E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁর ৮০ কোটি টাকার শহর রক্ষা প্রকল্প ভেস্তে গেছে

২০১৫ আগস্ট ২৫ ১৮:৪০:৩৯
নওগাঁর ৮০ কোটি টাকার শহর রক্ষা প্রকল্প ভেস্তে গেছে

নওগাঁ প্রতিনিধি : অপরিকল্পিতভাবে আউটলেট নির্মানের ফলে নওগাঁবাসীর বহুদিনের প্রত্যাশিত  ‘শহররক্ষা প্রকল্প’ শহরবাসীর কোন কল্যানে আসছেনা। কেবলমাত্র আউটলেটগুলো যথাযথ কার্যকর না হওয়ায় প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ফ্লাডওয়াল মানুষের কোন কাজেই আসছেনা। ফলে ৮০ কোটি টাকার এই প্রকল্প পুরোটায় ভেস্তে যেতে বসেছে।

নওগাঁ শহরকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে নওগাঁবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে অবশেষে সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নওগাঁ শহর রক্ষা প্রকল্প গ্রহন করে। নওগাঁ শহরের ডিগ্রি কলেজের মোড় থেকে দক্ষিন-নওগাঁ পর্যন্ত ছোট যমুনা নদীর উভয় তীরে ফ্লাডওয়াল নির্মান করা হয়। প্রকল্পটি এখনও নির্মানাধীন। এই প্রকল্পের আওতায় উভয়পার্শ্বে মোট ৯০টি আউটলেট নির্মান করা হয়। এর মধ্যে নদীর পশ্চিমতীরে ৫৪টি আউটলেট নির্মান করা হয়েছে। শহরের পশ্চিম অংশ কিছুটা নিচু হওয়ায় এই অংশের আউটলেটগুলো বিশেষভাবে অকার্যকর হিসেবে চিহিৃত হয়েছে। এই আউটলেটের লে-আউট এবং ডিজাইন দু’টোয় নওগাঁ ছোট যমুনা নদীর জন্য প্রযোজ্য নয়। নদীর পাড় থেকে শহরের উচ্চতা কম। এর ফলে শহরের পানি নদীতে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দুরুহ। ফলে নদীর এই আউটলেটগুলো দিয়ে শহরের পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা। এর মুল কারন হলো, এসব আউটলেটের সঙ্গে শহরের কোন এলাকার পানি নিষ্কাশনের কোন সংযোগই স্থাপন করা সম্ভব হয় নি।

যে দু’একটি আউটলেট দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে পানি নদীতে নিষ্কাশিত হচ্ছে, তাও প্রক্রিয়াগতভাবে নয়। এর ফলে নেমে আসা পানির ধাক্কায় নদীর ধারের ব্লকগুলো ধ্বসে পড়ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আউটলেটে নদীর ধারের ব্লক ধ্বসে গেছে। এভাবে ধ্বসে যেতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে পুরো শহর রক্ষা প্রকল্পের ব্লক ধ্বসে গিয়ে ফ্লাডওয়ালকে হুমকির মুখে ফেলে দিবে। নির্মানের চুক্তি মোতাবেক এরই মধ্যে পর পর দু’বছর ধ্বসে যাওয়া ব্লকগুলো সংস্কার করে দিয়েছে ফ্লাডওয়াল নির্মানকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষান। তিনি বলেছেন, দু’বছর পর্যন্ত প্রকল্পের সংস্কার কাজ করে দেয়ার কথা। ফলে এর পরে প্রকল্পের ভাগ্যে কি আছে তা অনিশ্চিত। গত বছর এবং এ বছর একইভাবে অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে ঢলের পানি নেমে আসার ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধি ঘটলে বাঙ্গাবাড়িয়া, বিহারী কলোনী এবং উকিলপাড়া এবং পার-নওগাঁ এলাকার আউটলেটগুলো দিয়ে নদীর পানি শহরে প্রবেশ করে কোন কোন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি ঢুকে জনজীবন বিপন্ন করে তোলে।

শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া মহল্লার মোঃ আব্দুস সামাদ এবং জোসনা বেগম বলেছেন, আমরা নদীর ধারে বসবাস করি। প্রতি বছর বন্যার যে ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। ফ্লাডওয়াল নির্মানের ফলে আমরা ভেবেছিলাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেলাম। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আউটলেট দিয়ে পানি এসে আগের মতই বাড়িঘর ডুবিয়ে দিচ্ছে। ফ্লাডওয়াল নির্মানকারী ঠিকাদার দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষান বলেছেন, ফ্লাডওয়াল নিমান করা আমার কাজ ছিল না। এটি ভিন্ন প্যাকেজের আওতায় অন্য ঠিকাদার এগুল্ োনির্মান করেছেন। তিনি বলেন, আউটলেটগুলোর নির্মানকৌশল সঠিক হয়নি বলেই সেগুলো আজ অকার্যকর। তিনি আরো জানান, গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহা-পরিচালক ইসমাইল হোসেন প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনের সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আগামীতে যাতে এই আউটলেটগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায় এবং শহরের পানি যাতে আউটলেট দিয়ে নদীতে নিষ্কাশিত হয় সে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এব্যাপারে পানি উন্নয়নবোর্ড নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ার হোসেন অপরিকল্পিতভাবে এই আউটলেটগুলো নির্মাণ করা হয়েছে এই অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেছেন, যথাযথ বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং ডিজাইন মোতাবেক সেগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এগুলোতে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। তখন আর এই সমস্যগুলো থাকবে না।

(বিএম/এসসি/আগস্ট২৫,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test