E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দারিদ্রতাকে দুরে ঠেলে রোজিনার এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন

২০১৫ আগস্ট ২২ ১৮:৪৭:১৯
দারিদ্রতাকে দুরে ঠেলে রোজিনার এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় তাড়াশ মহিলা ডিগ্রী কলেজ থেকে রোজিনা খাতুন দারিদ্রতাকে দুরে ঠেলে দিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।

মেয়ের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত তার হতদরিদ্র ভূমিহীন পিতামাতা। সংসারের অভাব অনটনের মধ্যে থেকে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করানোর মত সাধ্য তাদের নেই। রোজিনা ভবিষৎ জীবনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হবার স্বপ্ন তার অধরাই থেকে যাবে কি? অবশ্য এডুকেশন ফর অল নামে একটি সংগঠন, এসএসসি পাশ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত রোজিনাকে সহযোগিতা করে আসছেন।

তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের নির্ভৃত পল্লী কুসুম্বী গ্রামের ভূমিহীন দিন মুজুর সাইদুর রহমানের একমাত্র কন্যা রোজিনা খাতুন কুসুম্বী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পর বস্তুল ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়। ভর্তির পর থেকে রোজিনা প্রতিদিন ৬ মাইল রাস্তা পায়ে হেঁটে স্কুল করেছে। দিন মুজুর পিতার পক্ষে রিক্সা কিংবা ভ্যান ভাড়া দেওয়া কখনোই সম্ভব হয়নি। কোন দিন সকালে খেয়ে স্কুলে গেছে আবার কোন দিন না খেয়ে স্কুল করেছে। কিন্তু সে কোনদিন স্কুল ফাঁকি দেয় নাই। দারিদ্র তাকে দুরে ঠেলে দিয়ে ভবিষৎতে সে ভাল ফলাফল করবে এই আশায় নিয়মিত স্কুল করেছে। ঝড়বৃষ্টি কোন কিছুই তাকে স্কুলে যাওয়া থামাতে পারেনি। রোজিনা বস্তুল ইসহাক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে ছিল। এসএসসি পাশ করার পর তার এইচএসসিতে ভর্তি হওয়া এবং পড়াশোনা নিয়ে দুঃশ্চিতায় প্রহর গুনতে থাকে রোজিনা ও তার পরিবার। অবশেষে তাড়াশ মহিলা ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয় রোজিনা। ভোরের কাগজ সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ঢাকাস্থ এডুকেশন ফর অল (সবার জন্য শিক্ষা) নামে একটি সংগঠন রোজিনার উচ্চ শিক্ষার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সেই অর্থ আর গরীব পিতার সামান্য অর্থ দিয়ে নিয়মিত কলেজ করে রোজিনা খাতুন। সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় তাড়াশ মহিলা ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে রোজিনা গোল্ডেন প্লাস পেয়েছে। পরীক্ষার পর থেকে এডুকেশন ফর অল রোজিনাকে ঢাকা নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করাচ্ছেন।

এদিকে রোজিনার পিতা মনে করছেন এতদিন বাড়ি থেকে কলেজ করলেও এখন সে ভাবনায় পরেছে মেয়ের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে পড়াশোনা করানোর মত সামর্থ তাদের নেই। হয়ত অর্থের অভাবেই রোজিনার ভবিষতে উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। রোজিনার প্রশাসনিক কর্মকর্তা হবার স্বপ্ন থাকলেও তা কি অধরাই থেকে যাবে না এডুকেশন ফর অল সংস্থা তাকে উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করে দিবেন।

রোজিনা মা জানান, উচ্চ শিক্ষা নিয়ে রোজিনা দু’চোখে সরিষার ফুল দেখছে। তিনি বলেন এক জামা পরে সে পুরো এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তিনি তার একমাত্র মেয়ের জন্য এবং যারা তাকে সহযোগিতা করেছেন সেই সকল মানুষের জন্য নামাজ পরে দোয়া করেন। রোজিনা তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন আমাকে এডুকেশন ফর অল যে ভাবে সহযোগিতা করছেন, আগামীতে তাদের সহযোগিতা অব্যহত থাকলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। তার ভাল ফলাফলের জন্য কলেজের শিক্ষক মন্ডলী, এডুকেশন ফর অল এর কর্মকর্তাবৃন্দ ও পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

(এমএমএইচ/এলপিবি/আগস্ট ২২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test