E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুর শহরে অসহনীয় যানজট

২০১৫ আগস্ট ২২ ১২:৩৮:৫৯
দিনাজপুর শহরে অসহনীয় যানজট

দিনাজপুর প্রতিনিধি :অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারী চালিত অটোবাইক-এর কারনে দিনাজপুর শহর এখন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। শহরের রাস্তা অনুযায়ী ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন অটোবাইকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় তীব্র যানজট। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছে পথচারী ও পৌরবাসী।

পৌরসভা ও ট্রাফিক বিভাগের হিসেব অনুযায়ী, দিনাজপুর শহরে প্রায় ১৫৭ কিলোমিটার পাকা ও আধাপাকা সড়ক। এর মধ্যে পাকা সড়ক রয়েছে-১৩৪ কিলোমিটার, আরসিসি সড়ক-১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং এইচবিবি সড়ক রয়েছে-৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। ট্রাফিক বিভাগের তথ্যমতে এছাড়াও পৌর এলাকায় কাঁচা সড়ক রয়েছে ১৩১ দশমিক ৯০ কিলোমিটার। ট্রাফিক বিভাগের তথ্যমতে এসব সড়কে মোটরকার-৩৪৫টি, জীপ ও স্টেশন ওয়াগন ৪৭৮টি, মাইক্রোবাস-১৯৬টি, বাস ও মিনিবাস-৪৩৫টি, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান-২৪৭টি, ট্রাক ও ট্যাংকলড়ী-১ হাজার ২৮৫টি, টেম্পু-৪৪টি, ট্রাক্টর-২ হাজার ৭১৮টি এবং মোটরসাইকেল চলাচল করে ৪১ হাজার ৩৯টি। দিনাজপুর শহরের এসব রাস্তার প্রস্থ ও পরিমান অনুযায়ী কার, জীপ, মাইক্রোবাস, মিনিবাস, মোটরসাইকেল ও রিক্সা ছাড়াও ৩ হাজার পর্যন্ত ব্যাটারী চালিত অটোবাইক চলাচল করতে পারে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য সুত্রমতে, বর্তমানে দিনাজপুর শহরে ১২ হাজারেরও বেশী ব্যাটারী চালিত অটোবাইক চলাচল করছে। কিন্তু দিনাজপুর অটেবাইক শ্রমিক কল্যান সোসাইটির সভাপতি আমজাদ হোসেন স্বীকার করেন, তাদের হিসেব অনুযায়ী দিনাজপুর শহরে ৭ হাজার অটোবাইক চলাচল করছে।

সম্প্রতি সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রনালয় মহাসড়কে ৩ চাকা বিশিষ্ট অটোবাইক, ভটভটি ও নসিমন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের এই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসন দিনাজপুরের সব মহাসড়কে ৩ চাকা বিশিষ্ট্ এসব যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে মহাসড়কে চলাচলকারী এসব অটোবাইক এখন মহাসড়ক ছেড়ে দিনাজপুর শহরে এসে চলাচল করছে। এতে দিনাজপুর শহরে বর্তমানে ১২ হাজারেরও বেশী অটোবাইক চলাচল করছে।

দিনাজপুর শহরের গোলাপবাগ এলাকার অটোবাইক চালক আকবর হোসেন জানান, যেসব অটোবাইক আগে দশমাইল ও ফুলবাড়ী রূটে চলাচল করতো, সেসব অটেবাইক মহাসড়কে চলাচল করতে না পেরে এখন দিনাজপুর শহরে এসে চলাচল করছে। এতে শহরে কয়েকগুন বেড়েছে অটোবাইকের সংখ্যা।

ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী অটোবাইকের সংখ্যা কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় শহরে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র ও অসহনীয় যানজট। শহরের লিলি মোড় থেকে বাহাদুরবাজার, কোতয়ালী থানা থেকে জেল রোড, মালাদহপট্টি, সদর হাসপাতাল মোড়, কাচারী মোড়, ফুলবাড়ী বাস স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত এসব যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও এসব অনিয়ন্ত্রিত অটোবাইকের চালকরা ট্রাফিক আইন না মেনে চলাচল করায় যানজট আরও তীব্র হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা এসব যানজট থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ছে পথচারী ও সব শ্রেনী পেশার মানুষ। জরুরী কাজে বের হয়েও সময়মতো গন্তব্যস্থলে পৌছতে না পেরে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। যানজটে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরাও। এতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে চরমে। ট্রাফিক আইন না মেনে যত্রতত্রভাবে এসব ব্যাটারী চালিক অটোবাইক চলাচল করে শহরে তীব্র যানজট সুষ্টি করলেও ট্রাফিক বিভাগের কোন পদক্ষেপ লক্ষ্যনীয় হয়নি।

দিনাজপুর শহরের চলাচলকারীরা জানান, অসংখ্য অটোবাইকের কারনে প্রতিনিয়ত অসহনীয় যানজটের শিকার হয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহালেও অজ্ঞাত কারনে পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন নিরব রয়েছে। তারা জানান, শহরের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে এখন যানবাহনের চেয়ে পায়ে হেটে যাওয়াই শ্রেয়। শহরের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে কষ্ট হলেও যানবাহনের চেয়ে পায়ে হেটে গেলেই কম সময় লাগে বলে জানান তারা।

এদিকে দিনাজপুর শহরে ধারন ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন অটোবাইক অনিয়ন্ত্রিভাবে চলাচল করে পৌরবাসীর অসহনীয় দুর্ভোগ সৃষ্টি করলেও অসহায় হয়ে হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ ব্যাপারে কয়েকবার উদ্যোগ নেয়ার পরও কিছুই করতে পারছেন না তিনি। শহরে অটোবাইকের সংখ্যার সুনির্দিষ্ট হিসেবেও দিতে পারেন নি পৌর মেয়র।

পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শহরের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে তিনিসহ সুশীল সমাজের পক্ষে ছিলেন মোঃ তৈয়বউদ্দীন চৌধুরী, ব্যাটারী চালিত অটোবাইক মালিক সমিতির পক্ষে আশরাফুজ্জামান বাবু, দিনাজপুর শিল্প ও বনিক সমিতির পক্ষে আনোয়ারুল ইসলাম, হোটেল রেস্তোরা মালিক সমিতির পক্ষে মাজেদুর রহমান দুলাল, পুলিশ সুপারের পক্ষে টিআই আব্দুস সামাদ এবং সাংবাদিকদের পক্ষে ছিলেন ওয়াহেদুল আলম আর্টিষ্ট।
উল্লেখিত সদস্যদের উপস্থিতিতে গত ৪ ফেব্র“য়ারী অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৪টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিলো-শহরের যানজট নিরসনে ৩ হাজার ব্যাটারী চালিত অটোবাইক চলাচলের অনুমতি, এসব অটোবাইকের ফিটনেস পরীক্ষা করে চালকদের ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি সংরক্ষনসহ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, পৌরসভার অনুমতি ছাড়া অটোবাইক বিক্রি বন্ধ এবং শহরে অটোবাইক তৈরীর কারখানা বন্ধ। এসব সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হলেও অজ্ঞাত কারনে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানান দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র।
পৌর মেয়র জানান, গত ১১ আগষ্টের জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় শহরে ব্যাটারী চালিত অটোবাইক চলাচলের বিষয়টি আলোচনায় আসে। সভায় বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও মেয়রের সমন্বয়ে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়।

এই সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোন কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ্য করেনি পৌরবাসী।
অপরদিকে ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রকাশিত সরকারী এক গেজেটে এসআরও নং-২৪৬ আইন/২০১৪, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ (২০০৯ সালের ৫৮নং) আইন-এর ১০০ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পৌরসভাকে ৩ চাকার এসব বাহনের জন্য ৫০০ টাকা কর আরোপের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু দিনাজপুর পৌর কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারনে এখন পর্যন্ত এসব অটোবাইকের জন্য কর নির্ধারন ও নিয়ন্ত্রনে আনতে পারেন নি। এ বিষয়ে দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ ব্যাপারে বার বার উদ্যোগ নেয়ার চেষ্ঠা করা হলেও তিনি প্রতিবার প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। অনিয়ন্ত্রিত এসব অটেবাইক চলাচলের ফলে শহরবাসী অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হলেও অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিরব রয়েছেন পৌর পিতা।

(এটি/এসসি/আগস্ট২২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test