E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরে ২ ছাত্রী হত্যার বিচার দাবি

২০১৫ আগস্ট ১৪ ১৮:০৯:৩৭
মাদারীপুরে ২ ছাত্রী হত্যার বিচার দাবি

মাদারীপুর প্রতিনিধি : অনেক অত্যাচার করে, অনেক কষ্ট দিয়ে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমার এক সুমাইয়া মারা গেছে। যদি ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার হয় তাহলে হাজারো সুমাইয়া বেঁচে যাবে। আমি ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যেন আমার সুমাইয়ার মতো কোন মেয়েকে অকালে প্রাণ হারাতে না হয়।

সরকার যেন এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার করে। যেন কোন আইনের ফাক দিয়ে অপরাধীরা বেচে যেতে না পারে। শুক্রবার সকালে মিডিয়াকর্মীদের কাছে এইভাবেই আকুতি জানান নিহত সুমাইয়ার মা আসমা বেগম।

অপর নিহত হ্যাপী আক্তারের মা মুক্তা বেগমও বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। এসময় তিনিও সরকারের কাছে মেয়ে হত্যার বিচার দাবি করেন।

পারিবারিক, স্থানীয়, পুলিশসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর দুই ছাত্রী মস্তফাপুর গ্রামের বেল্লাল শিকদারের মেয়ে সুমাইয়া (১৪) এবং একই গ্রামের হাবিব খানের মেয়ে হ্যাপি আক্তার (১৪) বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়।

এরপরে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ৬ যুবক তাদের অচেতন অবস্থায় মাদারীপুর সদর হাপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসে।

এ সময় ঐ যুবকরা চিকিৎসদের জানান, দুই কিশোরী বিষপান করেছে। এর কিছুক্ষণপরে হ্যাপি মারা গেলে ওরা পালিয়ে যায়।

হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের সন্দেহ হলে একই গ্রামের কামাল শিকদারের ছেলে রাকিব শিকদার (১৮) ও কুদ্দুস শিকদারের ছেলে শিপন শিকদার (২০) নামের দুই যুবককে আটক করে থানায় দেয়া হয়।

এছাড়াও ঘটনার পর শুক্রবার সকালে পুলিশ ঐ গ্রামের বখাটে যুবক রানার মা সালমা বেগম এবং একই গ্রামের ফজলুল কবিরের ছেলে বখাটে মেহেদির মা রহিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে সদর থানার পুলিশ।

ঘটনার পর থেকেই মেহেদি ও রানাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা পলাতক আছে।
আরো জানা যায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করে বলা হয়নি দুই স্কুল ছাত্রীর নিহতের কারণ। তবে পুলিশ প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে ধারণা করছে, ত্রিভূজ প্রেমের কারণে এই নিহতের ঘটনা ঘটতে পারে।

যদিও উভয় পরিবারের পক্ষ হতে দাবি করা হচ্ছে, ধর্ষণের পরেই জোর করে বিষপানে হত্যা করা হয় দুই স্কুল ছাত্রীকে।

এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেছে পুলিশ, সিআইডিসহ একাধিক টিম।

অপরদিকে নিহতের ঘটনার বৃহস্পতিবার ঘটলেও শুক্রবার সকাল থেকে গ্রামবাসী ও সহপাঠিরা নিহতদের বাড়িতে ভিড় করছে। এসময় তারা এই জোড়া ছাত্রী হত্যার বিচারের দাবি জানান।

নিহত হ্যাপির চাচী কেয়া বেগম বলেন, হ্যাপি খুবই শান্ত প্রকৃতির মেয়ে ছিলো। এভাবে ওকে হারাতে হবে কখনও ভাবিনি। এই হত্যার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। যাতে করে এমন ঘটনা আর না ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মস্তফাপুর বাজারের দর্জি দোকানদার সূর্য বেগম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আমি দোকানে এসে চিৎকারের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি দুইটি ছেলে দুটি মেয়েকে অচেতন অবস্থায় কোলে তুলে ভ্যানে নিয়ে যাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী আরেক দোকানদার জাহাঙ্গীর গাছি জানান, বিকেলে আমি দেখি দুইটি ছেলে দুটি অসুস্থ মেয়েকে ভ্যানে গাড়িতে তুলে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
মাদারীপুর সদর থানার সেকেন্ড অফিসার ফায়েকুজ্জামান জানান, ধারণা করা হচ্ছে একই গ্রামের রানা নামের এক ছেলের সাথে নিহত দুই স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া ও হ্যাপীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরই জের ধরে এই ঘটনা ঘটতে পারে।

তিনি আরো জানান, মস্তফাপুর গ্রামের সৈকত খলিফার ছেলে রানার সাথে দুই বান্ধবীর দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে আমাদের কাছে ত্রিভূজ প্রেমের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসা যুবকই হচ্ছে মেহেদি ও রানা। বৃহস্পতিবার আটক করা শিপন ও রাকিব জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মেহেদি ও রানা নিহত দুই স্কুল ছাত্রীকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে দেখে তারা হাসপাতালে আসে।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম রাজিব জানান, ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

এসময় তিনি আরো বলেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ঐ দুই কিশোরীর পাকস্থলী, কিডনি ও যকৃতের কিছু অংশ সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আগামী রবিবার বা সোমবার রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তাছাড়া সুমাইয়া আক্তারের গলা, হাতের কবজির ওপর, পেটে ও দুই পায়ের পাতায় জখম পাওয়া গেছে। হ্যাপি আক্তারের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রেম ঘটিত কারণে দুই কিশোরী আত্মহত্যা করতে পারে।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে। যাতে কোন নিরহ ব্যক্তি হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

শুক্রবার বিকেলে নিহত সুমাইয়ার পিতা বেল্লাল শিকদার বাদী হয়ে রাণা ও মেহেদীকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের নামে মাদারীপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

(এএসএ/এএস/আগস্ট ১৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test