E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গৌরনদী থানার ওসি সাজ্জাদ বরখাস্ত

২০১৫ জুলাই ১৬ ১৭:০৩:৪১
গৌরনদী থানার ওসি সাজ্জাদ বরখাস্ত


আঞ্চলিক প্রতিনিধি(বরিশাল):বরিশাল জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ গৌরনদী থানার বহুল বিতর্কিত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন কিশোরকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্টান্ড রিলিজ করা হয়েছে। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হুমায়ুন কবির তাকে প্রত্যাহারের এ নির্দেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকালেই স্টান্ড রিলিজ হওয়া ওসি সাজ্জাদ হোসেন কিশোর বরিশাল পুলিশ লাইনে যোগদান করেছেন।

জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীর টরকী এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে একটি দূর্ঘটনায় মহাসড়কে প্রতিবন্ধিকতার সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় একঘন্টা মহাসড়কের দু’পার্শ্বে শত শত যানবাহন আটকা পরে যানজটের সৃষ্টির ফলে ঈদ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল। দীর্ঘসময়ে যানজট নিরসনে গৌরনদী থানা পুলিশ কোন উদ্যোগই গ্রহণ করেনি।

সরকারকে বেকায়দায় ফেলে সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করতে কৌশলে এসময় ওসি সাজ্জাদ থানায় অবসর যাপন করছিলেন। খবর পেয়ে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. হুমায়ুন কবির বরিশাল থেকে গৌরনদী পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। এসময় ওয়ারলেস মেসেজের মাধ্যমে তাৎক্ষনিক ওসি সাজ্জাদ হোসেন কিশোরকে স্টান্ড রিলিজের আদেশ দেন ডিআইজ হুমায়ুন কবির। সকালেই স্টান্ড রিলিজকৃত ওসি বরিশাল পলিশ লাইনে যোগদান করেছেন।

কে এই সাজ্জাদ ? নাম না প্রকাশের শর্তে একটি গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন এক কর্মকর্তা জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় বিএনপি পরিবারে জন্ম নেয়া সাজ্জাদ হোসেন কিশোর ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রদলের ক্যাডার হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। নোয়াখালী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের ব্যানারে তিনি জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সাজ্জাদ হোসেন কিশোর নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

নোয়াখালীর চাটখিলের বিএনপির সাবেক সাংসদ সালাউদ্দিন কামরানের ভাতিজা সাজ্জাদ হোসেন কিশোর ১৯৯৩ সালে বরকতউল্লাহ বুলুর হাত ধরে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। এরপর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সুপারিশে ১১ মাস কঙ্গোতে জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সূত্রে আরও জানা গেছে, কুষ্টিয়া সদর থানার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ওই এলাকার বিএনপির সাংসদের ক্যাডার হিসেবেও সাজ্জাদ নিজেকে প্রমান করেন। এজন্য তিনি আ’লীগের ১৭জন নেতাকর্মীকে চরমপন্থী আখ্যায়িত করে কতিথ ক্রসফায়ারে হত্যা করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন থানায় চাকুরীতে থাকাকালীন সাজ্জাদ হোসেনের কর্মকান্ড ছিলো বিতর্কিত।

শান্তি মিশন থেকে দেশে ফিরে তিনি বরিশালের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নিজ থানা আগৈলঝাড়ায় যোগদান করেন। তিনি দ্বায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এমপি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর নিরাপত্তার ! সুচতুর ও কৌশলী সাজ্জাদ এসময় এমপি হাসনাতের বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন হয়ে ভিআইপ দালাল দ্বারা বেষ্টিত হয়ে এলাকায় নীরব ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তিনি দীর্ঘ সময় আগৈলঝাড়ায় ওসির দ্বায়িত্ব পালন করে হাসনাতেরই নির্বাচনী এলাকার অপর থানা গৌরনদীতে ওসি হিসেবে যোগদান করেন। সেখানেও তিনি এমপি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর নিরাপত্তাসহ বিভিন্নস্থানে গাড়ি বহরে নিরাত্তার দায়িত্ব পালন করেন।

গৌরনদী থানার ওসি হিসেবে সাজ্জাদ হোসেন যোগদানের পর তার বেপরোয়া ঘুষ বণিজ্য, সংখ্যালঘু দমন, মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মাথাচারা দিয়ে ওঠে নিষিদ্ধ চরমপন্থী ও জঙ্গী হিজবুত তাওহীদের কর্মকান্ড। ফলে শান্ত গৌরনদী ক্রমেই হয়ে ওঠে অশান্ত। একটি বিশেষ মহলের মদদে ওসির বেপরোয়া কর্মকান্ডে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়।

সূত্রমতে, পুলিশ প্রশাসনে ঘাঁপটি মেরে থাকা ওসি সাজ্জাদ হোসেন গৌরনদীতে যোগদান করার পর পরই গত ২ ফেব্র“য়ারি টরকীর সুন্দরদীতে লবন বোঝাই একটি ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে ওইসময়ের অবরোধকারীরা। এতে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত হয়। এ ঘটনাটি সড়ক দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেন ওসি সাজ্জাদ হোসেন। এর কয়েকদিন পর (৬ ফেব্র“য়ারি) মাহিলাড়া এলাকায় ভোররাতে মালবাহী ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়। ওই ঘটনায় স্থানীয় আ’লীগ কর্মীসহ সাধারন ব্যবসায়ীদের মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতারের পর হয়রানী করেন ওসি সাজ্জাদ। এছাড়াও তার (ওসির) প্রত্যক্ষ মদদে একটি মহল চলতি বছরের ১৭ মার্চ মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদে হামলা চালিয়ে পরিষদে টানানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করে। জনসম্মুখে ওসির আপত্তিকর এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কালিয়া দমন গুহর কনিষ্ঠ পুত্র যুবলীগ নেতা সলিল গুহ পিন্টু। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি কৌশলে অস্ত্রের নাটক সাজিয়ে পিন্টুকে আটক করিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে।

গোয়েন্দা সংস্থার ওই উর্ধতন কর্মকর্তা আরও জানান, ওসি সাজ্জাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জায়গা দখলে সহযোগিতা, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর মাধ্যমে অর্থ আদায়, বিএনপির’র নাশকতাকে দুর্ঘটনা বলে প্রচারসহ ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।

গৌরনদী থানায় যোগদান করেই বিএনপির হরতাল নাশকতার বিভিন্ন মামলায় সাধারণ মানুষকে আসামী করে হয়রানীর মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওসি সাজ্জাদ। এলাকায় কৌশলে অর্থ আদায় করতে অর্থশালী নিরীহ বিএনপির লোকজনকে বিভিন্ন মামলায় আসামী করে বিপুল পরিমান অর্থ আদায়ের মাধ্যমে আ’লীগের আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ (ফেইজ বুক) মাধ্যমে ওসি সাজ্জাদ এমপি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর বড় ছেলে সাদিক আবদুল্লাহর দলের সৈনিক হিসেবেও নিজের নাম অনন্তর্ভুক্ত করান। ষ্ট্যান্ড রিলিজের সত্যতা স্বীকার করেছেন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. হুমায়ুন কবির।

(টিবি/এসসি/জুলাই১৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test