E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোপালগঞ্জে বৃদ্ধি পেয়েছে মোবাইলে ব্লাকমেইল

২০১৫ জুন ১৫ ১৫:১৭:০৭
গোপালগঞ্জে বৃদ্ধি পেয়েছে মোবাইলে ব্লাকমেইল

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জে আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্লাকমেইলের ঘটনা। আর এই ব্লাকমেইলের শিকার হচ্ছেন শিক্ষক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অসংখ্য মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থানের নাম বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষদের মরদেহ বাড়ি পাঠানো, এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে রোগী পাঠানোর কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিং ‘বিকাশ’এর মাধ্যমে এইসব প্রতারণা করে থাকে।

প্রতারকচক্রটি কখনও শিক্ষামন্ত্রীর একন্ত সচিব, কখনও জজ বা ডাক্তার সেজে মোবাইল ফোনে সড়ক দুর্ঘটনা, বাড়িতে লাশ পাঠানো, লটারিতে টাকা পাওয়া, হারানো ব্যক্তিকে বাড়ি পাঠানো, রোগীর চিকিৎসারপর ক্লিনিকের বিল মিটানোসহ নানান ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খরচ বাবদ ‘বিকাশ’ একাউন্টের মাধ্যমে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করে থাকে। যাদের নামে এসব গল্প তৈরি করে তাদের আগে ভাগে নেটওয়ার্ক বা মোবাইল সার্ভিসিং এর কথা বলে এক ঘন্টা ফোন বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকে। আর সেই সুযোগে তাদের আত্মীয় স্বজনদের কাছে বিপদের খবরটি পৌছে দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়। এই ট্রাপের শিকার হয়ে জেলার অসংখ্য মানুষ মৌখিক অভিযোগ করেছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে।
ব্লাকমেইলের শিকার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাকে একটি বাংলালিংক মোবাইল নাম্বার থেকে শিক্ষা মন্ত্রীর এপিএস পরিচয়ে ফোন দিয়ে বলে, আপনার এলাকা টুঙ্গিপাড়ার সিকদার বাড়ির একটি লোক আমাদের মন্ত্রণালয়ের সামনে গাড়ী চাপায় মারা গেছে। আমরা লাশটি অফিসের পাশে রেখেছি। আপনার এলাকার লাশ বিধায় ফোন করেছি। লাশ পাঠাতে ১০ হাজার টাকা এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া লাগবে। আপনি ১০হাজার টাকা ‘বিকাশ’একাউন্টের মাধ্যমে পাঠান। তখন আমি বলি লাশ পাঠিয়ে দেন আমি লাশ আসলে গাড়ীওয়ালাকে টাকা দিয়ে দিব। তখন আমাকে বলে গাড়ীর ফেরী ভাড়া ও টোল বাবদ দুই হাজার টাকা লাগবে সেটা পাঠিয়ে দিন। আমি সরল বিশ্বাসে ২ হাজার টাকা পাঠাই। এর পর ফোন করে লাশের খবর নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু, মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। যে এলাকায় দুর্ঘটনার কথা বলেছিল সেখানে খবর নিয়ে জানা যায় ওইদিন ওখানে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। ২০/২৫ দিন পর মাওয়া ঘাটে টুঙ্গিপাড়ার লোক মারা গেছে এমন খবর দিয়ে আমাকে ও পৌর মেয়র সরদার ইলিয়াস হোসেনের কাছে ফোন করে একই কায়দায় ১০ হাজার করে বিশ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। এর ২ মাস পর কিশোরগঞ্জের জজ পরিচয়ে আমাদের এলাকার একটি কাজের মেয়ে কাজ করতে গিয়ে মারা গেছে সেই লাশ পাঠানোর জন্য ১০হাজার টাকা চায় । বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি তাকে গালিগালাজ করি তারপর এখন পর্যন্ত আর কেউ ফোন করেনি। এই ঘটনা শুধু চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে নয়। একই ভাবে ব্লাকমেইলের শিকার হয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বদরুল আলম বদর, জেলা শহরের আইডিয়াল একাডেমির শিক্ষক অনুপম ভক্ত, প্রহলাদ বিশ্বাস, কাশিয়ানী উপজেলার ধীরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সীমা সরকার, মুকসুদপুর উপজেলার ধর্ম রায়ের বাড়ী গ্রামের ব্যবসায়ী সঞ্জয় বিশ্বাস, সমীর রায়সহ অনেক মানুষ। চক্রটি এসব ব্যক্তি বাদেও অসংখ্য মানুষদের মিথ্যা কথা বলে বা ভুল বুঝিয়ে হাজার হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদেরকে বলেন, দেশের মধ্যে সহজ উপায়ে টাকা আদান প্রদান সকলেরই কাম্য। শুধু কোড নাম্বার বা মোবাইল নাম্বারের মাধ্যমে লেনদেন হওয়ায় এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের ভুল বুঝিয়ে বা মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করছে। মোবাইল ব্যাংকিং বা ‘বিকাশে’ টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে টাকা উত্তোলন কারী ব্যক্তিকে (জাতীয় পরিচয়পত্রসহ) সনাক্ত করা যায় এমন প্রমাণপত্র রেখে টাকা দেয়া বাধ্যতামূলক করলে এই ধরনের অপরাধ কমে আসবে। এখন সকল মোবাইল ফোনে ছবি তোলা যায়। পাঁচ হাজারের বেশী টাকা উত্তোলন কারীর ছবি তুলে রাখা বাধ্যতামূলক করা হলেও উপকার পাওয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি।
(এমএইচএম/পিবি/জুন ১৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test