E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালীগঞ্জের ভূমিহীন জনপদে জোড়াখুন, নিরস্ত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশের অস্ত্র মামলা

২০১৫ আগস্ট ২৬ ২১:০৩:০৩
কালীগঞ্জের ভূমিহীন জনপদে জোড়াখুন, নিরস্ত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশের অস্ত্র মামলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের ভূমিহীন জনপদে গুলি ও বোমা হামলার পর দু’ভূমিদস্যু গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বাবা হত্যার দায় ছেলে, ভাই হত্যার দায় ভাই ও নিরস্ত্র ভূমিহীনদের নামে অস্ত্র মামলা রেকর্ড হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এ ছাড়া চার বছরের বেশি সময় ধরে শিশু হত্যার দায়ে জেল হাজতে থাকা একজনকে মামলায় আসামি শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। হামলায় নেতৃত্বদানকারী অন্যতম আসামি হাসান মীর ও তার সহধর্মিনী পারভিন আক্তারকে এ মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পুলিশের দায়েরকৃত হত্যা ও অস্ত্র আইনে দায়েরকৃত পৃথক দু’টি মামলায় মঙ্গলবার রাতে একজন এজাহারভুক্ত আসামীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, কালীগঞ্জ উপজেলার পাইকাড়া গ্রামের আলী কারিকরের ছেলে হযরত আলী, তার ছেলে নাজির হোসেন, ভাঙানমারি গ্রামের মোস্তফা সরদারের ছেলে রেজাউল ইসলাম, কাশিবাটি গ্রামের এরশাদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম ও জাফরপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোকছেদ আলী।


নিহত আশরাফ মীর ও তার শ্যালক ইছহাক পাড়ের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রমজান শুরুর আগে ভূমিদস্যু আশরাফ মীর ও তার স্বজনদের চিংড়িখালি ও বৈরাগীর চক থেকে হঠিয়ে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উচ্ছেদ হওয়া ছিন্নমূল ভূমিহীনরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনের হাত ধরে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করে। এরপর থেকে আশরাফ মীর ও তার স্বজনরা সাতক্ষীরার কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা, ভূমিহীন নেতা, সাংসদ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে। একপর্যায়ে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি দেখিয়ে আশ্বস্ত করেন ভূমিহীন নেতা ওহাব আলী পেয়াদা। ওই চিঠির অনুলিপি কালীগঞ্জ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখানো হয়। যার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে আশরাফ মীরের সন্তুষ্টি ভোগকারি ওই মহলটি দায় এড়াতে না পেরে হাসান মীরসহ একটি গ্রুপকে আবারো ওই ভূমিহীন জনপদে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলাচ্ছেন।

তারা আরো জানান, আশরাফ মীরকে তার পুরাতন জনপদে ফিরিয়ে দেওয়ার সহযোগিতা করতে সন্তুটি করাতে হয় এক আওয়ামী লীগ নেতা, এক সাংসদের সাংবাদিক ভাই, জেলার পুলিশ সুপারের কাছের লোক বলে পরিচিত এক সাংবাদিক, কালীগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান। সাংসদের ভাই এক মাস আগে প্রয়াত ভূমিহীন নেতা আব্দুর রহিমের ছেলে আনোয়ার জাহিদ তপন, কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীসহ সাংবাদিকদের নিয়ে যারা প্রকৃত ভূমিহীন নয় তাদেরকে সেখান থেকে অপসারণ ও আশরাফ মীরকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বৈরাগীর চকে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত যাননি। সবশেষ ওইসব ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের আর্শিবাদ নিয়ে সোমবার ভোরে নিজের স্বজন ছাড়াও ভাড়টিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে মুহু মুহু বোমা বিস্ফোরণ ও গুলি ছুঁড়ে বৈরাগীর চক ও চিংড়িখালি দখলের চেষ্টা করেন। পরে তাকে ও তার শ্যালক ইছহাককে লাশ হয়ে ফিরতে হয়। পুলিশ নিহত আশরাফ মীরের স্ত্রী ফজিলা বেগমের মামলা না নিয়ে নিজেরাই হত্যা ও অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হামলার ঘটনায় আশরাফ মীরের ছেলে হাসান মীর ও তার স্ত্রী পারভিন আক্তার প্রকাশ্যে অংশ নিলেও মামলা তাদের নাম নেই। নাম নেই পিটিয়ে হত্যার নেপথ্য নায়ক আবুল হোসেনের। উপরন্তু দু’টি মামলার প্রত্যেকটিতে ৬৬ জন আসামির মধ্যে নিহত আশরাফ মীরের ছেলে হাবিব মীরকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা হত্যা ও অস্ত্র আইনে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নিহত ইছহাক পাড়ের ভাই শহীদুল পাড়কে দু’টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। গণধোলাইয়ের পর পাইপগান, বোমা ও গুলিসহ আশরাফ মীর, ইছহাক পাড় ও আবু বক্করকে পুলিশে সোপর্দ করা হলেও পুলিশ ঘটনাপস্থল থেকে ওইসব গোলাবারুদ উদ্ধার দেখিয়ে নিরস্ত্র ৪০জনেরও বেশি ভূমিহীনদের নামে অস্ত্র মামলা দায়ের করেছে। এমনকি বাবু টাপালির ছেলে কাশেম (২৪নং) শিশু হত্যা মামলায় চার বছরেরও বেশি সময় ধরে জেল হাজতে থাকলেও তাকে এ দু’টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহার দু’টি পর্যবেক্ষণ শেষে বিবাদমান দু’পক্ষই আদালতে সম্পূরক মামলা দায়ের করবে বলে জানা গেছে।

কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মোঃ শহীদুল্লাহ জানান, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে না থাকলেও তার ও সহকারী পুলিশ সুপারের নির্দেশনা অনুযায়ি যথেষ্ট যাঁচাই বাছাই করে এ মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্ত শেষে যথাযথভাবে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। চিংড়িখালি ও বৈরাগীর চক এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে একজন এজাহারভুক্ত ও চারজন সন্দিগ্ধ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

(আরকে/পি/অাগস্ট ২৬, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test