E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সম্পত্তির বিরোধে শিশুকন্যা ও মহিলাকে গৃহবন্দী!

২০১৫ জুলাই ২৯ ১৮:২৭:১১
সম্পত্তির বিরোধে শিশুকন্যা ও মহিলাকে গৃহবন্দী!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: পুলিশের সহযোগীতায় বোন মনোয়ারা বেগম (৩৫) ও তার শিশু কন্যা ফাতেমা (৭)কে ঘরের সকল দরজায় তালা ঝুলিয়ে দু’দিন ধরে গৃহবন্ধী করে রেখেছে স্থানীয় প্রতিপক্ষ।

ঘর দরজার তালাবদ্ধ থাকায় নাওয়া-খাওয়া ও প্রকৃতির ডাকে সারা দিতেও ঘর থেকে বের হতে না পেরে মধ্যবয়সী গৃহবধূ ও শিশুটি বন্দী হয়ে পরেছে। অমানবিক ও অভিনব এ নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট ইউনিয়নের শিরযুগ গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে গত ২৮ জুলাই দুপুর ২ টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মনোয়ারা বেগম তার পৈত্রিক ভিটায় টিনসেড ঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় গৃহবন্দী রয়েছে। ঘরের সামনে ও পেছনে ষ্টীলের দরজাগুলো একাধিক তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এসময় ওয়ালের ফাক দিয়ে কয়েকটি আঙ্গুল বেড় করে ইশারায় ঘরের মধ্যে আটকাবস্থায় তার শারীরিক অসুস্থতা ও দূর্ভোগের কথা জানায়। একটি জানলার কাছে গেলে ছোট গ্রীলের পাশে এসে দাড়িয়ে জানায় দূর্ভোগের কাহিনী।

মনোয়ারা বেগম জানায়, এঘরে সে তার বৃদ্ধা চাচী আনু বেগম ও শিশুকন্যা ফাতেমাকে নিয়ে বসবাস করেন। ২৭ জুলাই দুপুর ১ টায় শেখেরহাট পুলিশ ক্যাম্পের এসআই জাফর, ঝালকাঠি থানার এসআই ফিরোজের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও তার প্রতিপক্ষ আঃ আজিজ মীর, আহম্মেদ মীর, আজম মীর সহ তার ঘরে আসে। পুলিশ ও প্রতিপক্ষরা তাদেরকে ঘর থেকে বেড় করে দেয়ার জন্য টানাহ্যাঁচরা শুরু করলে বৃদ্ধা চাচী আনু বেগমকে বেড় করতে সক্ষম হলেও তারা ঘরেই অবস্থান করে। এঅবস্থায় তাকে ও তার শিশু কন্যাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে পুলিশের সহযোগিতায় তালা ঝুলিয়ে দেয়।

প্রতিপক্ষ আহম্মেদ মীর সাংবাদিকদের জানায়, এ ঘরে তারা কোন তালা দেয়নি বরং ঘটনাস্থলে আগত দুই পুলিশ কর্মকর্তাই এ ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি জানতে শেখেরহাট পুলিশ ক্যাম্পের এসআই জাফরের সাথে আলাপকালে জানায়, তারা এএসপি আফম আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে ওই মহিলাকে বের করে দিয়ে তালা লাগাতে যাই তবে মনোয়ারা বেগম ঘর থেকে বের হতে না চাইলে আমরা চলে আসি। আমরা তালা লাগানি তবে তাদেও প্রতিপক্ষরা তালা লাগাতে পারে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশি একাধিক সূত্র জানায়, শিরযুগ গ্রামের আশরাব আলীর মৃত্যু হলে তার দুই সন্তান মনোয়ারা ও ভাই আনোয়ার হোসেন ওয়ারিশ সূত্রে ৬শতাংশ জমির মালিক হয়। তবে ভাই আনোয়ার ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করায় তার ভাগের সম্পত্তি বোনের নিকট বিক্রির শর্তে ষ্টাম্পে চুক্তি করে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিলে শিশুকন্যা ও অসহায় বৃদ্ধ চাচীকে নিয়ে কে নিয়ে উক্ত জমিতে একটি টিনশেড দ্বিতল ঘর নির্মান করে মনোয়ারা বেগম বসবাস করে আসছে।

এ অবস্থায় কিছুদিন পূর্বে মনোয়ারা বেগমের অজ্ঞাতে ভাই আনোয়ার তার অংশের জমি জ্ঞাতি আত্মীয় সামসুল ইসলাম সুরুজের কাছে গোপনে বিক্রি করতে আসলে চতুর সুরুজ ২ ভাইবোনের ৬ শতাংশ সম্পত্তি সম্পূর্ন ৬ লাখ টাকায় ক্রয় করেছে মর্মে লিখিয়ে নেয়।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুরুজ, তার বড়ভাই রুহুল মিয়া, ইউপি সদস্য আলমগীর খান, ও স্থানীয় মিন্টু খান সহ গণ্যমান্যরা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ১ মাসের মধ্যে ৪ লাখ টাকা সালিশদারদের কাছে দিলে তারা মনোয়ারা বেগমকে ঘর ও জমি দলিল করে দিবেন বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।

সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের এক সপ্তাহ পূর্বেই উক্ত টাকা সংগ্রহ করে মনোয়ারা বেগম ও তার পরিবার শালিশদারদের কাছে কাছে গেলে অজ্ঞাত কারনে তারা নানারকম তালবাহান শুরু করে। নিরুপায় হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সাধারন সদস্যের পরিবার হিসাবে গত ঈদের পূর্বে মনোয়ারা বেগম বিষয়টি ঝালকাঠি পুলিশ সুপার ও বরিশাল বেঞ্জের ডিআইজির কাছে লিখিত ভাবে জানিয়ে সুষ্ঠু সুরাহার আবেদন জানায়। পুলিশ সুপার এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ঝালকাঠি থানার ওসির কাছে পাঠালে তার ব্যবস্থা নেয়ার পূর্বেই প্রতিপক্ষরা শেখেরহাট ক্যাম্প পুলিশ ও ভাড়াটে দলবল নিয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।

তবে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম সুরুজ জানায়, আমি সালিশদার ছিলাম না তাই এধরনের তালবাহানা বা ঘরে তলাবন্ধ করার বিষয়ে আমাকে কেছিু জানানো হয়নি। আমি শুনেছি সালিশদাররা জমি ও ঘরের মুল্য বাবদ সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিতে বললেও সিদ্ধান্ত কার্যকর না করেই মনোয়ারা বেগম পুলিশের জিম্মায় থাকা ঘরের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করেছে। তবে দু’এক দিনে কি ঘটেছে আমি জানি না বা কেউ আমার কাছে আসেনি।

(এএম/এলপিবি/জুলাই ২৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test