E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

২০১৪-২০১৫অর্থ বছরের এডিপি’র টাকা হরিলুট

ভুয়া প্রকল্প দিয়ে এডিপি’র বিপুল টাকা আত্মসাত!

২০১৫ আগস্ট ২৫ ২১:৫৭:৪৬
ভুয়া প্রকল্প দিয়ে এডিপি’র বিপুল টাকা আত্মসাত!

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি : তাড়াশের বারুহাস ইউনিয়নের এডিপি’র বরাদ্দকৃত অর্থ হরিলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সংশ্লিষ্ঠ ইউনিয়নের সিলেকটেড চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন মুক্তা হস্তচালিত টিউবয়েল না দিয়েই প্রকল্পের বিপুল পরিমাণে টাকা আত্মসাত করেছে।

সরেজমিনে ও তালিকা ভুক্তদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরের তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের জন্য এলজিইডি অফিসের মাধ্যমে এডিপি থেকে হত দরিদ্র পরিবারের মধ্যে হস্তচালিত নলকুপ ক্রয়, বিতরণ ও গোড়া পাকাকরণ প্রকল্পের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করে। এডিপি’র ওই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ১লাখ ৬০হাজার টাকা। বারুহাস ইউনিয়ন থেকে নলকুপ বিতরণের জন্য যে তালিকা এলজিইডি তাড়াশ অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে সেখানে যাদের নাম আছে তারা অধিকাংশই নলকুপ পায়নি। তাছাড়া দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ না করে ১০ থেকে ১২বিঘা জমির মালিকের নামও তালিকায় রয়েছে। এমন কি স্কুলের শিক্ষককের নাম পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে বারুহাস ইউনিয়নের হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে বিতরণকৃত নলকুপ দেখতে গিয়ে তা পাওয়া যায়নি। তালিকায় বারুহাস ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের লাউশন গ্রামের মফিজ উদ্দিনের পুত্র মোঃ বাবুল আক্তারের নাম রয়েছে। তিনি একজন স্কুল শিক্ষক। তার স্ত্রী লাইলী খাতুন জানান, মোক্তার চেয়ারম্যান আমাদের কোন টিউবয়েল বা নলকুপ দেয় নাই। ১বছর আগে আমরা নিজের টাকা দিয়ে টিউবয়েল কিনে তা বাড়িতে বসিয়ে ব্যবহার করছি। তালিকায় একই গ্রামের মহির উদ্দিনের পুত্র শাহাদত হোসেনের নাম রয়েছে। তাকে কোন নলকুপ দেওয়া হয়নি। তার ছেলে আজাদুল জানান, আমার পিতা শাহাদত ঢাকা থাকেন। চেয়ারম্যান আমাদের কোন নলকুপ দেয়নি। আমি বাড়িতে থাকি এবং প্রায় ৮মাস আগে নিজের কিছু টাকা দিয়ে এবং কিছু টাকা বাকী রেখে টিউবয়েল ক্রয় করেছি। ৬নং ওয়ার্ডের কাজিপুর গ্রামের আয়জদ্দিনের পুত্র মোঃ মকুল হোসেনের নাম রয়েছে। তার বাড়িতেও চেয়ারম্যান কোন টিউবয়েল দেয়নি। মকুল জানান, আমার নামে টিউবয়েল বরাদ্দ আছে কি না আমি তাই জানিনা। আমাকে বারুহাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কোন টিউবয়েল দেয় নাই। ৪নং ওয়ার্ডের বটগাড়ি গ্রামের মহির সরকারের পুত্র মোসলেম উদ্দিনের নাম রয়েছে তাকে একটা টিউবয়েল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গোড়া পাকাকরণ বা টিউবয়েল বসানোর জন্য মিস্ত্রির মজুরী পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এমনকি তাড়াশ থেকে ভাড়া দিয়ে টিউবয়েল আনতে হয়েছে। ৭০ফুট মাটির নীচে দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ৬০ফিট দেওয়া হয়েছে বলে তার স্ত্রী জানান। তাছাড়া ২নং ওয়ার্ডের দিঘুরিয়া গ্রামের মোশারফ সর্দারের পুত্র রওশোন সর্দারের নাম তালিকায় রয়েছে। রওশোন একজন ধনী মানুষ। তার নিজস্ব ১০ থেকে ১২বিঘা জমি রয়েছে। তাছাড়া তার মেয়ে সরকারী চাকুরী করেন। তাকেও কোন টিউবয়েল দেওয়া হয়নি বলে জানাগেছে। এভাবেই চেয়ারম্যান উক্ত প্রকল্পের সিংহ ভাগ টাকা নলকুপ বিতরণ না করেই আত্মসাত করেছেন। এলাকাবাসি জানান, মোক্তার হোসেন মুক্তার ইউপি নির্বাচনের আগে বিভিন্ন গ্রামের যুবক,ছাত্র ও হিতাকাংখীরা চাদা তুলে তার নির্বাচন করছেন। আর নির্বাচনের পর মাত্র ৪বছরের সে কোটিপতি হয়েছে। বাড়ি, গাড়ী, জমিসহ অনেক কিছুই হয়েছে তার। এলাকার মানুষ বলে বেড়ান সে আগুল ফুলে কলার গাছ হয়েছেন। বারুহাস ইউনিয়নের জনগন মোক্তার চেয়ারম্যানের আয়ের উৎস জানতে চান। সচেতন মহল মনে করেন সরকারের উচিত তার আয়ের উৎস খতিয়ে দেখা। তাদের ধারনা সরকারী অর্থ এভাবেই আত্মসাত করে সে এত কিছু করেছে। এলাকবাসি দুর্নীতি দমন কমিশনের নিকট দাবী জানান তার আয়ের উৎস খুজে বের করার জন্য। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে মোবাইল যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী বাবুল আক্তার বলেন, ভাই আমাকে ১সপ্তাহ সময় দেন। এর মধ্যে আমি ঠিক করে নেব। তিনি সংবাদটি না লেখার জন্য অনুরোধ করেন। এলাকাবাসি মনে করেন সরকারী অর্থ আত্মসাতকারী চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেনের সকল প্রকল্প তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবী জানান।

(এমএমএইচ/পি/অাগস্ট ২৫, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test