E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের বিচার চাইতে গিয়ে পরিবার নিখোঁজ

২০১৫ আগস্ট ২৬ ১৭:৩৯:৫২
অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের বিচার চাইতে গিয়ে পরিবার নিখোঁজ

কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি: কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ বাজারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাবু বীনা পালের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের বিচার চাইতে গিয়ে বীনা পাল ও তার পরিবার নিয়ে এখন নিখোঁজ।

স্থানীয় শাসক দলের লোকেরা এ সংখ্যালঘু পরিবারটিকে এলাকা ছাড়া করেছে বলে অভিযোগ উঠছে।

রায়েদ এলাকায় গিয়ে জানা যায়, দরগা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী একই এলাকার বাগের হাট গ্রামের আবুল হোসেন এর ছেলে বখাটে সোহাগের প্রেমে পড়ে। দীর্ঘদিন থেকে এদের দুজনের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর মধ্যে দশম শ্রেণির ছাত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়ে। ঘটনাটি সোহাগকে জানালে সোহাগ গা ঢাকা দেয়। পরে ঘটনাটি তার বাবাকে জানায়। মেয়ের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে বীনা পাল এলাকার শাসক দলের নেতা কাসেম মাস্টার, মোতাহার হোসেন ও চানু মিয়া, কবির হোসেনকে ঘটনা জানায়। নেতারা এ বিষয়ে একটি সমাধান দেয়ার কথা বলে বীনা পালকে জানান। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে শাসক দলের নেতারা রায়েদ বাজারের সুলতানপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে গত ১৬ আগষ্ট, ১৭ আগষ্ঠ ও ১৯ আগষ্ঠ তিন দিন একের পর এক সালিশী বৈঠক ডাকেন। প্রতি বৈঠকে বীনা পাল তার স্ত্রী মরনী পাল ও তার মেয়ে উপস্থিত থাকার পরও দোষী ব্যাক্তি সোহাগ উপস্থিত না হলে নেতারা কোন সুরাহা দিতে পারে নাই। বৈঠকে সমাধান না দেয়ার কারনে বীনা পাল বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে ধর্না দেয়ার পর গত শুক্রবার ২০ আগষ্ট শাসক দলের নেতা কবির হোসেন বীনার বাড়িতে গিয়ে বীনা পাল, তার স্ত্রী মরনী পাল ও তার মেয়েকে থানার কথা বলে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে যায়। তার পর থেকে বীনাসহ তার পরিবার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ২৫ তারিখে রায়েদ বাজারের পূর্ব দিকে একশত গজ দুরে বীনা পালের বাড়ি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়ি ছোট ছোট তিনটি ঘড়ে বীনার শাশুড়ী অস্টমী পাল একা বসে আসে। তার কাছে তার জামাই, মেয়ে ও নাতনির কথা বলতে ডুকরে কেঁদে উঠেন।

তিনি বলেন গত শুক্রবার থানার কথা বলে বাড়ী থেকে এলাকার আওয়ামীলীগ নেতারা তাদের নিয়ে গেছে আজ ৫ দিন হয়ে গেল এখনো ফিরে আসেনি। তার ঘরে চাল নাই অন্যবাড়ি থেকে চাল দেয়ার পর রাতে তিনি কচু সিদ্ধ করে খেয়েছেন বলে এ বয়োবৃদ্ধ মহিলা প্রতিনিধিকে জানান।

রায়েদ বাজারের চা দোকানদার মাসুদ জানান, তিন দিন বাজারে সালিশ করার পর সোহাগ সালিশে না আসায় সালিশ হয়নি। পরে গত কয়েকদিন থেকে বীনা পালকেও তাদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।

রায়েদ এলাকার ইউপি সদস্য বাদল জানান, আমার এলাকার নেতার সালিশী বৈঠকে ডাকলে আমি সে খানে যাই । কিন্তু নেতারা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আমি জানি না। থানার কথা বলে বীনা, তার স্ত্রী ও অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

রায়েদ ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হারিজ বলেন, সে আমার স্কুলে নিয়মিত ছাত্রী ছিল তার আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না এর সুযোগে আমার ছাত্রীর বিরুদ্ধে অবিচার করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠ বিচার দাবি করি।

রায়েদ বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান নেতারা ৪ লাখ টাকা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চলছে। এখন থানার কথা বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে একাধিক ব্যবসায়ী জানান।

সালিশী বৈঠকের প্রধান আ: কাসেম মাস্টার মোবাইল ফোনে জানান আমরা চেষ্টা করেছি মিমাংসার জন্য কিন্তু পারি নাই। পরে বীনা পাল থানায় চলে যান বলে তিনি আমাদের এ প্রতিনিধিকে জানান।

অভিযুক্ত সোহাগের মা জানান আমরা এটা মিমাংসা করার জন্য এলাকার নেতাদের দায়িত্ব দিয়েছি তারা এটা মিমাংসা করে দিবেন। কিভাবে মিমাংসা হবে জানতে চাইলে তিনি বলে টাকা পয়সার মাধ্যামে এটা মিমাংসা হবে।

সালিশে উপস্থিত এলাকার ছাত্রনেতা কবির হোসেন বলেন তিনি এ সময় ঢাকা ছিলেন তিনি এলাকার কোন খরাখবর রাখেন না। তিনি সালিশে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবী করেন।

রায়েদ ইউপি আ: হাই বলেন, এলাকার লোকজন আমাকে জানান আমি বীনা পালকে থানায় এসে অভিযোগ দিতে বলি । পরে আর তার সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো: রুহুল আমীন বলেন বর্তমানে এলাকায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে টাকা পয়সার বিনিময়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানী করা হচ্ছে। তিনি বলেন থানার কথা বলে রায়েদ এলাকার ছাত্রনেতা কবির হোসেন তাদেরকে বাড়ি নিয়ে যায়। কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচাজ মো: আহসান উল্লাহ বলেন, এমন কোন ঘটনা আমার জানা নেই। মেয়ের বাবা থানায় আসলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হবে।

(এসকেডি/এলপিবি/আগস্ট ২৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test