E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খাবারের জন্য ১০-১২ বছর হাসপাতালে ঈদ

২০১৫ জুলাই ২৩ ১৬:৫৫:৪১
খাবারের জন্য ১০-১২ বছর হাসপাতালে ঈদ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ জালাল উদ্দিনের বয়স আশির কাছাকাছি। চোখের দৃষ্টি কমে এসেছে। হাড্ডিসার এই মানুষটার বুকের পাঁজর গণনা করা যায়। বার্ধক্য আর খাবারের সংকট মিলে জীবনটা বিপন্ন হতে চলছে।

নিঃসন্তান ও বিপত্নীক জালাল উদ্দিন এর বাড়ি মইলাকান্দা ইউনিয়নের কাউরাট গ্রামে। চিকিৎসা নয় শুধু খাদ্যের জন্য প্রায় সারা বছরই ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। পবিত্র ঈদুল ফিতর দিনে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১১নং বেডে শুয়ে এ কথা জানালেন তিনি।

প্রতিবছর জালাল উদ্দিন ঈদে ছুটে আসেন হাসপাতালে। এ দিন হাসপাতালে রোগীদের জন্য উন্নত খাবার দেয়া হয়। সব রোগীরা যখন আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ছুটি নেয় তখন জালাল উদ্দিন এসে ভর্তি হন। কত বছর যাবত এ হাসপাতালে ঈদ করছেন, তার সঠিক জবাব দিতে পারেননি। আঙ্গুলে দেখালেন ১০/১২ বছর! ঈদে কখনও জুটেনি নতুন পোশাক। এর জন্য কোন আক্ষেপও করেননি তিনি।

মনের ভাষাও প্রকাশ করতে পারছেন না। আটকে যাচ্ছে মুখের কথা। বারবার বলার পরেও বুঝা যাচ্ছে না তিনি কি বলছেন? দু'চোখে গড়িয়ে পড়ছে পানি। বয়স্ক ভাতা আছে কি-না, বলতে পারেননি। ব্যাংক থেকে কখনও টাকা উত্তোলন করেননি বলে জানান। তার কোনো ছেলে-মেয়ে নেই। স্ত্রীও চলে গেছে না ফেরার দেশে। কাজ-কর্ম করার সামর্থ্য নেই। শুধু ৩ বেলার খাবার প্রয়োজন। ভিক্ষা করার শারীরিক শক্তিও তার নেই। তাই খাবারের উৎস হিসাবে বেছে নিয়েছে হাসপাতাল।

তিনি হাসপাতাল এলাকায় 'জালাল দাদা' নামেই পরিচিত। জরুরী বিভাগে এলেই ভর্তির টিকেট পান। হাসপাতালে ডাক্তার ভর্তি না করলে দু’চারদিন এদিক-সেদিক ঘুরে আবারও ফিরে আসেন। কর্তব্যরত আয়া-নার্স-ডাক্তারদের পরিচিত মুখ। হাসপাতালে থাকলেও দিনদিন বাড়ছে শারীরিক দুর্বলতা। পরিবার-পরিজনের কেউ কখনও নিতে এসেছে এমন সাক্ষ্যও পাওয়া যায়নি। কমে যাচ্ছে স্মরণশক্তি। নিজের বিছানা রেখে অন্য রোগীর বিছানায় শুয়ে পড়েন। নিচে নামলে উপরে উঠার পথ হারিয়ে ফেলেন। দেহের বল, চোখের দৃষ্টি, বাক শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এখন তার শুধু খাবার নয়, চিকিৎসাও প্রয়োজন।

(এসআইএম/এলপিবি/জুলাই ২৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test