E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রভাবশালীদের চাপে লক্ষ্মীপুরের সেই গৃহবধূ এখনোআতঙ্কে

২০১৫ আগস্ট ২৩ ১৪:৫৪:২৬
প্রভাবশালীদের চাপে লক্ষ্মীপুরের সেই গৃহবধূ এখনোআতঙ্কে

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরজাঙ্গালীয়া গ্রামে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নবজাতক চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা গৃহবধূ প্রীতি রানী তৃপ্তি (২৮)আতঙ্কগ্রস্থ।

হাসপাতালের বিছানায় ভয়ে আঁতকে উঠছেন বলে জানিয়েছেন একই ওয়ার্ডের অপর রোগীর স্বজনরা। ভয়ে ঘটনার ৫ দিন পার হলেও কোন মামলা করতে পারছে না ভুক্তভোগীর স্বজনরা।

এদিকে ওই গৃহবধূর স্বামীকে ম্যানেজ করে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার নামে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।

রবিবার দুপুরে সদর হাসপাতালে গিয়ে শোনা যায়, আঘাতের যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারেন না প্রীতি রানী। তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়। সারাদেহে আঘাতের কালো চিহ্নগুলো (স্পষ্ট) রয়েছে। কাউকে দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠছেন তিনি। মৃত্যু ভয়ে বড় ভাই জয়ন্ত চন্দ্র রায়কে বারবার আকুতি জানাচ্ছেন তার বোন ও স্বামীকে এক নজর দেখানোর জন্য।

এ প্রতিবেদকে জয়ন্ত চন্দ্র রায় জানান, প্রীতির স্বামীকে ম্যানেজ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য গৌতম চন্দ্রসহ একটি মহল তাদের মামলা না করার চাপ দিচ্ছেন। এ ঘটনায় তার স্বামী অর্জুনও জড়িত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। স্বামী জড়িতের কারণ জানতে জাইলে তিনি আরও বলেন, বিয়ের ছয় বছর পার হলেও সন্তান না হওয়ায় প্রীতিকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হতে পারে। ঘটনার পর থেকে তার স্বামীর আচরণ রহস্যজনক।

যোগাযোগ করা হলে অর্জুন চন্দ্র দাস জানান, এলাকায় মীমাংসার কথা বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য গৌতম চন্দ্র তার কাছ থেকে ১৫০ টাকার স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা না করার জন্য ওই ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন প্রভাবশালী তাকে চাপ সৃষ্টি করেছেন। তাই তিনি এখনও কোন মামলা করেন নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য গৌতম চন্দ্র দাস জানান, মামলা না করতে ও সালিশি মীমাংসার জন্য চাপ সৃষ্টির বিষয়টি সঠিক নয় বলে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি সে।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, প্রীতি এখনও আশঙ্কামুক্ত নন। মানসিকভাবে এখন পর্যন্ত কিছুটা বিপর্যন্ত রয়েছে। তার প্রতি ডাক্তার নার্সদের বিশেষ নজর করার জন্য বলা হয়েছে এবং নজর দারি করা হচ্ছে।

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির আহাম্মদ জানান, ভুক্তভোগীর স্বজনরা এখনো কোন লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ ধরনের ঘটনা স্থানীয়ভাবে মীমাংসাযোগ্য নয়। বিষযটি খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য- গত বুধবার রাত ২টার দিকে তার কমলনগর উপজেলার করুনানগর এলাকার জাঙ্গালীয়া গ্রামের প্রীতি রানী তৃপ্তি (২৮) নামের এক গৃহবধুর ঘরের জানলা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে একই এলাকার মিঠু দাস। পরে প্রীতি রানীকে সে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ঘরের পাশের একটি বাগানে নিয়ে ধর্ষণে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই যুবক তার শিশুসন্তান চুরির নাটক সাজিয়ে চিৎকার করে বাড়ির লোকজনকে জড়ো করে। একপর্যায়ে শিশু চুরির অপবাদে প্রীতি রানীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান। পরে বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) সকাল ৮টার দিকে আহত ও অজ্ঞান অবস্থায় ওই গৃহবধুর বড় ভাই তাকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

প্রীতি রানী হাজিরহাট ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জাঙ্গালীয়া গ্রামের বাসিন্দা অর্জুন দাসের স্ত্রী। অভিযুক্ত মিঠু দাস একই গ্রামের চন্দ্র শেখর দাসের ছেলে।

(এমআরএস/এলপিবি/আগস্ট ২৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test