E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তাড়াশে আনন্দ স্কুলের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটরের সীমাহীন দূর্নীতি

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১২:১৬:০২
তাড়াশে আনন্দ স্কুলের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটরের সীমাহীন দূর্নীতি

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি :  রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) ফেইজ-২ প্রকল্পের আওতায় চলনবিলের তাড়াশ উপজেলা আনন্দ স্কুলের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটরের সীমাহীন দুর্নীতি, শিক্ষককে ধোকা দিয়ে অর্থ আদায়, বেতনভাতা বন্ধ রেখে ও শিক্ষক প্রতিস্থাপনের নামে অর্থ আত্মসাত, শিক্ষা উপকরণ, পোষাক ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং কতিপয় শিক্ষককের সাথে যোগসাজসে উপবৃত্তির বিপুল পরিমানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলায় ১২১টি আনন্দ স্কুলের মধ্যে বিভিন্ন কারণে ১৯টি স্কুলের শিক্ষকের বেতন ভাতা, ছাত্রছাত্রীদের উপকরন ও পোষাক বরাদ্দ বন্ধসহ ১৩টি আনন্দ স্কুলের সকল কার্যক্রম সম্পুন্ন রুপে বন্ধ রয়েছে। ফলে আনন্দ স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরেছে। এসব কারণে অধিকাংশ শিক্ষকের ১১মাস ধরে বেতন ভাতা না বন্ধ থাকায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

অভিযোগে প্রকাশ ও শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন(রস্ক) ফেইজ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ২০১৩সালে ১৮টি আনন্দ স্কুল চালু করে। পর্যায়ক্রমে তা বৃদ্ধি করে ২০১৪ সালে ৭২টি এবং ২০১৫ সালে ৩১টিসহ বর্তমানে মোট ১২১টি আনন্দ স্কুল রয়েছে। ওই সকল স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৭৫জন। বর্তমানে নতুন ৩১টি স্কুল বাদে বাকী ৯০টি আনন্দ স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২হাজার ৬শ’ জন। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আনন্দ স্কুলের প্রথমে পর্যায়ে সুষ্ঠ ভাবে পরিচালিত হলেও পরবর্তীতে নানা অভিযোগ উঠে। ইতিমধ্যে ১৯টি আনন্দ স্কুল বিভিন্ন অনিয়ম ও কাগজপত্রের ঝামেলার কারণে বন্ধ রয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভঙ্গের কারণে তাড়াশে ৭টি আনন্দ স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকার বেতনসহ অন্যান্য উপকরণ বন্ধ রয়েছে। উপজেলা কো-অর্ডিনেটর ওছমান গনি সরকার বন্ধ হওয়া ৭টি স্কুলের শিক্ষকদের নিকট থেকে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তাদের বেতন ভাতা দেওয়ার কথা বলে প্রত্যকের নিকট থেকে ৫ থেকে ৭হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে। এসব শিক্ষকরা প্রথম ৩মাসের বেতন ভাতা পাওয়ার পর প্রায় ১১ মাস ধরে আর কোন বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অথচ ওই সকল স্কুলে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তারা ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটরের কথা মত নিয়মিত স্কুল চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষকরা জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২.৫ পয়েন্টের নীচে শিক্ষক নেওয়া যাবেনা বলে উল্লেখ্য থাকলেও বিল, হাওর, চর, নদীভাঙ্গন, উপজাতির ক্ষেত্রে নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ্য রয়েছে। তাড়াশ উপজেলা বৃহত্তর চলনবিল ও হাওর এলাকার মধ্যে অবস্থিত বলে ২০১৪সালে নতুন ৭২টি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা কিছুটা শিথিল করে এসএসসি পাশ শিক্ষক হিসেবে ২.৫ পয়েন্টোর নীচে ৮জন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করে তৎকালিন নিয়োগ কমিটি। নিয়োগ পাবার পর থেকে তারা নিয়মিত আনন্দ স্কুল চালু রেখেছে।

উপজেলার সকল আনন্দ স্কুল প্রথম পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের উপকরণ, পোষাক, ঘরভাড়াসহ অন্যান্য আনুসঙ্গিক ও ৩মাসের বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। গত মার্চ মাসে প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে একটি চিঠি ইসু করা হয়। সেখানে ৭জন শিক্ষককের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রকল্পের নীতিমালা অনুযারী কম হওয়ায় শিখন কেন্দ্রে শিক্ষক প্রতিস্থাপনের নিদের্শ দেওয়া হয়। ওই পত্রের আলোকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ছোলাইমার আলী মার্চ মাসের ১৯তারিখে উক্ত চিঠির উত্তর দেন এবং পুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যোগ্যতা সম্পুন্ন শিক্ষক না পাওয়ায় চলনবিল ও হাওর অঞ্চল হওয়ায় তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মর্মে উল্লেখ্য করে পত্র প্রেরণ করেন। পত্র প্রেরণ করেন। কিছুদিন পর ৭জন শিক্ষকের মধ্যে ২জন শিক্ষক বেতনভাতা, শিক্ষা উপকরণ ও অন্যান্য জিনিসপত্র চলে আসে। শিক্ষকরা জানান, টিসি ওছমান গনি সরকার আমাদের ৭জনকে আলাদা আলাদা ভাবে ডেকে বলেন, আপনাদের অল্প দিনের মধ্যেই প্রতিস্থাপন করা হবে। এখন টাকা দিলেই ঢাকা থেকে আপনাদের বেতন, উপকরণ ও পোষাকের ও অন্যান্য খাতের টাকা ছাড় করে এনে দেব। সেই মোতাবেক কাজিপুর আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন ৬হাজার টাকা, পশ্চিম পাইকড়া আনন্দ স্কুলের শিক্ষক আলহাজ উদ্দিন,৭হাজার টাকা, শাকমল সিংগারপাড়া আনন্দ স্কুলের শিক্ষক আব্দুস সামাদ ৬হাজার টাকা, মালশিন আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা মোছাঃ মাহমুদা ৬হাজার টাকা, টাংগরা উত্তর পাড়া আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা হাফিজা ৬হাজার টাকা, নারা তেঘরী আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা লাভলী ৬হাজার করে টাকা আদায় করেছে।

অপর দিকে চাকুরীর সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদপত বেশী ও অতিরিক্ত কাগজপত্র অপরাধে ৬জন শিক্ষিকার বেতন ভাতাসহ সকল শিক্ষা কার্যক্রমের উপকরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। ভাদাস আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা কুলছুম খাতুন, রংমহল আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা রোকেয়া খন্দকার, কালিদাসনীলি আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা শাহানাজ পারভীন, দিঘুরিয়া আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা নাজমা খাতুনসহ ৬জনের নিকট থেকে অতিরিক্ত কাগজ দেওয়ার কারণে তাদের বেতন ভাতা শিক্ষা উপকরণ, পোষাষ, ঘরভাড়া, উপবৃত্তির টাকাসহ সকল কিছুই তিনি বন্ধ রেখেছেন। এদেরও টাকা ঢাকা থেকে ছাড় করে এনে দেওয়ার কথা বলে প্রত্যকের নিকট ৫হাজার থেকে ৬হাজার টাকা আদায় করছেন। শিক্ষিকারা জানান আমাদের এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্রের সাথে এইচএসসি পরীক্ষার সনদপত্র চাইলে তৎকালিন নিয়োগ কমিটির নিকট জমা দেই। কেন আমরা অতিরিক্ত কাগজ জমা দিয়েছি এই অরপাধে আমাদের বেতনভাতাসহ সকল শিক্ষা উপকরণ তিনি বন্ধ রেখেছেন।

তাছাড়া উপজেলা আনন্দ স্কুলের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর ওছমান গনি সরকার নিজেই উপকরণ ও পোষাকের টাকা আত্মসাত করে তা জায়েজ করার জন্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের কিভাবে টাকা আত্মসাত করতে হয় তার কায়দা কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন। তার সীমাহীন দুর্নীতি, শিক্ষা উপকরণ, ছাত্রছাত্রীদের পোষাক ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে প্রায় ২লাখ আত্মসাত করেছেন। উপজেলা ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর ওছমাস গনি সরকার গত জুন মাসে ভাদাসের শাহাদতের আনন্দ স্কুলে ক্লাস্টার ভিত্তিক শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে সমবেত করে শিক্ষা উপকরণের ১২০টাকার মধ্যে তিনি প্রত্যক ছাত্রছাত্রীর নিকট থেকে ২০টাকা এবং পোষাকের ৪০০টাকার মধ্যে থেকে ৫০টাকা করে মোট ৭০টাকা উৎকোষ নিয়েছেন। যার পরিমান প্রায় ১লাখ ৯হাজার ৬২০টাকা। তাছাড়া তিনি উপজেলা শিক্ষক সমিতির নিকট থেকে ৩টাকা সেট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ক্রয় করে শিক্ষককের নিকটে ১০টাকা করে বিক্রয় করেছেন। তিনি ৩০৫৭ সেট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ক্রয় করে তার মধ্যে কিছু স্কুল বন্ধ থাকায় ২৬শ’ সেট প্রশ্ন শিক্ষকদের মধ্যে সরবরাহ করেন। সেখান থেকেও তিনি ১৮হাজার ২০০শত টাকা আত্মসাত করেছেন। ১৩জন শিক্ষকের নিকট থেকে প্রায় ৬০হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করেছেন। ২০১৫ সালে তাড়াশ উপজেলায় মোট ৯০টি আনন্দ স্কুলের মধ্যে ৭১টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৫৬৬জন। ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাসের শিক্ষককের বেতন ভাতা, শিক্ষা উপকরণ, বাড়িভাড়া, পরীক্ষার টাকা, স্কুল মেরামত ও সজ্জা করণ ও পোষাকের জন্য ১৮লক্ষ, ৯৯হাজার ৫৪০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। তিনি শুধুমাত্র জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪মাসের উক্ত টাকা থেকে ১লাখ ২৭হাজার ৮২০ টাকা এবং শিক্ষকদের নিকট থেকে প্রায় ৬০হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন। এব্যাপারে আনন্দ স্কুলের তাড়াশ উপজেলা ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর মোঃ ওছমান গনি বলেন, আমি কোন শিক্ষককের নিকট থেকে টাকা নেই নাই। তিনি সংবাদটি পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করেন। বর্তমানে ১১মাস ধরে বেতন ভাতা না পেয়ে আনন্দ স্কুলের শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্ঠি কামনা করেন এবং সরেজমিনে তদন্ত পুর্বক দুর্নীতিবাজ ওছমান গনির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানানএলাকার সচেতন মহলের দাবী তাড়াশে আনন্দ স্কুলের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর ওছমান গনির দুর্নীতির সকল তদন্ত, কোমল মতি ছাত্রছাত্রীর টাকা আত্মসাত ও শিক্ষককের বেতনভাতা বন্ধ রেখে টাকা আদায়সহ সকল টাকা ফেতর দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ঠ প্রকল্প পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মীরপুর বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

(এমএমএইচ/এসসি/সেপ্টেম্বর০৩,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test