E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তাড়াশে পল্লীবিদ্যুতের সেচপাম্প স্থাপনে নিয়মনীতিকে উপেক্ষা

২০১৫ জুলাই ২২ ১৩:২৬:২১
তাড়াশে পল্লীবিদ্যুতের সেচপাম্প স্থাপনে নিয়মনীতিকে উপেক্ষা

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ তাড়াশে পল্লীবিদ্যুতের সেচপাম্প স্থাপনের সকল নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে সংযোগ দেওয়া নিয়ে সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি উল্লাপাড়া আরএস অফিসের জিএম ও পল্লীবিদ্যুৎ রায়গঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বিদ্যুৎসংযোগ দেওয়ার পায়তারা করছেন। ভুক্তভোগী গ্রাহক মোবারক হোসেন সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম ও জিএম এর বিরুদ্ধে পল্লীবিদ্যুতের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের ও উকিল নোটিশ প্রদান করেছেন।

অভিযোগে ও সরেজমিনে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার দেশীগ্রাম ইউনিয়নের দুলিশ্বর গ্রামের মৃত্যুজয় সেচসংযোগের জন্য ভুয়া জমি দেখিয়ে তাড়াশ পল্লীবিদ্যুৎ সাবজোনাল অফিসে আবেদন করে। একই গ্রামের মোবারক হোসেনও সেচসংযোগের জন্য একই অফিসে আবেদন করে। একই স্থানের উভয়পক্ষের আবেদন হওয়াতে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে পল্লীবিদ্যুৎ তাড়াশ অফিস একাধিকবার তদন্ত করেন।তদন্ত প্রতিবেদন মোবারকের পক্ষে দেওয়ার পর অমিমাংসিত রয়ে যায়। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য পর্যন্ত গড়ায়।তিনি বিধিমোতাবেক সেচসংযোগ দেওয়ার জন্য তাড়াশ সাবজোনাল অফিসকে নিদের্শ দেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, দুলিশ্বর গ্রামের মৃত্যুজয় সেচ সংযোগের জন্য যে জমি দেখিয়ে আবেদন করেছে তা তার নিজস্ব জমি নয়। তিনি প্রতারণা করে অন্যের জমি দেখিয়ে প্রথমে আবেদন করে। পরে ওই গ্রামের মোবারক হোসেন লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। ইতিমধ্যে মৃত্যুজয় সেচ সংযোগের জন্য টাকা পয়সা পরিশোধ করে। অবস্থা বেগতি দেখে পরে সু-চতুর মৃত্যুজয় বলরামের নিকট থেকে ২শতক জমি রেজিষ্টার করে নিয়ে আবেদন সংশোধন করে। মৃত্যুজয় যে জমি বলরামের নিকট থেকে রেজিষ্টার করে নিয়ে আবেদন করেছেন সেখান থেকে একই গ্রামের আলহাজ্ব আব্দুল কুদ্দুস এর সেচ সংযোগ থেকে দুরত্ব ৬১৫ ফিট। যা পল্লীবিদ্যুৎ সেচ সংযোগের নিয়মনীতির মধ্যে পরেনা।

পল্লীবিদ্যুতের নিয়ম অনুসারে এক সেচ সংযোগের থেকে অন্য সেচ সংযোগের দুরত্ব কমপক্ষে সাড়ে৭শ ফিট হতে হবে। তাছাড়া ওই ২শত জমি ছাড়া মৃত্যুজয়ের ওই স্কীমে আর কোন জমি নেই।

অপরদিকে আবেদনকারী মোবারক হোসেন তার সেচ সংযোগের জন্য নিজস্ব জমির পরিমান প্রায় ৮ বিঘা। নিয়ম অনুসারে সেচ সংযোগ পাওয়ার যোগ্য মোবারক হোসেন। কিন্তু পল্লীবিদ্যুতের কতিপয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনিয়মের কারণে মোবারকের পরিবর্তে মৃত্যুজয়কে সংযোগ দেওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ অফিস। ভুক্তভোগী মোবারক হোসেন কোন উপায় না পেয়ে উপজেলা সেচ কমিটি, উপজেলা কৃষি অফিসার ও উকিল নোটিশ প্রদান করেছেন। কিন্তু সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতের এক উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তরিঘরি করে মৃত্যুজয়কে সেচ সংযোগ দেওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সেচ কমিটির অনুমোদন ছাড়া পল্লীবিদ্যুৎ কিভাবে সেচ সংযোগ দিতে পারে তা আমার জানা নেই। তিনি আরও বলেন যার নিজস্ব কোন জমি নাই তাকে পল্লীবিদ্যুৎ কিভাবে সেচসংযোগের জন্য টাকা জমা নেয় তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি মনে করেন সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ অফিস সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পল্লীবিদ্যুতের নীতিমালাকে উপেক্ষা করে মৃত্যুজয়ের সেচ সংযোগ দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন এ বিষয়ে মোবারক হোসেন নামে এক কৃষক আমার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তদন্ত করে যা পেয়েছে তাতে মৃত্যুজয় সেচ সংযোগ পাওয়ারযোগ্য নয়। কারণ তার নিজস্ব জমি বলতে মাত্র ২শতক। আর ২শতক জমি উপর সেচ সংযোগ পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে রায়গঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মোঃ নিয়াজ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন বেচারা গরীব মানুষ টাকা পয়সা খরচ করেছে তাই তাকে সেচ সংযোগ দেওয়া যেতে পারে। পল্লীবিদ্যুতের নিয়মনীতিমালার মধ্যে মৃত্যুজয় সেচ সংযোগ পায় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের সিনিয়র প্রকৌশলী জিএম তুষার কান্তি দেবনাথ বলেন, রায়গঞ্জ অফিসের ডিজিএম এবং তাড়াশ অফিসের এজিএম (কম) এর নিকট বিষয়টি তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে বারবার তদন্ত করা হয়েছে এবং তদন্ত প্রতিবেদন আপনার নিকট দেওয়ার পরও তাকে কিভাবে সেচ সংযোগ দেওয়ার পায়তারা করছেন এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি সু-কৌশলে এড়িয়ে যান।

অন্য একটি সুত্র থেকে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতের উধ্বর্তন কর্মকর্তার নির্দেশেই মৃত্যুজয় টাকা পয়সা জমা নিয়ে সেচ সংযোগের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে তার সংযোগ দেওয়া হবে। এলাকাবাসি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিরাজগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ উল্লাপাড়া আরএস অফিসের বিভিন্ন অনিয়মকে অর্থের মাধ্যমে নিয়ম করে কাজ করছেন। যা সাধারণ মানুষের অর্থ ব্যয় ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। দুলিশ্বর গ্রামের সাধারণ মানুষ জানান, এত বড় অনিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অর্থের মাধ্যমে পল্লীবিদ্যুৎ যদি সেচ সংযোগ দেওয়ার চেষ্ঠা করে তাহলে এখানে রক্তের বন্যা হয়ে যাবে। কোনক্রমেই নিয়ম বর্হিভুত সংযোগ দিতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে গত ১ সপ্তাহ ধরে উক্ত গ্রামে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিয়মের বাহিরে সংযোগ দেওয়া হলে আইনশৃংখলার ব্যাপক অবনতি হবার সম্ভবনা রয়েছে।

অভিযোগকারী মোবারক হোসেন ইতিমধ্যে পল্লীবিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সু-বিচার চেয়ে আবেদন করেছেন। তাছাড়া সংযোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য পল্লীবিদ্যুতের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট উকিল নোটিশ প্রদান করেছেন।

(এমএমএইচ/এলপিবি/জুলাই ২২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test