E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কলারোয়ার আল আমিনের স্বপ্ন কি পূরণ হবে!

২০১৪ মে ১৮ ১৪:২৩:৫৩
কলারোয়ার আল আমিনের স্বপ্ন কি পূরণ হবে!

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দিনমজুরের ছেলে আল আমিন এসএসসিতে (বিজ্ঞানে) জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে কলারোয়া জিকেএমকে পাইলট মাডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। লেখাপড়ার নিশ্চয়তা পেলে ভবিষ্যতে সে একজন নামকরা ডাক্তার হতে চায়।

আল আমিনের বাবা মো. আবুল কাশেম জানান, তার দুই ছেলে। বড় ছেলে আল মামুন এবার যশোর এম এম কলেজ থেকে অনার্স (ইতিহাস বিভাগ) ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে। লেখাপড়ার খরচ যোগাতে না পারায় বড়ছেলেটা বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের চেষ্টায় অনার্স শেষ করেছে। সে এখন ফলাফলের অপেক্ষায়। দিন মজুর আবুল কাশেমের কাছে ছোট ছেলের এ সাফল্যে তার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘গরীবের আর চাঁদ দেখা, নুন আনতে যাদের পানতা ফুরায় তাদের আবার আনন্দ! কিসের। আবুল কাশেম এক বুক দীর্ঘ নি:স্বাস টেনে বলেন, কলারোয়া পৌর সদরের মির্জাপুুর গ্রামে মাত্র পাঁচ শতক জমির উপর তার বসবাস। নিজের বলতে ছেড়া কাটা পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া আর উল্লেখ করার মতো তেমন কিছু নেই। এর আগে কিছুটা কৃষি জমি থাকলেও রোগের চিকিৎসা, ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার চালাতে তা অনেক আগেই বিক্রি করতে হয়। এখন দিন চলে তার অন্যের কৃষিজমিতে শ্রমিকের কাজ করে। সারা দিনে দেড়শ’ টাকা তাও আবার প্রতিদিন হয়না। এ অবস্থায় ছেলের লেখা পড়ার খরচ চালতে তাদের খেয়ে না খেয়ে পার করতে হয় প্রায় প্রতিটি দিন। আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, গত ঈদের সময় বিত্তবান নিকট থেকে পাওয়া ফিতরার টাকা জমিয়ে ছেলেটা পরীক্ষার ফরম ফিলআপ করেছিলো। বাবাটা আমার ভালো পাশ দিয়েছে। এসময় দিনমজুর পিতার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো। গড়িয়ে পড়া ওই অশ্রু আনন্দের নাকি ছেলের ভবিষ্যত ভাবনার তা ঠিক বোঝা গেল না।
আল আমিনের মা নাছিমা পারভীন লাভলী মেধাবী ছেলের সাফল্যে অনেক খুশি। তিনি তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, আমি যা চেয়েছি আল্লাহ তাই দিয়েছেন। আল আমিন তার বাবার সাথে মাঝে মধ্যে কৃষিকাজে সময় ব্যায় করলেও পড়ার সময় ঠিকই মাঠ থেকে তাকে তিনি ধরে এনে পড়ার টেবিলে বসিয়ে দিতেন। আল আমিন পঞ্চম শ্রেণীতে মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ট্যানেলপুলে বৃত্তি পেয়েছিলো। পরে অষ্টম শ্রেণীতে কলারোয়া জিকেএমকে পাইলট হাইস্কুল থেকে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিলো। খাওয়া পড়াসহ লেখাপড়ার খরচটা যদি ঠিক মতো ছেলের পিছনে ব্যয় করতে পারতেন তবে সে আরও ভালো ফলাফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিত। আল আমিনকে বুকে জড়িয়ে ধরে মা লাভলী বলেন, এ আমার সোনার টুকরা।
আল আমিন বলেন, সে নিয়ম করে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা লেখাপড়া করে এ সাফল্য পেয়েছে। টাকার অভাবে সে কোন দিন প্রাইভেট পড়তে পারেনি। কিনতে পারেনি ভালো নোট বা গাইড। মূবই বুঝে বুঝে পড়তে হয়েছে তাকে। পরীক্ষার আগে সে আনিছ স্যার, আমিরুল স্যার, দিলিপ স্যার ও শুশংকার স্যারের অনেক সহায্য পেয়েছে। আল আমিন তার প্রিয় স্যার ও বন্ধুদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, লেখাপড়ার নিশ্চয়তা পেলে সে ভবিষ্যতে একজন ভালো ডাক্তার হতে চায়।

(আরকে/এএস/মে ১৮, ২০১৪)




পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test