E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধসে পড়েছে কলাপাড়ার পুরাতন হাসপাতালের ছাদ

২০১৫ জুন ১৭ ১৮:০৯:৪৫
ধসে পড়েছে কলাপাড়ার পুরাতন হাসপাতালের ছাদ

মিলন কর্মকার রাজু,কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে : প্রায় ৬৪ বছরের পুরনো কলাপাড়ার ঐতিহ্যবাহী পুরাতন হাসপাতালের ছাদ ধসে পড়েছে। বুধবার সকাল ১১ টায় ভবনের দোতালার সিড়ি রুমের ছাদ আকস্মিক ধসে পড়লেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার সময় ভবনের দোতালা ও নিচতলায় অন্তত দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলো। ছাদ ধ্বসে পড়ে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ন হলেও পরিত্যক্ত ঘোষণা না করায় বিধ্বস্ত ভবনেই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস ও সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম ঝুঁকি নিয়ে অফিস করছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভবনে কর্মরত কর্মচারীরা জানান, তারা যখন অফিসের কাজ করছেন তখন বিকট শব্দে ছাদ ধসে পড়ে। এ সময় গোটা ভবনটি বালিতে ঢেকে যায়। ভবনের ঠিক সিড়ির উপর ছাদ ধসে পড়ায় দোতালায় আটকা পড়ে শতাধিক মানুষ চরম আতংকিত হয়ে পড়ে। প্রায় দশ মিনিট আটকা পড়ার পর ছাদের ভাঙ্গা অংশ পড়ে গেলে আটকা পড়া মানুষ সিড়ির উপর ভেঙ্গে পড়া ছাদের অংশ সরিয়ে নিচে নেমে আসে। ঘটনার পরই উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপ-সহকারী অংনয় জানান, তাদের অফিসে ৮৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মাঠকর্মী কর্মরত। প্রতি সপ্তাহে তাঁদের নিয়ে মিটিং হয়। কিন্তু ভাগ্য ভালো আজ মিটিং ছিলো না। এখন যে অবস্থা যেকোন সময় গোটা ভবনটিই ভেঙ্গে পড়তে পারে। তাই জরুরী ভিত্তিতে তাদের অফিস অন্যত্র স্থানান্তর করা না হলে রানা প্লাজার মতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জানাযায়, ১৯৫১-৫২ অর্থবছরে হাসপাতালের জন্য দ্বিতল এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে রাডার সংলগ্ন এলাকায় নতুন ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জন্য নতুন ভবন নির্মান হওয়ায় হাসপাতালের কার্যক্রম নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে পুরাতন এই হাসপাতাল ভবনের দশটি রুমে পাঁচটিতে পরিবার পরিকল্পনা অফিস রুম ও পাঁচটিতে সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের টিসি মোহরার সত্যগোপাল চক্রবর্ত্তী জানান, যে সিড়ির উপর ছাদ ভেঙ্গে পড়েছে ওই ছাদ দিয়ে তারা ওঠানামা করেন। ঘটনার সময় ভবনের দোতালায় ৩০ জন নকলনবিশ সহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলো। পরিবার পরিকল্পনা অফিসের অফিস সহায়ক সরোয়ার হোসেন জাকির জানান, প্রায়ই প্রতিদিনই ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে একাধিক মাঠকর্মী আহত হয়েছে। গত দু’দিন ধরে প্রবল বৃষ্টি হওয়ার কারনে ছাদের টেম্পার নষ্ট হয়ে আজ ভেঙ্গে পড়েছে।

পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্র জানায়, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক ২০০৮ সালের ৭ ডিসেম্বর কলাপাড়া ৫০ শয্যা হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে পরিবার পরিকল্পনা অফিস পরিচালনার জন্য রুম বরাদ্ধ দেয়ার নির্দেশ দেন। এই আদেশের কপিসহ রুম বরাদ্দের জন্য ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর ও এ বছরের ১৯ জানুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। কিন্তু রুম বরাদ্ধ দেয়া হয়নি।

এদিকে হাসপাতাল ভবনের পূর্বদিকে ও পিছনের ওয়াল ঘেষে সরকার দলীয় লোকজন টিনসেট ঘর তুলে দখল করে নিয়েছে। দখলদাররা দোকান ও গুদাম তুলে ভাড়া দেয়ায় এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ভাড়াটিয়ারা। বর্তমানে ভবনের যে অবস্থা তাতে যেকোন মুহুর্তে গোটা ভবনটি ধসে পড়তে পারে। এ কারণে এই ভবনের দুটি অফিসসহ ভবনের চারদিকের স্থাপনা সরিয়ে না নিলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশংকা করছেন এলাকাবাসী।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার মো. শাহআলম হাওলাদার জানান, প্রায় সাত বছর আগে পুরাতন হাসপাতাল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও তারা অফিস রুম বরাদ্দ না পাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে অফিস করছেন।

কলাপাড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.লোকমান হাকিম জানান, হাসপাতালে ডাক্তারদের বসারই রুম নেই। তাই পরিবার পরিকল্পনা অফিসের জন্য তারা রুম কোথায় পাবেন। আর এ বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখেন।

কলাপাড়া পৌর মেয়র এসএম রাকিবুল আহসান বলেন, তিনি দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গেছেন। ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ন। জরুরী ভিত্তিতে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনাসহ ভবনের চারপাশে দখল করা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়া উচিত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ স্থাপনা উচ্ছেদে সহায়তা চাইলে পৌর কর্তৃপক্ষ আইনী সহঅযতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

(এমকেআর/এএস/জুন ১৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test