E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, চাষাবাদ ব্যহত

২০১৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১১:৪৫:০৭
চাঁদপুর সেচ প্রকল্পে পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, চাষাবাদ ব্যহত

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: সীমাহীন অব্যবস্থার কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের (সিআই পি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানসহ পানি নিষ্কাষণের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা জলাবদ্বতা মুক্ত রাখার জন্য ৭৫' সালে সিআইপির কার্যক্রম শুরু হয়।

জানা যায়, রায়পুর, রামগঞ্জ, লক্ষীপুর সদর (আংশিক),ফরিদগঞ্জ, হাইমচর ও চাঁদপুর সদর উপজেলা (আংশিক) প্রকল্পের আওতাধীন। প্রকল্পের পানি চলাচলের অন্যতম চ্যানেল বেড়ি বাধ সংলগ্ন ৯০ কিঃমিঃ দীর্ঘ ও ৬০ফিট প্রশস্ত বোরা ফিট খালের বহু স্থানে প্রভাবশালী এক শ্রেণির লোক নাইলনের মোটা রশির নেটের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। প্রকল্পের ভিতরে জালের মত ছড়িয়ে থাকা ১ হাজার ২শ কিঃ মিঃ সেচ খালের মধ্যে বহু স্থানে মাছ ধরা এবং মাছ চাষের নামে মাটির বাঁধ ও নেট দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বাগানবাড়ি বিলের পানি নিষ্কাষণের পথ বন্ধ করে দিয়ে বহু বাড়ি ঘর দোকান পাট নির্মাণ করা হয়েছে।

গত ২৫ হতে ৩০ বছর ধরে লাগামহীন ভাবে তৈরী হয়ে আসা মনুষ্য সৃষ্ট এ সকল প্রতিবন্ধকতার কারনে ২২ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাষণ ক্ষমতা সম্পন্ন রায়পুরের ৪ বেন্টের হাজিমারা রেগুলেটর দিয়ে প্রকল্পের পানি নিষ্কাষন কাজ মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্প এলকার প্রায় সব স্থানে প্রকট জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকদের আবাদ করা ক্ষেতের ফসল শাকসবজি বিনষ্ট হয়। দরিদ্র কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে।

কৃষকরা জানান, চলতি মৌসুমে আমন চাষের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ১০ হাজার একর জমি অনাবদি অবস্থায় পড়ে থাকবে। প্রকল্প এলাকায় এ বছর ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষমাত্রা ছিল। প্রকল্প এলাকায় ২৫ হাজার পুকুরে মাছ চাষ হয়। বহু পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে যায়। বাড়ি ঘর উঠানে পানি উঠায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানি নামতে না পারায় বহু স্থানে ৬ মাস পর্যন্ত স্থায়ীভাবে থাকা জলাবদ্বতা হতে সৃষ্ট দূর্গন্ধ পরিবেশকে দূষণীয় করে ফেলে। এতে লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ তদারকি দায়িত্বে থাকা পাউবোর লোকজনকে পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিন ধরে পাউবোর ফরিদগঞ্জ ও রামগঞ্জ উপ সহকারী প্রকৌশলী অফিস এবং রায়পুর উপ বিভাগীয় অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারী কেউ বসেনা। দুর্বৃত্তরা রায়পুর অফিসের দরজার কপাট জানালার গ্রীলসহ মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে নিয়ে গেছে।

সিআইপি সংশ্লিষ্ট উপজেলা উন্নয়ন সভার সদস্য হয়েও পাউবোর কেউ উন্নয়ন সভাগুলোতে উপস্থিত থাকেনা।

এছাড়াও গত জুলাই মাসের টানা বৃষ্টি পাতের সময় রামগঞ্জের দাসপাড়া ভাংগা সুইসগেইট দিয়ে স্রোতের বেগে ২০ দিন যাবত বাহির হতে প্রকল্পের ভিতরে পানি প্রবেশ করে চলতি আমন মৌসুমে জলাবদ্ধতা ভয়বহ রূপ ধারন করে।

পশ্চিম লক্ষীপুর গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন, ছাদেক আলী, খগেন্দ্র, অবনি মজুমদার, সোনাপুর গ্রামের শাহ আলম, রুহুল আমিন, খোরশেদ মনির আহমদ, চরপাতা গ্রামের পেয়ার আহমদ, নুরনবী, নুর হোসেন সহ স্থানীয় বহু কৃষক জানান, এবারের ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় তাদের বহু কৃষকের তিনবার পর্যন্ত তৈরি করা আমনের বীজতলা সম্পূর্ন বিনষ্ট হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে প্রকল্প এলাকায় ১০ সহস্রাধিক একর জমি আমন চাষবিহীন অবস্থায় খালি পড়ে থাকবে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আলম জানান, উপজেলা উন্নয়ন সভার সদস্য হওয়ার পরও পাউবোর কেউ উন্নয়ন সভায় উপস্থিত থাকেননা। অফিসেও তাদের কাউকে পাওয় যায়না। এতে উপজেলা প্রসাসনের সাথে পাউবোর কাজের সমন্বয় করা যাচ্ছেনা।

সিআইপির নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মোহাম্মদ শওকত আলী জানান, হাজীমারা রেগুলেটর ছাড়াও জরুরী প্রয়োজনে ১২শ কিউসেকের চরবাগাদী পাম্প হাউজ দ্বারাও পানি নিষ্কাশন করা হয়। প্রতিবন্ধকতামুক্ত এবং পরিকল্পিত ভাবে নিষ্কাষণ ব্যবস্থা রাখা হলে প্রকল্প এলাকা জলাবদ্বতা মুক্ত রাখা সম্ভব।

নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) মোহাম্মদ রফিক উল্ল্যা জানান, লোকবলের অভাবে মাঠ পর্যায় এবং অফিসে কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। দাসপাড়া সুইস গেইটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রসাসনের সাথে সমন্বয় করে পানি নিস্কাষণ পথের বাধাগুলো অপসারনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(এমআরএস/এলপিবি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test