E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শুধু মোটা ভাত-কাপড়েই সীমাবদ্ধ থাকতে চায়না নড়াইলের দলিত নারী

২০১৫ আগস্ট ২৪ ১৫:৩১:৩৪
শুধু মোটা ভাত-কাপড়েই সীমাবদ্ধ থাকতে চায়না নড়াইলের দলিত নারী

নড়াইল প্রতিনিধি :ঘরের চাল আর জীর্ণবেড়া দেখেই বোঝা যায় কেমন আছেন ঋষিপল্লীর বাসিন্দারা। আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন কর্মকান্ডে পিছিয়ে থাকতে চায়না নড়াইলের দলিত জনগোষ্টির নারী সমাজ। অগ্রসরতার দিক থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও সব মিলিয়ে ভাল নেই নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভার গোপীনাথপুরের ঋষিপল্লীর বাসিন্দারা।

সব মিলিয়ে এখানে প্রায় ২৩ টি পরিবার বসবাস করছে। দলিত পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বসে নেই। নিপূণ হাতে শৈল্পীক ছোঁয়ায় নিয়ত তৈরী করছে বাঁসের চালুনী, কুলা, ডোলা, ঝুড়ি, খালৈ, দোলনা সহ বেতের আসবাবপত্র। অর্থাভাবে যথেষ্ট মূলধন নাথাকায় এপেশায় খুব একটা ভাল করতে পারছেনা তারা।
ঋষিপল্লীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রতি বাড়ির নারীরা বাঁস ও বেতের আসবাব তৈরীতে ব্যস্ত । মা-মেয়ে, বৌ- শ্বাশুড়ী, ঠাকুরমা সকলে মিলে মিশে এক কাতারে বসে যেন বুনছে এক একটি স্বপ্ন। শত দুঃখেও এদের মুখে হাসি লেগেই আছে। সপ্তাহ শেষে একজন নারী এসব তৈরী করে আয় করেন তিনশ থেকে চারশ টাকা। কথাহয় ঋষিপাড়ার গৃহবধু মমতা বিশ্বাসের সাথে তিনি বলেন, আমাদের অভাবের সংসার শুধু একজনের আয়ের উপর নির্ভর করলে আমাদের চলেনা তাই আমাদেরও কাজ করতে হয়। অভাবের কারনে ছেলেটার লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে। পৌরএলাকার বাসিন্দা হয়েও পাচ্ছেনা তেমন কোন সুবিধা। অন্যদিকে পৌরকর বাধ্যতামূলক দিতেই হয়। বয়সের ভারে নুইয়ে গেলেও ঠিকমত পান না বয়স্ক ভাতা। একই অবস্থা বিধবাভাতার ক্ষেত্রেও। বয়স্কভাতার বিষয়ে অনেকটা আক্ষেপের সাথে ঋষিপাড়ার কালিদাসের স্ত্রী ৯০ বছর বয়সী পিপাসা রাণী বিশ্বাস বলেন, আমার বয়স ৯০ বছরের উর্দ্ধ্যে আর কত বয়স হলে এই ভাতা পাব? ১০ বছর আগে বিধবা হয়েছেন উর্মীলা রাণী বিশ্বাস তিনিও জানালেন তার বর্ণনাতীত দুঃখ গুলো , স্বামী মারা গেছেন বছর দশেক আগে ছেলে- মেয়ে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজকরে সংসার সামলাতে হচ্ছে তাকে।

এ বিষয়ে কথা হয় লোহাগড়া সমাজ সেবা কর্মকর্তা হোসেনুর রহমান এর সাথে তিনি বলেন, এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী বয়স্ক ভাতা প্রদান করে থাকি। এমন যদি কেউ বাদ পড়ে সেক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিব।

কখনো অনাহারে অভুক্ত থেকেও ছেলে-মেয়েদের ভরণ-পোষণ জুগিয়ে চলেছেন। আদিপেশার কদর না থাকায় দলিত পুরুষদের আয় অনেক কমে গেছে। নির্দিৃষ্ট কোন সামাজিক অনুষ্ঠান আর প্রচার প্রচারণা ছাড়া বাজনদারীত্বের(ব্যান্ডপার্টি) কাজ আগের মত তেমন হয়না। বাপ- দাদার পেশা টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ আবার শত প্রতিকুলতার মাঝেও চর্মকারের কাজ, সেলুনের পেশা আকড়ে ধরে রেখেছে। বিশেষ করে কোন নারী সংগঠন না থাকায় তাদের নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন অনেকটা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। একজন নাগরিক হিসাবে নিজেদের অধিকার আদায় ও উন্নয়নের কথাটিও যেন এদের বলার কেউ নেই। শুধু দু’বেলা দু’মুঠো মোটা ভাত আর মোটা কাপড়েই তাদের জীবন এখন আর সীমাবদ্ধ রাখতে চায়না। নারী এগিয়ে গেলে দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা বাঁচলে বাঁচবে এদেশের কুঁটিরশিল্পও। তাই সরকারিভাবে তাদের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুঁজি বিনিয়োগ করে উন্নয়ণমূখী উন্নত প্রশিক্ষণ পেলেই তারা মাথাতুলে দাঁড়াতে পারবে বলে দাবী ঋষিপল্লীর নারী সমাজের।



(টিএআর/এসসি/আগস্ট২৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test