E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লক্ষ্মীপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ে বেপরোয়া দালালচক্র

২০১৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১৮:০৫:৪৯
লক্ষ্মীপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ে বেপরোয়া দালালচক্র

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে বিআরটিএ কার্যালয়ে (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) দালালদের দৌরাত্ম্যে চরম ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।

কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক নাজমুল হাসান ও সহকারী পরিচালক আইনুল হুদা চৌধুরী মাসোয়ারার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ দালালচক্রকে মদত দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বুধবার বিকেলে ওই কার্যালয়ে টেবিল পেতে কর্মচারী সেজে কাজ করার সময় কামাল উদ্দিন নামে এক চিহ্নিত দালালের ছবি তুলতে গেলে মোটর পরিদর্শকের নেতৃত্বে স্থানীয় এক সাংবাদিককে শারিরিক লাঞ্ছিত করা হয়। ছিনিয়ে নেয়া হয় সাংবাদিকের ক্যামেরা।

একাধিক ভূক্তভোগী জানায়, গত কয়েক বছর থেকে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে একটি দালাল সিন্ডিকেট নানাভাবে গ্রাহকদের হয়রানি করে আসছিলো। ২০১৩সালে জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কয়েকজন দালালকে কারাদন্ড দেন। এতে গ্রাহকদের মাঝে কিছুটা স্বতি আসে। পরে এ বছরের শুরুতে ওই কার্যালয়ে মোটরযান পরিদর্শক হিসেবে নাজমুল হাসান দায়িত্ব নেয়ার পর আবারো দালালদের দৌরাত্ম চরমে পৌঁছৈ।

মাসোয়ারা আদায় করতে তিনি নিজেই কয়েকজন দালাল নিয়োগ করেন। এসব দালালের মাধমে তিনি মাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। বিভিন্ন সময় অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় পরিদর্শক নাজমুল তার দুই কর্মচারী ও দালালদের হাতে একাধিক গ্রাহক লাঞ্ছিত হয়েছে।

পরিচয় প্রকাশে অনিইচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোটর পরিদর্শক নাজমুল প্রতিটি ট্রাক ও পিকআপ ফিটনেস ফাইলে স্বাক্ষর দিতে দালালদের কাছ থেকে ৭০০টাকা, প্রতিটি সিএনজি অটোরিক্সার ফিটনেস ফাইলে স্বাক্ষর করতে ৩০০টাকা, মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশন করতে ৩০০টাকা, ড্রাইভিং লাইসেন্স রিনিউ করতে ৫০০টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন। এছাড়াও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অবৈধকাজের বৈধতা দিয়ে থাকেন। আর এসব কাজে নির্ধারিত সরকারি ফি ছাড়াও দালালরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৬হাজার টাকা অতিরিক্তি হাতিয়ে নিচ্ছে।

এ কার্যালয়ে নানা বয়সী অন্তত ১৫ জন দালাল রয়েছে। নাজমুলের নিয়োগপ্রাপ্ত দালাল যুগির হাটের সোহাগ, সোহাগ(২), মান্দারী বাজারের জামায়াত কর্মী কামাল উদ্দিন, শিবির কর্মী সারোয়ারসহ কয়েকজনের মাধ্যমে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতিটি ফাইলে স্বাক্ষর করতে চাহিদা মতো টাকা না দিলে মাসের পর মাস ঘুরেও সেবা মিলেনা। মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রিশন ফি যথাক্রমে ১৯হাজার থেকে ২১হাজার ২৭৩টাকা হলে দালালরা আদায় করছেন ৩০ থেকে ৩৫হাজার টাকা। এছাড়াও বিনা পরীক্ষায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করছেন ২০ থেকে ২৫হাজার টাকা।

এদিকে বুধবার বিকেলে ওই কার্যালয়ে কামাল উদ্দিন নামে এক চিহ্নিত দালাল টেবিল পেতে কর্মচারী সেজে কাজ করার ছবি ক্যামেরায় ধারন করে স্থানীয় সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ। এসময় মোটরযান পরিদর্শক নাজমুল হাসান তার কক্ষ থেকে তেড়ে এসে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে ওই সাংবাদিকের ওপর অর্তকিতভাবে হামলা করে। হামলায় ওই কার্যালয়ে কর্মচারী আবদুস সামাদ, দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন দালাল অংশ নেয়। কেড়ে নেয়া হয় সাংবাদিকের ক্যামেরা। পরে কয়েকজন গ্রাহক তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আহত সাংবাদিক মানবকন্ঠ ও বাসস লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি।

চন্দ্রগঞ্জের দেওপাড়া গ্রামের সোহেল নামে এক গ্রাহক জানান, তিনি বুধবার মোটরসাইকেল রেজিষ্ট্রিশন করতে পরিদর্শক নাজমুল হাসানের কক্ষে যান। এসময় পরিদর্শক নাজমুল চিহ্নিত দালাল কামাল হোসেনের সঙ্গে তাকে কথা বলতে বলেন। তার মোটরসাইকেলের রেজিষ্ট্রিশন ফি ২১হাজার ২৭৩টাকা হলেও কামাল ২৬হাজার টাকা দাবি করেন।

জেলা শহরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কার্যালয়ের পরিদর্শক নাজমুল হাসানের কাছে গেলে নামজুল তার কাছ থেকে ২০হাজার টাকা দাবি করেন। নচেৎ ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় উর্ত্তীন হলেও কোন লাভ হবেনা বলে জানান।

এব্যপারে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের মোটর পরিদর্শক নাজমুল হাসানের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আইনুল হুদা চৌধুরী জানান, তিনি দালালদের কাছ থেকে মাসিক আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। তবে মোটর পরিদর্শক নাজমুল হাসানের বিষয়টি খতিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান জানান, সাংবাদিকের ওপর হামলা ও গ্রাহকদের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মচারীদের শেল্টারে দালাল চক্রের গ্রাহক হয়রানির একাধিক অভিযোগ তিনি শুনেছেন। সাংবাদিকের ওপর হামলার খবরপেয়ে ঘটনাস্থলে ম্যাজিষ্ট্রেট পাঠানো হয়েছে। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। এঘটনায় অচিরেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এমআরএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test