদ্দ দেয় অভিযান করতে গেলে একদিনেই তা শেষ হয়ে যায়। সুতারাং মৎস্য সম্পদ শতভাগ রক্ষার উপায় খুজে পাচ্ছেননা তিনি।

(একে/এসসি/জুন১২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test