E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

পিনাক-৬ ট্রাজেডির এক বছর, আজো লাকি নিখোঁজ

২০১৫ আগস্ট ০৪ ১৭:২০:১৪
পিনাক-৬ ট্রাজেডির এক বছর, আজো লাকি নিখোঁজ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : আজ ৪ আগষ্ট। এক বছর পেরিয়ে গেছে পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবি ট্রাজেডির। সেদিন তিন শতাধিক যাত্রীর মাত্র কয়েকজন জীবন বাঁচাতে পারলেও বেশীর ভাগেরই হয়েছিল সলিল সমাধি।

যাদের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল তাদের স্বজনেরা তবুও কিছুটা শান্তনা পেয়েছিল নিজ হাতে প্রিয়জনের দাফন করতে পেরে। আর যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের পরিবারগুলোতে এখনো কান্না থামেনি। তারা মিথ্যে বিশ্বাস নিয়ে এখনো পথ চেয়ে অপেক্ষা করে তাদের নাড়ি ছেরা বুকের মানিক কখন যেন ফিরে আসে। এমনিভাবে এখনো পথের পানে দৃষ্টি ছড়িয়ে দু‘চোখের অশ্রুতে বুক ভাঁসায় শরীয়তপুরের জাজিরার লাকির মা বাবা।

২০১৪ সালের ৪ আগষ্ট পদ্মায় প্রায় তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি। এতে সলিল সমাধি হয় বহু যাত্রীর। দূর্ভাগ্য বরণকৃত সে সকল যাত্রীদের বাড়িতে আজও কান্না থামেনি। লঞ্চে ওঠার কথা শুনলেই তাদের শরীর শিহরিয়া উঠে, আজো তারা শোকে বিহবল। লঞ্চ ডুবির ১ বছর পেরিয়ে গেলও দোষীদের কোন বিচার হয়নি। ওই লঞ্চ ডুবির ঘটনায় আজো নিখোঁজ রয়েছে শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পশ্চিম ছাব্বিশ পাড়া গ্রামের আলহাজ আব্দুল জাব্বার সরদার এর মেডিকেল পড়–য়া মেয়ে জান্নাতুল নাঈম লাকি। গত বছর ঐ দিন ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরছিলেন দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ। ধারন ক্ষতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রি নিয়ে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চটি কাঠালবাড়ি ঘাট থেকে শরীয়তপুরের কিছু যাত্রী তুলে নেয়।

পথিমধ্যে পদ্মানদীর মাঝ পথে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায় পৌছানোর পর অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইর কারনে পদ্মার প্রবল স্রোত আর ঢেউতে লঞ্চটি ৩ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। এ সময় কিছু লোক সাতরে তীরে উঠতে পারলেও বহু সম্ভাবনাময়ী জীবনের সলিল সমাধি হয় পদ্মায় । সরকারি ভাবে ৪৯ জন আর বেসরকারী ভাবে ৮৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ রয়ে যায় দেড় শতাধিক লোক। যাদের সন্ধান আজো মিলেনি।

সেদিন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের পশ্চিম ছাব্বিশপাড়া গ্রামের ঢাকার ব্যবসায়ী আলহাজ আবদুল জব্বারের মেয়ে জান্নাতুল নাইম লাকি মাদারীপুর থেকে তার খালাতো বোন নুসরাত জাহান হিরা ও ফাতেমাতুজ জোহরা স্বর্নার সাথে ঐ লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছিল। লাকি চীনের জোয়াংজো শহরের চেংচো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী ছিল। ঈদের ছুটিতে সে দেশে এসেছিল বাবা মায়ের সাথে ঈদ করতে।

মঙ্গলবার লাকিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বিষাদের ছায়া। বাবা মা মেয়েকে হারিয়ে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে গেছেন । আর বাড়ি ফিরেননি। তাদের কাছে পদ্মানদী যেন এক ভয়ংকর পথ। ৪ আগষ্ট শোকের দিন। স্বজন হারানোর দিন। তারা আজও সন্তান হারানো ব্যাথা ভুলেনি। যতদিন তারা বেচে থাকবেন কখনো ভুলবেন না এ দিনটিকে। তারা চোখের জলে বুক ভাসিয়ে শুধু একটাই আক্ষেপ আর আহাজারি করছে, যদি লাকির মরদেহটি পাওয়া যেত তাহলে বাড়িতে দাফন করে অন্তত ওর কবরটি মাঝে মাঝে জিয়ারত করা যেত। কিন্তু সেই ভাগ্যও হলো না হতভাগা মা বাবার।

লাকির বাবা আলহাজ আব্দুল জব্বার সরদার ও মা পারভিন আকতারের সাথে ঢাকায় বারাবার চেষ্টা করেও মুঠোফোনে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

লাকির চাচা আব্দুর রহিম সরদার বলেন, আমরা আজো লাকির অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকি। গত এক বছরে প্রতিটি দিনই আমরা কাটিয়েছি ৪ আগষ্টের মতো। এখনো মনে হয় লাকির খবর নিয়ে কেউ বুঝি এলো। আমরা গত বছর লঞ্চ ডুবির ৩ দিন পরেও লাকির মরদেহ পাওয়া গেছে এমন খবর শুনে বাড়িতে কবর খুড়ে অপেক্ষা করছিলাম। যেখানেই শুনেছি কোন মেয়ে মানুষের লাশ ভেসে উঠেছে সেখানেই ছুটে গিয়েছি। কিন্তুর লাকির সন্ধান আজো পাইনি। গত এক বছরে আমার ভাই ভাবি একটি রাতও ঠিকভাবে ঘুমোতে পারেনি।

(কেএনআই/এএস/আগস্ট ০৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test