E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ববিতা’র ওপর নির্যাতন মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল

২০১৫ জুন ২৬ ১২:৫০:২২
ববিতা’র ওপর নির্যাতন মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল

লোহাগড়া (নড়াইল)প্রতিনিধি :  নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালবরাত গ্রামে গাছে বেঁধে গৃহবধূ ববিতার ওপর নির্যাতন ঘটনার দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট (ফাইনাল রিপোর্ট) আদালতে দাখিল করা হয়েছে। মামলায় ৭জনকে আসামী করা  হলেও আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটে আরও ১জনকে অভিযুক্ত করে ৮জনের নামে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত এ মামলায় নির্যাতিত ববিতার স্বামী সেনা সদস্য শফিকুল শেখ ও স্থানীয় আ’লীগ নেতা আজিজুর রহমান আরজুকে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হতে পারে-জনমনে এমন শংকা-সন্দেহ সংশয় থাকলেও শেষ পর্যন্ত এ দু’জনসহ ৮ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। মামলার অভিযুক্ত আসামীরা হলো, ববিতার স্বামী সেনা সদস্য শফিকুল শেখ, শ্বশুর ছালাম শেখ, শ্বাশুড়ি জিরিন বেগম, চাচা শ্বশুর হিরু মিয়া ও আবুল কামাল শেখ, ভাসুর হাসান শেখ, প্রতিবেশি নান্নু মোল্যা ও স্থানীয় আ’লীগ নেতা আজিজুর রহমান আরজু।

এদিকে, বহুল আলোচিত এ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল হওয়ায় ববিতাসহ তার পরিবারের সদস্যরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় নির্যাতিত ববিতা গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, ‘নিরাপত্তাসহ ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় রয়েছি’।

চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, গত ২০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট মোঃ মাজহারুল ইসলামের আদালতে ৮জনকে অভিযুক্ত করে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। দীর্ঘ ১ মাস ১৭দিন ধরে মামলার তদন্তকালে এজাহার ভুক্ত ও তদন্ত প্রাপ্ত আসামীদের বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া সকল আসামীদের বিরুদ্ধে লোহাগড়া থানার অভিযোগপত্র নং-১০৫, তাং ২০/০৬/১৫ইং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) ১০/৩০ ধারা মূলে বিচারের জন্য সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেটের আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও জানান, চার্জশিট দাখিলের আগে লোহাগড়া থানা পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে এজাহার ভূক্ত ৬জন আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন এবং সেনা সদস্য শফিকুল শেখ, আবুল কালাম শেখ, নান্নু মোল্যা, হাসান শেখকে ৩দিনের রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আসামীরা রিমান্ডে থাকা কালীন সময়ে ববিতার ওপর নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করেন। মামলার প্রধান আসামী আজিজুর রহমান আরজু বর্তমানে জামিনে থাকলেও অন্য আসামীরা জেল-হাজতে রয়েছে।

এখানে বিশেষ ভাবে উলে¬খ্য যে, লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউপি’র ছালাম শেখের ছেলে সেনা সদস্য শফিকুল শেখের সাথে পাশের এড়েন্দা গ্রামের ইসমাইল মোল্যার মেয়ে ববিতার প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে স্বামী শফিকুলসহ তার পরিবার যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেলসহ টাকা দাবী করায় ববিতা নড়াইলে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৮২/১৪ইং। মামলা করার কারনে ববিতার ওপর শফিকুলসহ তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। গত ২৯ এপ্রিল শফিকুল ছুটিতে বাড়ি এসে ববিতাকে তার বাড়ি আসার জন্য খবর দেন এবং ওই দিন সন্ধ্যায় ববিতা শ্বশুরবাড়ি শালবরাত গ্রামে যান। কিন্তু বিধি বাম! পরের দিন ৩০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ববিতা কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্বামী শফিকুল, শ্বশুর ছালাম শেখ, শ্বাশুড়ী জিরিন বেগম, চাচা শ্বশুর আবুল কালাম শেখ ও হিরু মিয়া, ভাসুর হাসান শেখ, প্রতিবেশি নান্নু শেখ ও পাশের পদ্মবিলা গ্রামের মৃত আব্দুল খালেক শেখের ছেলে ও স্থানীয় আ’লীগ নেতা আজিজুর রহমান ওরফে আরজু পরস্পর যোগ সাজগে ববিতাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মেহগুনি গাছের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে এবং অবস্থার অবনতি হলে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ৫ মে ববিতার মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে ৭ জনকে আসামী করে লোহাগড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ববিতার ওপর নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং এ সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় নড়াইল-লোহাগড়াসহ দেশব্যাপী তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।


(আরএম/এসসি/জুন২৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test