E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে ২ ভূমিদস্যুকে পিটিয়ে হত্যা

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০১ ১৯:৩০:৫৯
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে ২ ভূমিদস্যুকে পিটিয়ে হত্যা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ভূমিহীন পল্লীতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার চেষ্টাকালে  দু’ভূমিদস্যু নিহত হওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নিহত ইছহাক পাড়ের ছেলে ইসমাইল হোসেন বাদি হয়ে সাতক্ষীরার বিচারক হাকিম আদালতে- ১ এর আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।

বিচারক এরশাদ আলী মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত আদেশ দেননি।

মামলায় কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনসহ এলাকার বাইরের দেবহাটা, কালীগঞ্জ, শ্যামনগর, যশোরের ঝিকরগাছার কমপক্ষে ৩০ জনসহ ৯১জন ভূমিহীনকে আসামী করা হয়েছে।

ইসমাইল হোসেন তার মামলায় উল্লেখ করেছেন, ২০০৪ সাল থেকে তারাসহ বেশ কিছু ভূমিহীন পরিবার উপজেলার বৈরাগীর চক ও চিংড়িখালি ভূমিহীন জনপদে বসবাস করে আসছেন। ফুফা আশরাফ মীর, বাবা ইছহাক আলী, তাদের কয়েকজন আত্মীয়সহ বেশ কিছু ভূমিহীন পরিবার কালীগঞ্জ উপজেলার ভূমিহীন জনপদ বৈরাগীর চক ও চিংড়িখালিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। আবুল হোসেন পাড় ও করিম পাড়ের নেতৃত্বে উল্লিখিত আসামীসহ ভাড়াটিয়া ১০/১৫ জন সন্ত্রাসী ২৪ আগষ্ট সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ভূমিহীন এলাকায় হামলা চালায়। হামলায় আতঙ্কিত তার ফুফা আশরাফ মীর ঘর থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাকে ধরে এনে নানাভাবে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে তাকে প্রায় শিরচ্ছেদ করে।

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, ফুফাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে বাদির বাবা ইছহাক আলী, আবু বক্কর, ফুফাত ভাই হাবিব মীর, বাবলুসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। পুলিশ উদ্ধার করে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে ফুফা ও বাবাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করে।

এ ঘটনায় ফুফু ফিরোজা বেগম বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দিলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। অথচ পুলিশ ঘটনার যথাযথ বর্ণণা না দিয়ে চাচা শহীদুল ইসলাম, নিহত আশরাফ মীরের ছেলে হাবীব মীর, আত্মীয় তাজুল ইসলাম, ও আবু বক্করসহ কয়েকজনকে হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামী করে থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় ফুফাত ভাই হাবীব মীরসহ তাদের পক্ষের তিনজন জেল হাজতে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বৈরাগীর চক ও চিংড়িখালি থেকে উচ্ছেদ হওয়া কয়েক’শ ভূমিহীন, আশরাফ মীরের হাতে ধর্ষিত ভূমিহীন নারীদের স্বজনরা গত ২ মার্চ নীরব বিপ্লবের মাধ্যমে আশরাফ মীর ও তার সহযোগি কয়েটি ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করে। তারই বদলা হিসেবে এক সাংসদের ভাই সাংবাদিক সুমন ভাইয়া, সদর থানার দালাল কালীগঞ্জের দুদলী গ্রামের নাসিরউদ্দিনসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও ভূমিহীন নেতাকে সৃষ্টির পর তাদের আর্শীবাদ নিয়ে ২৪ আগষ্ট তাদের জায়গা পূনঃরুদ্ধারে যেয়ে ভূমিহীনদের উপর মুহু মুহু গুলি ও হামলা চালায় আশরাফ মীর, হাসান মীর ও পারভিন সুলতানাসহ তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা। এতে ফিরোজ শেখ, আব্দুল গফুর, মনিরুলসহ কমপক্ষে ১১ জন ভূমিহীন আহত হয়। গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সময় ক্ষুব্ধ জনতা আশরাফ মীর, ইছহাক পাড়, আবু বক্কর, হাবিব মীর ও বাবলুর রহমানকে পিটিয়ে জখম করে। সাড়ে ৯টার দিকে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশরাফ মীর ও ইছহাক পাড়কে মৃত বলে ঘোষণা করে। এ ঘটনা পুলিশ আশরাফ মীরের স্ত্রী ফজিলা বেগম বাদি হয়ে ৫২ জনের নামে মামলা দিলে পুলিশ বিষয়টি উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে তা প্রত্যাখান করে রাতেই সহকারি উপপরিদর্শক সাগর আলী বাদি হয়ে উভয়পক্ষের ৬৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০ লোকের নামে পৃথক দু’টি মামলা করেন। একই ঘটনায় নিহত আশরাফ মীরের স্ত্রী ফজিলা বেগম বাদি হয়ে ৮৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনের নামে মামলা (সিআরপি-১৯৫/১৫) করেন।

এদিকে পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে উপজেলার ইন্দ্রনগর গ্রামের রেজাউল পাড়, রশিদ পাড়, তার জামাতা কলুরাবাদ গ্রামের হাবিবুর মোল্ল্যা ও ঘুষুড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলামকে সোমবার রাতে বৈরাগীর চক ভূমিহীন জনপদ থেকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ ভূমিদস্যুদের পরামর্শ মত বৈরাগীর চক থেকে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করতে এক তরফা তাদের লোকজনদের গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ করেছেন পুরুষ শূন্য ওই জনপদের ভূমিহীন নারীরা।

(আরকে/এলপিবি/আগস্ট ১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test