E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার পুকুর-চিংড়ি খামার

২০১৫ জুলাই ০৯ ১৫:৫৮:২২
বাগেরহাটে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার পুকুর-চিংড়ি খামার

বাগেরহাট প্রতিনিধি : তিন দিনের ভারী বর্ষণে জেলা সদর বাগেরহাট ও বন্দর শহর মংলা পোর্ট পৌর এলাকার অধিকাংশ সড়ক, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও  আবাসিক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও সরকারী খালগুলো দখলের ফলে উপকূলের এই দু’টি শহরের লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হযে পড়েছে। মংলা র্পোট পৌর শহরের মধ্যে তিনটি খালে স্লুইস গেট নির্মাণ ও ড্রেনের মুখ বন্ধ থাকায় বৃষ্টির পানি জমে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।

এ অবস্থায় বাগেরহাট ও মংলা শহরের লক্ষাধিক পানি বন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। শহর দু’টির নিম্মাঞ্চলসহ অনেক আবাসিক এলাকার বাসা বাড়ীর মধ্যে হাটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে থৈ থৈ করছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বর্ষা মৌসুমের আগে পানি নিস্কাশনে কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়ায় এখন স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শহরের কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারী অফিসের নিচতলা পানি ঢুকে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া জেলার ৯টি উপজেলার কয়েক হাজার পুকুর ও চিংড়ি খামার থেকে শুরু করে তলিয়ে গেছে বসতঘরও। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, সরকারি খালগুলো ভরাট ও দখল হওয়াতে বৃষ্টির পানি সরতে পরছে না বলে জানানিয়েছেন এলাকাবাসি। জোয়ারে পানি বাড়ায় পানগুছি নদী তীরবর্তী মোরেলগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলা সদর দিনে দু’ বার প্লাবিত হচ্ছে। অবিরাম বর্ষণে জেলার উপজেলাগুলোর নি¤œাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত শরনখোলা উপজেলার সাউথখালী বেড়িবাধঁ এখন হুমকির মুখে। কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয়ে তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে বাগেরহাট ও পোর্ট পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জমে থাকা পানি নামতে না পেরে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। বাগেরহাট শহরের প্রধান-প্রধান সড়ক মিঠাপুকুর পাড়, শালতলা, সাধনার মোড়, কাজী নজরুল ইসলাম রোড, রাহাতের মোড়, পুরাতন কোর্ট, মডেল থানা চত্তর, শহীদ অজিয়র রোড, আলিয়া মাদ্রাসা রোড, ভিআইপি রোড এমনকি খোদ পৌরসভার সামনের রেলরোডও হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব রোডের দু’পার্শ্বের অধিকাংশ দোকানপাট তলিয়ে গেছে। শহরের খারদ্বার, বাসাবাটি, নাগেরবাজার, সরুই আমরাপাড়া,মুনিগঞ্জ,মালোপাড়া,হাড়িখালী, গোবরদিয়া, খানজাহান পল্লীসহ শহর রক্ষা বাধেঁর ভিতরের অধিকাংশ আবাসিক এলাকার নীচতলার বাসা-বাড়ি বৃষ্টির পানিতে ডুবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারনে পৌরবাসিরা বৃষ্টির পানিতে ডুবে হচ্ছে। মংলা শহরের কুমারখালী, ঠাকুর রানী ও কাইনমারী খালে এই বর্ষা মৌসুমে ¯¬ুইস গেট নির্মাণ করায় বাধ দিয়ে খাল ৩টি বন্ধ রাকা হয়েছে। এতে বৃষ্টিতে জমা হওয়া পৌর এলাকার পানি নিস্কাশন হতে পারছে না। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ কাজ চলায় অধিকাংশ ড্রেন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ কারণেও বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। অপরদিকে পৌরসভার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় এখন পর্যন্ত কোন ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। এসব এলাকার বৃষ্টির পানি কোন অবস্থাতেই নিস্কাশন হতে পারছে না। শহরতলীর শেলাবুনিয়া, কুমারখালী, মিয়া পাড়া, জয় বাংলা, চরকানা, সিগনাল টাওয়ার, কবরস্থানসহ অধিকাংশ আবাসিক এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে অবর্ণণীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অনেক এলাকার রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবে থাকায় পথচারিসহ যানবাহন চালকরা অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আবাসিক এলাকার বাসা-বাড়ি,পুকুর, বাড়ির ওঠানসহ সব কিছু পানিতে ডুবে রয়েছে। অনেক বাসা-বাড়ির রান্না করার জায়গা পর্যন্ত বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। এই অবস্থায় গৃহ পালিত পশু ও হাঁস মুরগী নিয়ে পরিবারগুলোর ভোগান্তির শেষ নেই। জমে থাকা পানি স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়ায় মারাত্বক পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। দেখা দিয়েছে নানা রোগ।

শ্রমজীবিরা বলছেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে ভারী বর্ষণে শহরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। রিকশা চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তারপরও জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বের হয়েছি। পানি উঠে ঘরের ফ্রিজ-টিভিসহ দামি আসবাবও এখন নষ্ট হবার উপক্রম বলে জানান তিনি। বৃষ্টির পানি ঘরের মধ্যে ডুকে পড়েছে। খাটের নিচে পানি। ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে বড় বিপদে আছি। রাস্তা-ঘাট সব খানেই এখন পানি। কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।

পানিবন্দী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাগেরহাট পৌর শহরসহ জেলা সদরের অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে ঘেছে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, সরকারি খালগুলো ভরাট ও দখল হওয়াতে বৃষ্টির পানি সরতে পরছে না।

বাগেরহাটের নতুন জেলখানা রোডের বাসিন্দা সাকিব শিকদার জানান, বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে রান্না ঘর। যে অবস্থা তাতে বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হলে ঘরেও পানি উঠে যাবে। রাতে স্থানীয় কাউন্সিলার শেখ আবুর হাশেম শিপন এসে চিড়া ও গুড় দিয়ে গেছে। সেহেরিতে তাই খেয়ে রোজা রাখছি। বাগেরহাট শহরের রিকশা চালক মোফাজ্জেল হোসেন জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে ভারী বর্ষণে শহরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। রিকশা চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তারপরও জীবিকার তাগিদে রাস্তায় বের হয়েছেন। শহরের স্টেডিয়াম রোডের বাসিন্দা মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, নদীতে ভাটার সময়ও শহরের প্রধান প্রধান সড়কে হাটু পানি। অব্যবস্থাপনার করণে বাগেরহাট জলমগ্ন শহরে পরিনত হয়েছে। পানি উঠে ঘরের ফ্রিজ-টিভিসহ দামি আসবাবও এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাগেরহাট পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার ও প্যানেল মেয়র তালুকদার এ বাকী বলেন,‘ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারনে এ অবস্থার তৈরি হয়েছে। আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিলারা পৌরবাসীকে সাথে নিয়ে পানি নিস্কাশনে কাজ করে যাচ্ছি। এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও জলবদ্ধতার কারণে খেটে খাওয়া দরিদ্র লোকজন কাজে যেতে না পারায় তাদের মাঝে চাল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এব্যাপারে মংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র জুলফিকার আলী বলেন, পানি নিস্কাশনের জন্য পাইপ বসিয়ে ও ড্রেন কেটে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি সরোনোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাংগীর আলম বলেন, তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণে জেলার তিনটি পৌর সবাসহ ৯টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পুকুর,চিংড়ি কামারসহ আমনের বীজ তলা, পানের বরাজ পানিতে তলিয়ে গেছে। আমরা সবকটি উপজেলা প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করতে বলেছি। তালিকা পেরেই ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দেয়া হবে।

(একে/এসসি/জুলাই০৯,২০১৫)



পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test