E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবশেষে আপন ঠিকানায় ফিরল মাতৃগর্ভে  গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া

২০১৫ আগস্ট ২১ ১৩:৫৪:৩২
অবশেষে আপন ঠিকানায় ফিরল মাতৃগর্ভে  গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া

মাগুরা প্রতিনিধি : অবশেষে সুস্থ্য হয়ে মায়ের কোলে চড়েই আপন ঠিকানায় ফিরল মাগুরায় মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ শিশু সুরাইয়া। পিঠে গুলির ক্ষত নিয়ে ২৬ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  চিকিৎসা শেষে  বৃহস্পতিবার রাত এগারোটার দিকে শহরতলীর দরি মাগুরার পৈত্রিক নিবাসে ফেরে সে ও তার মা নাজমা বেগম।

শিশুটি বাড়ি ফেরার খবর শুনে সংবাদ কর্মীসহ বাড়তে থাকে উৎসুক জনতার ভীড়। তাকে এক নজর দেখতে রাতের আঁধারেই শত শত নারী পুরুষ তার বাড়িতে ভীড় করে। এ সময় তাকে দেখতে সুরাইয়ার বাড়ির সামনে জড়ো হন জেলা প্রশাাসক মুহঃ মাহাবুবর রহমান, পুলিশ সুপার এ কে এম এহসান উল্লাহ, তার প্রথম চিকিৎসর ডা. শফিউর রহমানসহ শত শত মানুষ। ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি এম্বুলেন্সে তাকে করে তাকে আনা হয়। বাড়ির সামনে নেমে শিশুটিকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢোকার সময় উৎসুক জনতা ভীড় করে। এ সময় শিশুটিকে তার দাদী দুলালী বেগমের হাতে তুলে দিলে সেখানে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

মৃত্যুকে পরাজিত করে গুলিবিদ্ধ মা-মেয়ের নতুন জীবন নিয়ে বাড়ি ফেরার এক আবেগতাড়িত হয়ে অনেকেরই চোখে পানি এসে যায়। সর্বত্র পিনপতন নীরবতা তৈরি হয়।

দীর্ঘ দিনের অসুস্থতার ধকল আর ভ্রমনের ক্লান্তি নাজমা বেগমের চোখে মুখে স্পষ্ট। সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া ও মা নাজমা বেগম উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কান্না জড়িত কন্ঠে জানান,‘আমি কোনো দিন ভাবতে পারিনি মেয়েকে ফিরিয়ে বাড়ি আনতে পারব। আপনাদের জন্যি দোয়া করি। নাজমা তাকে ও তার শিশুকে নানাভাবে সাহায্য করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রীবর্গ, প্রশাসন, চিকিৎসক, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।

মাগুরা জেলা প্রশাসক মুহঃ মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘ সুস্থ হয়ে সুরাইয়া ফিরে আসায় দেশবাসীর সাথে আমরাও স্বস্তি ফিরে পেলাম। এই ধরনের ঘটনার পূনরাবৃত্তিরোধে সবাইকে সজাগ থাকার আহবান জানান তিনি।’

মাগুরার পুলিশ সুপার এ কে এম এহসান উল্লাহ বলেন,‘ পরিবারটির নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। ’

২৩ জুলাই বিকেলে শহরের দোয়ারপাড়ের কারিগরপাড়ায় সরকার দলীয় সমর্থক আজিবর ও মুহম্মদ আলী গ্রুপের সাথে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ভূইয়া গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এসময় প্রতিপক্ষ গ্রুপের গুলিতে কামরুল ভুইয়ার চাচা আব্দুল মোমিন ভূঁইয়া, কামরুলের বড় ভাই বাচ্চু ভুইয়ার স্ত্রী অন্তঃস্বত্ত্বা নাজমা বেগম ও প্রতিবেশী মিরাজ হোসেন নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ ও বোমায় আহত হন। পরদিন শুক্রবার (২৪ জুলাই) গভীর রাতে আব্দুল মোমিন হাসপাতালে মারা যান।

চার ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারের পর নাজমা বেগম (৩৫) নামের ওই গৃহবধূ শুক্রবার রাতে (২৪ জুলাই) একটি কন্যাশিশুর জন্ম দেন।

গুলিবিদ্ধ গৃহবধূ ও নবজাতক দুজনেরই অবস্থার অবনতি হলে দুদিন পর মাকে রেখেই শিশুটিকে নিয়ে তার দুই ফুফু (২৬ জুলাই) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌছায়। শিশুটির পিঠ দিয়ে গুলি ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে শিশুটির অস্ত্রোপচার হয়।
অবস্থার উন্নতি হওয়ার পর গত ৪ অগাস্ট মেয়ের নাম সুরাইয়া রাখার কথা জানান বাবা বাচ্চু ভূইয়া। নিবিড় পরিচর্যায় প্রায় এক মাস পর ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে শিশুটি।

নাজমা সন্তানকে প্রথমবারের মত কাছে পান ঘটনার ১২ দিন পর, গত ৫ অগাস্ট। আর গত রোববার (১৬ আগস্ট) সুরাইয়াকে আইসিইউ থেকে বের করে মায়ের সঙ্গে কেবিনে থাকার সুযোগ দেন চিকিৎসকরা। হাজারো মানুষের ভালোবাসায় সুরাইয়া সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসায় দেশবাসীর সাথে খুশি মাগুরাবাসীও।

এ ঘটনায় নিহত মমিন ভূঁইয়ার ছেলে রুবেল ভূঁইয়া গত ২৬ জুলাই মোট ১৬ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার প্রধান আসামী জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সেন সুমনসহ ৯ আসামী পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। গত সোমবার (১৭ আগস্ট) গভীর রাতে এজাহারের ৩ নম্বর আসামী মেহেদী হাসান ওরফে আজিবর শেখ পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। সে পৌর ছাত্র লীগের বিলুপ্ত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিল। ঘটনাস্থল থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুটি গুলি উদ্ধার করে পুলিশ।


(ডিসি/এসসি/আগষ্ট২১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test