E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এবার বরিশালে ২ শিশুকে নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ

২০১৫ জুলাই ১৫ ১৯:৪৭:২৫
এবার বরিশালে ২ শিশুকে নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি : সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই বরিশাল সরকারী শিশু সদন বালিকা (উত্তর) এর ২ শিশুর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ওই নির্যাতনের ৩ মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।

খবর পেয়ে বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) জুলফিকার হায়দার। বিকেল ৪টার দিকে তিনি নির্যাতিত শিশুদের সাথে কথা বললেও সংবাদকর্মীদের শিশু সদনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

ভিডিও চিত্র ধারণের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে এলপিআরে থাকা এমএলএসএস আবু তালেবকে একদিনের মধ্যে সদনের ক্যাম্পসে থাকা কোয়ার্টার ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন সমাজসেবা বিভগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অপরদিকে শিশু নির্যাতনকারী সরকারী কর্মকর্তা (কম্পাউন্ডার) মো. দুলাল মিয়াকে বুধবার সকালে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়াও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সূত্রমতে, সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত বরিশাল সরকারী শিশু সদন-বালিকায় (উত্তর) গত ৪ জুলাই এ ঘটনা ঘটে। অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করা ওই নির্যাতনের তিন মিনিটের একটি ভিডিও ফুটেজ সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে সরকারী শিশু সদন পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান।

ভিডিওতে দেখা যায়, দুই শিশুকে গাছের ডাল দিয়ে পেটাচ্ছেন শিশু সদনের কম্পাউন্ডার মো. দুলাল। মাঝে মধ্যে চড়-থাপ্পড়ও দিচ্ছেন। শিশুরা আর করব না বলে চিৎকার করছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে কম্পাউন্ডার দুলালকে শিশু সদনে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও রয়েছে বন্ধ।

শিশু সদনের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ইসমত আরা খানম জানান, গত ৪ জুলাই শিশু সদনের বাসিন্দা ডালিয়াকে (৯) দেখতে আসেন তার মা বিলকিস বেগম। দেখা করে মা চলে গেলে তার পিছু পিছু নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল পর্যন্ত যায় ডালিয়া। তাকে ফিরিয়ে আনতে সেখানে যায় আরেক শিশু সাথী (৯)।

তিনি বলেন, তৃতীয় শ্রেণীর এ দুই ছাত্রীকে নথুল্লাবাদে দেখতে পেয়ে শিশু সদনে ফিরে যেতে বলেন কম্পাউন্ডার দুলাল। পরে তিনি (দুলাল) শিশু সদনে ফিরে এসে তাদের দেখতে না পেয়ে খুঁজতে বের হন।

তিনি আরও বলেন, সাগরদী বাজারের একটি মোবাইলের দোকান থেকে তাদের ধরে নিয়ে এসে দুলাল তাদের মারধর করেন। এ ঘটনা জানার পর তিনি শিশুদের ডেকে মারধর করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শিশুরা তাকে জানায়, তাদের বকা দিয়েছে। তবে মারধর করেনি।

সাংবাদিকদের ওই ২ শিশু ডালিয়া ও সাথী জানায়, তাদের লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে, ভয়ও দেখানো হয়েছে।

কম্পাউন্ডার মো. দুলাল মিয়াকে সাময়িক বরখাস্তের সত্যতা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, দুই শিশুকে নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। সমাজসেবা মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত চাইলে বুধবার সকালে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক) প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিটির সদস্যদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

বুধবার বিকেলে সদনে থাকা শিশুদের সাথে কথা বলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) জুলফিকার হায়দার বলেন, শিশু নির্যাতনের বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় এখানকার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারবেন না। পরিচালক আসার আগে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরা পারভীন শিশু সদনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন শিশু কন্যারা লাকড়ি দিয়ে রান্না করছে, বটি দিয়ে মাছ কাটছে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে তিনি অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। পরে পরিচালক আসার খবর পেয়ে শিশু সদনের বাবুর্চি মিনারা বেগম এসে হাজির হন।

জানা গেছে, এই সদনের ১৫ জন স্টাফ থাকার কথা থাকলেও সুপার, এমএলএসএস এবং বাবুর্চিসহ অধিকাংশরা প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন।

এদিকে কম্পাউন্ডার মো. দুলাল মিয়া কর্তৃক ২ শিশুকে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও চিত্র প্রকাশের দায়ে এলপিআরে যাওয়া এমএলএসএস আবু তালেবকে নোটিশ পাওয়ার আগেই কোয়ার্টার ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।

আবু তালেবের স্ত্রী নাসিমা বেগম জানান, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদেরকে একদিনের মধ্যে ঘর ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন।

আবু তালেবের পুত্র মিরাজ জানায়, তার বন্ধুরা মোবাইল ফোনে ভিডিও চিত্রটি ধারণ করেছে। বিষয়টি উপ-তত্ত্বাবধায়কের কাছে জানালেও তিনি কোন কর্নপাত করেননি। পরবর্তীতে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে যায়।

অভিযুক্ত দুলাল মিয়া বরখাস্তের চিঠি পেয়েই আত্মগোপন করেছেন। তবে তার স্ত্রী কামরুন্নাহার পারভীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেয়ে শিশু দু'টিকে মারার সময় আমি ছাড়াতে গিয়েছিলাম। তবে ওনার ভয়ে ঠেকাতে পারিনি। ওনার রাগ বেশি বলে আমাকে ও ছেলে-মেয়েকে প্রায়ই মারধর করেন।

(টিবি/পিএস/জুলাই ১৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test