E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিচারকের  বিরুদ্ধে গৃহকর্মী বীথি'র নির্যাতনের মামলা নেয়নি পুলিশ

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০২ ১৯:৩২:০৫
বিচারকের  বিরুদ্ধে গৃহকর্মী বীথি'র নির্যাতনের মামলা নেয়নি পুলিশ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ঘরের মধ্যে দশ বছর বয়সী গৃহকর্মী শিশু বীথিকে আটক রেখে  শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় একজন বিচারক হাকিমসহ তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলেও ২৪ ঘণ্টায়ও মামলা নেয়নি পুলিশ।

মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে নির্যাতিত বীথির বাবা মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বড় আমিনিয়ার গ্রামের গোলাম রসুল বিশ্বাস এ অভিযোগ করেন ।

মামলার আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম- ২ এর বিচারক নুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী নাতাশা বেগম ও বিচারিক হাকিম আদালতের কর্মচারী সোহরাব হোসেন ওরফে সাগর।

এদিকে বীথিকে মঙ্গলবার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেওয়ার পর সদর থানার উপপরিদর্শক বিশ্বাস মোজাফফর রহমান তাকে বুধবার আদালতে উপস্থাপন করেন। পরিবারের কোন সদস্য তাকে জিম্মায় নেওয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়ায় ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারক হাকিম মহিবুল হাসান তাকে বাগেরহাট জেলার দশানি পচা দীঘির পাড়ের নারী ও শিশু উদ্ধার আশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

মামলায় বীথির বাবা উল্লেখ করেন যে এক বছর দুই মাস আগে তার গ্রামের রুম আলি বিশ্বাসের ছেলে সাতক্ষীরা বিচারিক আদালতের কর্মচারী সোহরাব হোসেন ওরফে সাগর তার মেয়ে বীথিকে ভাল কাজ ও পাশাপাশি লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। পরে সে বীথিকে সাতক্ষীরার বিচারক হাকিম নুরুল ইসলামের পলাশপোলের ভাড়া বাড়িতে গৃহকর্মী হিসাবে রেখে দেয় ।

মামলায় তিনি উল্লেখ করেন যে, এরপর থেকে মোবাইলে ও সশরীরে এসে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে পারতেন না। এক পর্যায়ে গত ১৭ মে দেখা করতে এসে না পেয়ে চিফ জজ মাহেবের বাসায় এসে দেখা পান মেয়ের। এরপরও কথা বলার সুযোগ হয়নি তার। গত ১৯ অগাস্ট সন্ধ্যা ৭টায় তিনি জানতে পারেন যে তার মেয়ে বীথিকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বিচারক হাকিম নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাতাশা। তাকে গুরুতর আহত এবং বহু ক্ষত চিহ্ণসহ সাতক্ষীরার প্রধান বিচারক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা, সদর থানার পুলিশ এবং সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। রাতেই তিনি সাতক্ষীরা হাসপাতালে এসে তার কংকালসার হাড়জিরজিরে মেয়েকে দেখতে পান। মেয়ের সঙ্গে কথা বলে তার উপর নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারক হাকিম সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো একটি চিঠিতে বীথির গায়ের ক্ষত চিহ্ন ইলেকট্রিক শকের ও বাথরুমে পড়ে আঘাত বলে উল্লেখ করেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা আঘাতগুলোর মধ্যে কয়েকটি পুরাতন ও কয়েকটি এক সপ্তাহের মধ্যের বলে উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক অহিদুল ইসলাম জানান, ওসি স্যার ছুটিতে গেছেন। তিনি না ফিরে এলে গোলাম রসুলের অভিযোগটি মামলা হবে কি না তা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না। তবে এ ঘটায় পুলিশের দায়েরকৃত একটি সাধারণ ডায়েরি অনুযায়ি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে।

উল্লেখ্য, যে গত ১৯ অগাস্ট বিকেল চারটার দিকে ১০ বছর বয়সী গৃহকর্মী বীথিকে বিচারিক হাকিম নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাতাশার ভাড়া বাসা থেকে দেহে বহু ক্ষতচিহ্ণসহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় মুখ্য বিচারক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্যেষ্ঠ বিচারক হাকিম-২ আদালতের বিচারক শিমুল বিশ্বাস পুলিশ ও ডাক্তারের সামনে বীথির ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন। অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় সাতক্ষীরায় নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। পালন করা হয় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি। আন্দোলনের মুখে নুরুল ইসলামের বিচারিক ক্ষমতা (কগনিজেন্স পাওয়ার) প্রত্যাহার করা হয়। এরপর থেকে বুধবার পর্যন্ত নুরুল ইসলাম আদালতে আসেননি।

(আরকে/এলপিবি/সেপ্টেম্বর ২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test