E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিববাড়িয়া নদীতে এখন সৌন্দর্য ও চাপা কান্নার স্রোত

২০১৫ জুলাই ৩০ ০১:০৬:০৬
শিববাড়িয়া নদীতে এখন সৌন্দর্য ও চাপা কান্নার স্রোত

মিলন কর্মকার রাজু,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)থেকে :পটুয়াখালীর কলাপাড়ার শিববাড়িয়া নদী হঠাৎ করে এখন পর্যটন জোনে পরিনত হয়েছে। নদীর দুই পাড়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মাছ ধরা নিরাপদে আশ্রয় নেয়ায় এই ট্রলার দেখতে শতশত মানুষ বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে মৎস্যবন্দর আলীপুর ও মহীপুরে ভীড় করছে।

রাতে নদীতে নোঙর করে রাখা ট্রলারের লণ্ঠনের(বাতি) আলো এই সৌন্দর্য আরও আকর্ষন করছে। পর্যটকরা শিববাড়িয়া নদীর সৌন্দের্যে মুগ্ধ হলেও এই ট্রলারে থাকা অন্তত বিশ হাজার জেলে মাছ শিকার করতে না পেরে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কিন্তু তাদের সেই কান্না কেউ শুনছে না।
নি¤œচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে উঠায় সোমবার সকাল থেকে অন্তত দেড় হাজার মাছ ধরা ট্রলার কুয়াকাটাগামী নির্মানাধীন শেখ রাসেল সেতু সংলগ্ন শিববাড়য়া নদীর মোহনায় আশ্রয় নিয়েছে। কুয়াকাটা সৈকত থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরের এই নদী এখন ট্রলারে পরিপূর্ন। আর নদীতে নোঙর করে রাখা ট্রলারের বহর দেখতে পর্যটকরা ছুটে আসছে শেখ রাসেল সেতুতে। নির্মানাধীন এই সেতুর উপর ও নদীর তীড়ে দাড়িয়ে কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা পর্যটকরা উপভোগ করছে বিভিন্ন ডিজাইনের ট্রলার ও নদীর সৌন্দর্য। গত এক যুগেও এতো ট্রলার এই নদীতে দেখা যায়নি এ দাবি মৎস্য ব্যবসায়ীদের।
মঙ্গলবার সকালে কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা ঢাকার পর্যটক অসীম রায়, জাহিদুল ইসলাম,স্বাগতা রানী বলেন,কুয়াকাটা সৈকত এখন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকায় এবং প্রচন্ড ঢেউয়ের কারনে তাঁরা সৈকতে নামতে পারেন নি। তাই শিববাড়িয়া নদী ও ট্রলার দেখতে এসেছেন। এতো ট্রলারে এই নদীর মোহনায় আশ্রয় নেয় তা কখনও দেখেন নি। একইভাবে এদৃশ্য দেখতে এসেছেন বরিশালের ফয়সাল মাহমুদ, আফ্রিয়া তামান্না, যশোরের জীতু আমান, তানি হক। তারা বলেন, বর্ষায় শিববাড়িয়া নদীর এ এক অপূর্ব সৌন্দর্য। দেশের কোন নদীতে এতো ট্রলার একসাথে তাঁরা আর দেখেন নি। তবে তাঁদের আফসোস কষ্টে আছে এই ট্রলারের জেলেরা। কারন সাগর উত্তাল হলেই এভাবে বসে সময় কাটাতে হয় জেলেদের।
এফবি সিয়াম ট্রলারের জেলে অলি উল্লাহ, এফকি মামনি ট্রলারের জেলে হুমায়ন। কক্সবাজারের এই দুটি ট্রলার ছাড়াও এফবি সীমা ট্রলারের জাহিদ, এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের আলমগীর বলেন, গত দুইদিন ধরে তাঁরা শিববাড়িয়া নদীতে ট্রলার ভিড়িয়ে রেখেছেন। সাগর উত্তাল তাই মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। তাঁদের প্রতিটি ট্রলার প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা খরচ করে মাছ শিকারের জন্য যাত্রা করেও আবার ফিরে আসতে হয়েছে বৈরি আবহাওয়ার কারনে। এতে সীমাহীন লোকসানের কবলে তাঁরা পড়লেও জীবনবাজি রেখে উত্তাল সাগরে যেতে চাচ্ছেন না ।
ট্রলারে উঠে দেখা গেছে প্রতিটি ট্রলারেই ১২/১৮ জন জেলে। কিছু ট্রলারে একটি/দুইটি লাইফ জ্যাকেট থাকলেও অধিকাংশ ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট ও বয়া নেই। নেই দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার সংবাদ শোনার রেডিও। চট্রগ্রামের এফবি ময়না ট্রলারের মাঝি ইউনুস প্যাদা বলেন,“ ২০/২৫ বছর ধইর‌্যা মাছ ধরি। কোন জ্যাকেট-ম্যাকেট আমরা পড়ি নাই ও মালিকও দেয় না। সাগরে ট্রলার ডুইব্বা গ্যালে অইয়াতে কোন কাম হয় না।
একাধিক জেলে বলেন, মানুষ আমাগো আর ট্রলার দেখতে দ্যাহেন লাইন দেছে। কিন্তু মোগো প্যাডে যে ক্ষুধা হেইয়া কেউ দ্যাহে না। কেউ কয়না এই জাইল্লারা না খাইয়া আছে কয়ডা মুড়ি কিইন্না দেই। হ্যারা বোঝেনা না মাছ নাই তো মোগো খাওন নাই।
কলাপাড়া মৎস্যব্যবসায়ী সমিতির সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে আকস্মিক ঝড়ে একসাথে বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক ট্রলার ডুবিতে শতশত জেলের মৃত্যু ঘটেছে। এরপর থেকে প্রতিটি ট্রলারে লাইফজ্যাকেট রাখতে বলা হলেও ট্রলার মালিকের অনীহা ও আইনী কোন পদক্ষেপ না থাকায় এখনও জীবন বাজি রেখে জেলেরা মাছ শিকার করছে। তবে এবার সেই ট্রলার ডুবির ভয়ে জেলেরা নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, সাগর উত্তাল থাকায় সব জেলে ট্রলারকেই নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। শিববাড়িয়া নদীতে সহ¯্রাধিক ট্রলার আশ্রয় নিলেও এখন সাগরে রয়েছে অনেক ট্রলার। সাগরে এই জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখায় প্রতিদিন অন্তত কয়েকশ কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে ট্রলার মালিক, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।


(এমকেআর/এসসি/জুলাই ৩০,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test