E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় ৫’শ ২১ বছরের পূজা

২০১৫ আগস্ট ১৭ ১৮:১৬:১০
আগৈলঝাড়ায় ৫’শ ২১ বছরের পূজা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি(বরিশাল):মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যর অমর কবি ও অমর কাব্য মনসা মঙ্গঁল এর রচয়িতা বিজয় গুপ্তের প্রতিষ্ঠিত মনসাকুন্ড  নামে খ্যাত বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত পাঁচ’শ ২১ বছরের পুরোনো মনসা মন্দিরের বাৎসরিক পূজা মহা আড়ম্বড়ের মধ্য দিয়ে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে।  ৫শ ২১ বছর আগে থেকে বাংলা শ্রাবন মাসের শেষ দিনে প্রতি বছর এ পূঁজা মন্ডপে পূঁজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

পূজার আগে গত বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার চারদিন ব্যাপি মন্দির আঙ্গিনায় রয়ানি গান অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজায় সরকারের যুব ও ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

ঐতিহাসিক মতে, মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি বিজয় গুপ্ত “বিষহরি” (বিষ হরণকারী) মনসা দেবীর স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে নিজ বাড়ির দীঘিতে স্বপ্নে পাওয়া পূঁজার ঘট পেয়ে গৈলা গ্রামের নিজ বাড়িতে বিজয় গুপ্ত ৫’শ ২১ বছর পূর্বে মা মনসার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং পাশ্ববর্তি বকুল গাছের নিচে বসে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়েই তিনি মনসা মঙ্গল রচনা করেছিলেন। দেবী তাকে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে বলেছিলেন “ তুই নাম চাস না কাজ চাস ?” উত্তরে বিজয় গুপ্ত বলেছিলেন “ আমি নাম চাই” সেই থেকে অদ্যাবধি ওই মন্দিরে ব্যপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে প্রতি বছর শ্রাবনের সংক্রান্তি তিথীতে বাৎসরিক পূঁজা উদ্যাপিত হয়ে আসছে।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সুলতান হোসেন শাহ্র রাজত্বকালে ইংরেজী ১৪৯৪ সনে বিজয় গুপ্ত মনসা মঙ্গঁল রচনা করে সুলতানের দরবারে “মহাকবি”র খেতাবে অধিষ্টিত হন। কারণ বিজয় গুপ্তই সর্ব প্রথম ইংরেজী তারিখ ও সন তার কাব্যে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এর আগেও একাধিক পন্ডিত মনসা মঙ্গল রচনা করেছিলেন। যারমধ্যে অন্যতম হলেন ময়মনসিং এর কানা হরি দত্ত। কিন্তু তাদের তুলনায় বিজয়গুপ্তর কাব্য নিরস হলেও ইংরেজী সন, তারিখ লিব্বিদ্ধ করার কারণে তিনিই হয়ে ওঠেন মনসা মঙ্গল কাব্য রচয়িতাদের অন্যতম। মহা কবি খেতাব পাওয়ার পর ভারত বর্ষে মনসা দেবীর মহা ধুমধামে পূঁজার প্রচলন ঘটে। মহাকবি বিজয় গুপ্তের পিতার নাম সনাতন গুপ্ত ও মাতার নাম রুক্সিনী দেবী।

কবি বিজয় গুপ্ত স্মৃতি রক্ষা, মনসা মন্দির সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তারক চন্দ্র দে ও গৈলা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান দুলাল দাস গুপ্ত জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক সেনারা বিজয় গুপ্তের মন্দির থেকে মনসা দেবীর বিগ্রহ চুরি করে নেয়ার পর ২০০৮ সনে ঢাকাস্থ সনাতন ধর্মের সম্প্রদায়, বিদেশে অবস্থানরত ভক্তবৃন্দদের আর্থিক অনুদানে পিতলের তৈরি মনসা দেবীর প্রতিমা পুঃণ স্থাপন করা হয়। এরপর হাতে নেয় হয় পুরানো মন্দির সংস্কারের কাজ। যার উন্নয়ন কাজ এখনও চলছে। এ বছর মা মনসার মন্দিরের বাৎসরিক পূঁজা উপলক্ষে পূঁজা অর্চনা, ছাগ বলিদান, ভোগের প্রসাদ বিতরণ করা হবে।
পূঁজা অনুষ্ঠানে একটি বাক্য উচ্চারিত হয়, তা হল; “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”-এ বাক্যকে ধারন করে জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে বাৎসরিক পূঁজায় দেশ-বিদেশের ভক্তবৃন্দদের সমাগম ঘটেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পূঁজা উপলক্ষে মানত দিতে দেশ-বিদেশের হাজার-হাজার ভক্তবৃন্দ পূজার্ঘ্য নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। নিরাপত্তা ও শৃংখলার জন্য মন্দির ও পূঁজা কমিটির নিজস্ব কর্মীর পাশাপাশি থানা পুলিশও ব্যাপক ভুমিকা পালন করেছে।


(কেএনআই/এসসি/আগষ্ট ১৭,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test