E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছেলের সামনে মা ও স্ত্রীকে নির্যাতন

২০১৫ জুলাই ২৭ ১৮:৩৯:১০
গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছেলের সামনে মা ও স্ত্রীকে নির্যাতন

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ঈদে নানার বাড়িতে মোহনগঞ্জ বেড়াতে গিয়েছিল পুরো পরিবার। ফিরতি পথে কুমিল্লার বুড়িচং যেতে ময়মনসিংহগামী মোহনগঞ্জের ট্রেন থেকে গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনে নেমে ট্রেন বদল করতে হয়। রবিবার রাত ১১টার দিকে গৌরীপুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নামে পুরো পরিবারটি। কুমিল্লাগামী ট্রেন ভোর ৫টায়।

রেলওয়ে জংশনের মুসাফিরখানায় বিছানাপত্র পেতে ছোট্ট ছেলে-মেয়ের চলছিল হইচই। তখন রাত প্রায় সাড়ে ১২টা। অদূরে ওভার ব্রীজের লোহার রিলিংয়ে বসে হানিফ মিয়া (৩৫) ও তার স্ত্রী আয়শা বেগম (৩০) প্রতীক্ষার প্রহর গুনচ্ছে। হঠাৎ ৫/৬জন সন্ত্রাসী অর্তিকিতভাবে তাদের উপর হামলা চালায়। বিদ্যুতের আলোয় শতশত যাত্রী ও দোকানীরা হামলার মঞ্চায়ন দেখেছে। কেউ প্রতিবাদ করেননি।

ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় মা আজেদা বেগম (৫৪)। স্ত্রীকে রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করছে হানিফ কিন্তু তাকে আটকিয়ে রেখে পুত্রের সামনে চলে মা আজেদা বেগম ও স্ত্রী আয়শা বেগমের উপর শারীরিক নির্যাতন। চেচামেচি চিৎকারেও রেলওয়ে জংশনের দোকানী ও পুলিশ কেউ এগিয়ে আসেনি। প্রায় ৩০মিনিটের এই বর্বরোচিত নির্যাতনে এক পর্যায়ে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মৃত ভেবে আজেদাকে ফেলে সন্ত্রাসীরা চলে যায়।

খবর পেয়ে ছুটে যান গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম মিন্টু, যুগান্তর প্রতিনিধি মোঃ রইছ উদ্দিন, সামছুল হক, মোঃ এমদাদুল হক ও স্থানীয় সাংবাদিকরা। ঘড়ির কাটায় তখন ১টা ১৮মিনিট। তখনও পুলিশের ঘুম ভাঙ্গেনি।

মুঠোফোনে সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ আবুল কালাম আজাদ। আহতদের উদ্ধার করে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। হাসপাতালের রেকর্ড সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার বুড়িচং থানার উত্তরগ্রামের আলী আকবরের স্ত্রী আজেদা বেগম (৫৪) ও হানিফের স্ত্রী আয়শা বেগম (৩০) রাত ২টায় চিকিৎসা নেয়। রাত ১টা ৫৩ মিনিটে এ ঘটনা ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম্বারে মুঠোফোনে জানান, প্রতিকার নয় বরং সাংবাদিকদের উপর তিনি ক্ষেপে যান। এতে আরো আহত হন হানিফের বোন। বৃদ্ধ আজেদার সারা শরীরে কালো চোপচোপ দাগ। প্রচন্ত আঘাত পেয়েছে বুকে। আহত আয়শা বেগমের ওপর উর্পুযপুরি নির্যাতনে ঘাড়ে, পিঠে, পায়ে রয়েছে কালো দাগ। চা দোকানদার তালে হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে চিনতে পারি নাই।

একটি সূত্র জানায়, এই চক্রটি রেলওয়ে জংশনে ট্রেনের জন্যে অপেক্ষায় থাকা যুবতীদের উপর নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন ও হয়রানি করে আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানী জানান, কিছুদিন পূর্বে গভীররাতে ষোড়শী প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করেছিল। রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাটি জানার পরেও প্রভাবশালীদের চাপে চেপে যায়। জারিয়া-মোহনগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের যাত্রীদের এ স্টেশনে অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষমান যাত্রীদের মধ্যে কোন তরুণী বা মহিলাদের কু-প্রস্তাবসহ উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে।

গভীর রাতে যাত্রীদের উপর অমানুসিক নির্যাতনের সত্যতা স্বীকার করে গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের আইসি আব্দুর রহিম খান জানান, যাত্রীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার সম্ভব হয়নি। ওই যাত্রীরা রাতে পুলিশ পাহারায় ছিল। সকালে চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।

(এসআইএম/এএস/জুলাই ২৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test