E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই আন্ডারগ্রাউন্ডে জামায়াত!

২০১৪ মে ২২ ১২:৪৮:২৩
নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই আন্ডারগ্রাউন্ডে জামায়াত!

স্টাফ রিপোর্টার : অজ্ঞাত স্থান থেকে নিয়মিত মিডিয়ায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হচ্ছে, মোবাইল, ই-মেইল আর ফেসবুকের মাধ্যমে নিয়মিত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা- এভাবেই চলছে দলটি। বন্ধ মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

বন্ধ পল্টনের মহানগর ও শিবিরের কেন্দ্রীয়সহ দেশব্যাপী সব কার্যালয়। এ অবস্থায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, কোনো পথে যাচ্ছে জামায়াত? সংশ্লিষ্ট নেতাদের ভাষ্য হলো- পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড থেকেই পরিচালিত হবে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি। যথাসম্ভব চলবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড।

বিএনপি জোটের শরিক এই জামায়াতে ইসলামী এখন এক মহাসংকটকাল অতিক্রম করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই সর্বোচ্চ বিপদের মধ্যে রয়েছে তারা। আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা না হলেও তার চেয়েও কঠোর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন এখন জামায়াত নেতা-কর্মীরা।

দলের নিবন্ধন বাতিলের আশঙ্কা, একের পর এক শীর্ষ নেতার ফাঁসি বা যাবজ্জীবন দণ্ডের রায়, এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিপদ অক্টোপাশের মতো ঘিরে ধরেছে জামায়াতকে।

২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের পর মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সব কার্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সব ধরনের যাতায়াত। কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। হাতে গোনা দুই-একটিতে তদারকি করে যাচ্ছেন কর্মচারীরা। নেতা-কর্মীরা কদাচিৎ কোনো অফিসে গেলেও গোপন বৈঠকের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর ফলে দলীয় অস্তিত্ব বজায় রাখতেই তারা এখন বাসা, অফিস, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। গোপন স্থান থেকে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি, বিবৃতি পাঠাচ্ছেন। একাধিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে দল চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ। তবে এই ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে আর যেন চলছে না দলের কার্যক্রম। মামলার কারণে প্রায় সব নেতা-কর্মী আত্দগোপনে; চরম নেতৃত্বের সংকট।

উপজেলা পরিষদে ভালো ফলাফল করলেও সেই ফল ভোগ করতে পারছে না দলীয় নেতা-কর্মীরা। সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচিত ৩৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ১২২ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে ১৬ জন চেয়ারম্যান ও ১৬ জন ভাইস চেয়ারম্যানকে ইতিমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকিরাও রয়েছেন হয় পলাতক, না হয় গ্রেফতারের আশঙ্কায়। সব মিলিয়ে রীতিমতো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে জামায়াত। জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট মামলার রায় হাইকোর্টে অপেক্ষমাণ। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি রায়ে অপরাধী দল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হচ্ছে। জামায়াতের তৃণমূল নেতারাও আশঙ্কা করছেন, সরকার জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে। নিষিদ্ধ হলে আইএলপি নামে নতুন নামে জামায়াতর আত্দপ্রকাশ ঘটতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা বলেন, এখন দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মীর বাসা আর ব্যবসায়িক কার্যালয়ই জামায়াতের অফিস। তিনি বলেন, জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশে সাংবিধানিক পন্থায় রাজনীতি করছে। দেশের সংবিধান ও আইন অনুসরণ করেই নির্বাচন কমিশন জামায়াতকে নিবন্ধন দিয়েছে। এরই মধ্যে জামায়াত গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছে। আমরা আশাবাদী মহামান্য আদালতের কাছে ন্যায়বিচার পাব। তিনি বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড থেকেই চলবে জামায়াতের রাজনীতি। তিনি বলেন, লন্ডনে অবস্থানরত দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও দলের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা গত মাসে দুইবার বৈঠক করেছেন জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার জন্য।

জামায়াতকে শর্ত দেওয়া হয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির সঙ্গে জোট ত্যাগ করতে হবে। মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে জামায়াতকে পৃথকভাবে অংশ নিতে হবে। বিনিময়ে আটক জামায়াত নেতাদের মুক্ত করা হবে। কিন্তু ব্যারিস্টার রাজ্জাক এতে রাজি হননি। আর এ কারণেই ব্যারিস্টার রাজ্জাক যেমন দেশে ফিরতে পারছেন না, তেমনি দেশব্যাপী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত, আহত, গুম, খুন, রাজনৈতিক মামলা-সংক্রান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী চলতি বছরের ৭ মে পর্যন্ত ২৩৩ জন নিহত হয়েছে। এ জন্য পুলিশ ও র্যাবকে দায়ী করা হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের ৬০ হাজার ৪৭১ জন নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ জামিনে মুক্তি পেলেও তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গুম ও খুন আতঙ্ক। তিন শতাধিক নেতা-কর্মী বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সারা দেশে প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জামায়াতের ২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ১২ জন রয়েছেন কারাগারে, সাতজন বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে আত্দগোপনে। বাকি দুজনের একজন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার মামলায় জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তিনি আইনি বিষয়াদি ছাড়া দলীয় অন্য কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন। তিনিও চার মাস ধরে লন্ডনে। গ্রেফতারের আশঙ্কায় দেশে ফিরতে পারছেন না। অন্যজন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাছের মোহাম্মদ আবদুজ জাহের, তিনিও দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রয়েছেন।

(ওএস/এটিঅার/মে ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test