E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আশাশুনির চাকলায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধটি দু’দিনেও মেরামত হয়নি

২০১৫ আগস্ট ০৩ ১৮:৫৫:১৭
আশাশুনির চাকলায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধটি দু’দিনেও মেরামত হয়নি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলায়  ভেঙে যাওয়া কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধটি দু’দিনেও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। সোমবার সকালে দ্বিতীয় দিনের মত বাঁধটি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামত করার চেষ্টা করা হলেও পর্যাপ্ত উপকরণের অভাবে দ্বিতীয় দিনের মত বাঁধ সংষ্কার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নির্মাণাধীন ওই বাঁধ প্রবল জোয়ারের তোড়ে বিলীন হয়ে যায়।

প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ জানান,চলতি বছর ২২ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর ৭(১) নং পোল্ডারের চাকলার বাধঁ ভেঙ্গে যাওয়ার পর এই এলাকায় ৭৫০ ফুট বিকল্প রিংবাধঁ তৈরীর জন্য ঠিকাদার খুলনা জেলার নলিয়ানের কামরুজ্জামান মণ্টুকে কার্যাদেশ দেয়া হলেও ৫০ভাগ কাজ বাকী থাকতেই ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেয় । ১৯ জুনের পর থেকে ঠিকাদার আর কাজ না করায় কোমেনের প্রভাবে দূর্বল হয়ে যাওয়া অসমাপ্ত বাধঁটি শনিবার সন্ধ্যায় ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয় । এদিকে বাধঁভাঙ্গা পানিতে ডুবে থাকা চাকলা গ্রামের ২৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। ভেসে গেছে ২০০ বিঘার চিংড়ি ঘের। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে রবিবার সকাল থেকে নির্মাণ শুরু করা বাঁধটি দুপুরের জোয়ারে বিলীন হয়ে যায়। সোমবার সকালে অপ্রতুল নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করার পর দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে আবারো জোয়ারের তোড়ে বিলীন হয়ে যায়। সোমবার ঠিকাদার বাঁধ সংস্কারের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ না নিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন উদ্যোগ নেয়নি।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর সহকারি প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ জানান, ২২ এপ্রিল চাকলার ৭৫০ মিটার বেড়িবাঁধটি সংস্কারের জন্য আপদকালিন ব্যয় হিসেবে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করে খুলনার নলিয়ানের ঠিকাদার কামরুজ্জামান মণ্টুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে অনুযায়ি মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। শিডিউলে এসকেবিটর দিয়ে কাজ করার কথা বলা হলেও তিনি শ্রমিক দিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯ জুন থেকে বর্ষার কারণে কাজ বন্ধ করে দেন ওই ঠিকাদার। পরবর্তীতে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও মাটি স্বল্পতার কারণে কাজের অগ্রগতি হয়নি। শনিবার ওই বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর রোববার দুপুরে ঘটনাস্থলে এলে লাঞ্ছিত হন ঠিকাদার কামরুজ্জামান মণ্টু ও তার সহযোগি আজিজুর রহমান। একপর্যায়ে তিনি সোমবার কাজ করার কথা দিলেও কথা রাখেননি। সে কারণে বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে ওই বাঁধ মঙ্গলবার সকাল থেকে সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এদিকে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে জেলায় ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে ,সদর,তালা,কলারোয়া,ও আশাশুনি উপজেলার ৩৪৪টি গ্রাম প্ল¬াবিত হয়েছে। এতে দু’ লাখ ৭২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার পরিবার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী আবদুল মান্নান জানান, সাত উপজেলায় এক হাজার ১৬৫ হেক্টরের আমন বীজতলা, এক হাজার ৩০৯ হেক্টর আমন,৯২৫ হেক্টর আউশ,২৭৩ হেক্টরের সবজি ও ১০ হেক্টরের পান নষ্ট হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, জেলায় ৪৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমির চিংড়ি,সাদা মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে।

পাউবোর বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ জানান, শ্যামনগর ও আশাশুনির তিন কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে।পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মালেক বলেন, সদর, তালা ও কলারোয়ার এক কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন বলেন,ভবনের ভেতরে পানি থাকায় তালার ৪০টি ও কলারোয়ার একটি বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে সোমবার থেকে তালা উপজেলার সকল বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, তালার ১০টি ও কলারোয়ার পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পানিবন্দি হয়ে শিক্ষাক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আরো ২০টি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পানির মধ্যে শিক্ষাক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

(আরকে/এএস/আগস্ট ০৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test