E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাগুরায় আ'লীগের দু’গ্রুপের পাল্টাপাল্টি মিছিল-সমাবেশ

২০১৫ আগস্ট ১১ ১৫:৫৯:৩৮
মাগুরায় আ'লীগের দু’গ্রুপের পাল্টাপাল্টি মিছিল-সমাবেশ

মাগুরা প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব (এপিএস-২) সাইফুজ্জামান শিখর এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারকে নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার পাল্টা মিছিল সমাবেশ করে আ.লীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। রণপ্রস্তুতি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে দুই গ্রুপ। এতে বড় ধরণের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ লোকজন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

জানা গেছে, সোমবার একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় ‘মাগুরায় খুনোখুনির পেছনে শিখর বীরেনের দ্বন্দ্ব’- শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বীরেন শিকদার শিখরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদে ওই দিন বিকেলে উপজেলা ছাত্রলীগ প্রতিবাদ মিছিল ও সামবেশ করে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মো. ঈদুল শেখ, যুগ্ম আহবায়ক নূরুজ্জামান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শামছুর রহমান। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রথম আলোর কয়েকটি কপিতে অগ্নি সংযোগ করেন।

এই ঘটনার জেরে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বীরেন শিকদার গ্রুপের নেতা কর্মী সমর্থকেরা উপজেলা পরিষদের মধ্যে জমায়েত হতে থাকে। অন্যদিকে শিখর গ্রুপের নেতাকর্মীরা হাসপাতালের সামনের সড়কে জমায়েত হয়। বীরেন গ্রুপের লোকজন মিছিল নিয়ে হাসপাতালের দিকে অগ্রর হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মিছিলটি হাসপাতাল এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে আসলে শেখর গ্রুপের নেতাকর্মী সমর্থকেরা অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ এসময় বীরেন শিকদারের সমর্থকদের মিছিল ফিরিয়ে দিলে তারা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সমাবেশ করে। মিছিল থেকে সাইফুজ্জামান শিখরের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন তারা।

অন্যদিকে শিখরের সমর্থকরা মছিল নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশের সাথে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। মিছিল ফিরে গিয়ে তারা হাসপাতাল এলাকার সড়কের তিন রাস্তার মোড়ে সমাবেশ করে। মিছিল থেকে বীরেন শিকদারের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দেন তারা।

বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত সমাবেশে বীরেন শিকদারের সমর্থক উপজেলা আ.লীগের সভাপতি গোলাম রব্বানী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, কোরবান আলী ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বিপ্লব রেজা বিকো বক্তব্য দেন। বক্তারা মন্ত্রীর উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার জন্য শিখর গ্রুপ ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ তোলেন।

একই সময়ে হাসপাতাল এলাকার সড়কের তিন রাস্তার মোড়ে সমাবেশ করেন শিখর গ্রুপের নেতাকর্মী। এখানে বক্তব্য দেন উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, মফিজুর রহমান মোস্তফা সিদ্দিকী লিটন, তরিকুল ইসলাম তারা গোলজার রহমান, শামসুর রহমান ও ঈদুল শেখ। বক্তারা বীরেন শিকদারকে অপরাজনীতি বন্ধ করে সংবাদপত্রে দেওয়া তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আহবান জানান।

আ.লীগের দুই নেতার নেতা কর্মী ও সমর্থকদের মধ্য রণপ্রস্তুতির জন্য এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। উপজেলা শহরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই ঘটনায় সাধারণ লোকজন ও ব্যবসায়িরা চরম আতঙ্কে আছেন। ঘটনার পর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

মহম্মদপুর বাহজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কমলেশ চন্দ্র সাহা জানা, একটি রাজনৈতিক দলের দুই গ্র্রুপের মধ্যে উত্তেজনার কারণে ব্যবসায়িরা আতঙ্কে আছেন। তারা শন্তিতে ব্যবসা করতে চান বলে জানান।

মহম্মদপুর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি গোলাম রব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আব্দুল মান্নান এই ঘটনায় পরস্পরকে দায়ি করেছেন।

মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আতিয়ার রহমান বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার কারণে পুলিশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। পুলিশের সঠিক পদক্ষেপের কারণে বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শিখর গ্রুপ এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। ফলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং গত ২১ জুলাই অনুষ্ঠিত মাগুরা সদর উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্তঃকোন্দল ও সংঘর্ষ প্রকট আকার ধারণ করেছে।

গত ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়ের কারিগরপাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ভূঁইয়া ও ছাত্রলীগের কর্মী আজিবর শেখ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাকি ইমামের চাচা মোমিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনায় আট মাসের নাজমা বেগম ও তার পেটের সন্তান গুলিবিদ্ধ হন। তারা দুজনই এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎধীন রয়েছেন।

(ডিসি/এলপিবি/আগস্ট ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test