E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় স্কুলের ২ কোটি টাকার সম্পদ নিজ নামে রেকর্ড

২০১৫ আগস্ট ১৫ ১৪:৫৬:৩২
আগৈলঝাড়ায় স্কুলের ২ কোটি টাকার সম্পদ নিজ নামে রেকর্ড

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি :বিদ্যালয় আছে, জনবল কাঠামো আছে, কিন্তু বিদ্যালয়ের জায়গা নেই ! এমন ঘটনাই ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নামের ২ একর ৯ শতক জমি আত্মসাতের প্রমান পাওয়া গেছে। এছাড়াও রয়েছে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ।

ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের বড় বাশাইল নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক বিদ্যালয়ের সম্পত্তি আত্মসাতের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।

প্রেসক্লাব বরাবরে লিখিত অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বড় বাশাইল গ্রামের রজনী কান্ত ঘটকের ছেলে দ্বীজেন্দ্র নাথ ঘটক ও তার সহোদর বেনী মাধব ঘটক ১৮ মে ১৯৮৫ সালে আগৈলঝাড়া সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে ৩০৪ নং নিরূপন দলীল মুলে জেএল ২৩ নং বড় বাশাইল মৌজায় ৪৫৩ ও ৪৫৫ নং খতিয়ানে ৫৫৩/২০১৬/৬৮৫/৬৮৭ দাগে এক একর সম্পত্তি স্কুলের নামে লিখে দেন।

পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে স্থানীয়দের সহায়তায় গড়ে ওঠে বাশাইল নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ দখল করেন প্রতিষ্ঠাতা দাবিদার দীজেন্দ্র নাথ ঘটকের ছেলে ও রাজিহার ইউনিয়ন বিএনপি সহ-সভাপতি দিলীপ কুমার ঘটক। নিজে পদ দখল করে সহকারী শিক্ষক পদে বসান তার স্ত্রী মালা রাণীকে। ২০১০ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। স্কুলের জমি আত্মসাতের সুদুর প্রসারী চিন্তায় দীর্ঘ দিনেও দিলীপ ঘটক ওই জমি প্রতিষ্ঠানের নামে নাম জারি করাননি।

প্রধান শিক্ষক দিলীপের কাকাতো ভাই শ্যামল ঘটকসহ ওই গ্রামের বিবেক গাইন, ধীরেন জয়ধর, বিবেকানন্দ বাড়ৈ লিখিত অভিযোগে জানান, প্রধান শিক্ষক হয়েই দিলীপ ঘটক বিদ্যালয়ের জায়গায় পাঠদানের জন্য অবকাঠামো নির্মান না করে কৌশলে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় অবকাঠামো নির্মান করেন। এসময় স্কুলের অবকাঠামো নির্মানের নামে স্কুলের বিভিন্ন প্রজাতির ৫ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করে আত্মসাৎ করেন তিনি।

অভিযোগে জানা গেছে, প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা হিসেবে স্কুল পুকুর লিজের মাধ্যমে গত ৩০ বছর যাবত ১৫ লাখ টাকা আত্মসাত করেন প্রধান শিক্ষক দিলীপ। এছাড়াও স্কুলের জমিতে সরকারী অর্থায়নে পুকুর খননের নামে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক দিলীপ তার অনুগত লোকজন নিয়ে পকেট কমিটি করে স্কুল পরিচালনার মাধ্যমে নিজের সকল অপকর্মকে বৈধতা দিয়ে আসছেন।

এত কিছুর পরেও প্রধান শিক্ষক দিলীপ ঘটক চলতি ভূমি জরিপে বাশাইল নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামে একটুও জায়গা রেকর্ড না করে প্রতিষ্ঠানের ২ একর ৯ শতক জমি সেটেলমেন্ট অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় গোপনে প্রধান শিক্ষক ও বিএনপি নেতা দিলীপ ঘটক ও তার বড় ভাই ঢাকায় কর্মরত এ্যাডভোকেট সুধীর রঞ্জন ঘঠকের নামে হাল ২০৬, ২১৬, ২১১৩ খতিয়াসহ অন্যান্য খতিয়ানে রেকর্ড করিয়ে নেয়। রেকর্ড নেয়া ওই জমির আনুমানিক মূল্য দু’কোটি টাকার উপরে। এঘটনা জানাজানি হলে ওই স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জমিদাতা দ্বীজেন্দ্র নাথ ঘটক ও তার সহোদর বেনী মাধব ঘটক ১৯৮৫ সালে স্কুলের ৩০৪নং নিরূপন দলীল মুলে ৪৫৩ ও ৪৫৫ নং খতিয়ানে ৫৫৩/২০১৬ ও ৬৮৫ দাগে যে ১একর সম্পত্তি স্কুলের নামে লিখে দেন তার আগেই ওই জমি থেকে ৭৬ শতক জমি পূর্বেই বিক্রি করেছিলেন। প্রতারনার মাধ্যমে তারা ওই জমি স্কুলের নামে লিখে দেন।
সেই দলীলের মালিকানা হিসেবে একই এলাকার সুরেন্দ্র নাথ হালদারের ছেলে মঙ্গল চন্দ্র হালদার ও মাধব চন্দ্র হালদার, রাখাল হালদারের ছেলে মধুসুদন হালদার, চাঁন মোহন হালদারের ছেলে রবীন্দ্র নাথ হালদার, সুকুমার হালদারের ছেলে সুধীর রঞ্জন হালদার, গোবিন্দ চন্দ্র হালদারের ছেলে কৃষ্ণ কান্ত হালদার, বলরাম হালদার, সুনীল হালদার, অশ্বিনী কুমার গাইনের ছেলে পুলিন কুমার গাইন, কাশীরাম গাইনের ছেলে অতুল চন্দ্র গাইন ও বিবেক গাইন, প্রিয় লাল গাইনের ছেলে পরিমল চন্দ্র গাইন,পূর্ন চন্দ্র গাইনের ছেলে অটল চন্দ্র গাইন, পাঁচকড়ি হালদারের ছেলে লক্ষণ চন্দ্র হালদার, যজ্ঞেশ্বর হালদারের ছেলে জিতেন ও বিশ্বনাথ হালদার এবং কথিত প্রতিষ্ঠাতার পিতা রজনী কান্ত ঘটকের ছেলে বেনী মাধব ঘটক ও সত্যেন্দ্র নাথ ঘটকের নামে পৃথকভাবে হাল জরিপে খতিয়ানভুক্ত রেকর্ড করে নেয়।

প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ব্যক্তিনামে রেকর্ড দেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে ওই ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেননের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মো. সিরাজুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক দিলীপ ঘটক জায়গা রেকর্ড করে নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিশেষ একটি কারনে স্কুলের সম্পত্তি রক্ষার জন্যই আমার নিজের নামে রেকর্ড করিয়েছি। তবে ওই বিশেষ কারণ তিনি বলেননি।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আশুতোষ বলেন, এবিষয়ে তিনি কিছুই জানেননা। স্কুলে কোন মিটিং হয়না। প্রধান শিক্ষক পিওন দিয়ে রেজুলেশন খাতা বাড়ি পাঠিায়, আমি স্বাক্ষর করে দেই।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা একাডেমীক সুপারভাইজার সেলিম আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।


(টিবি/এসসি/আগষ্ট ১৫,২০১৫)


পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test