E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদকে ভাসছে লোহাগড়া!

২০১৫ সেপ্টেম্বর ১১ ১৮:৫৩:৪৪
মাদকে ভাসছে লোহাগড়া!

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : শীর্ণকায় নবগঙ্গা ও প্রমত্বা মধুমতি নদী বিধৌত ঐতিহ্যবাহী ও শতাব্দী প্রাচীন জনপদ হল, নড়াইলের লোহাগড়া। শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতির চারণ ক্ষেত্র লোহাগড়া তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। লোহাগড়ার সেই রূপ আজ আর নেই। রূপ-সৌন্দর্য হারিয়ে শ্রীহীন জনপদে পরিনত হয়ে পড়েছে শতাব্দীর স্বাক্ষী লোহাগড়া।

পৌর শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নীতি নৈতিকতা ও অসামাজিক কার্যকলাপ দিনকে দিন বাড়ছে। ভয়াল মাদকের আগ্রাসী থাবায় সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময়ী লোহাগড়া ‘প্রায় বিপন্ন’ জনপদে পরিনত হয়ে পড়েছে। সর্বত্র মাদকের ছড়াছড়ি। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে এখানে মাদক বিক্রেতার পাশাপাশি ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। এখানকার মাদক সেবীদের কাছে ‘ইয়াবা’ এখন হট কেকের মতো। মোবাইল ফোনের মাধ্যম্যে দেদারসে চলছে ইয়াবা বেচা-কেনা।

পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মকর্তারা মাদক পাচার ও বিক্রি বন্ধে তৎপর থাকলেও মাদক বেচাকেনা থেমে নেই। মাদকের সহজলভ্যতা, অপেক্ষাকৃত কম দাম এবং পুলিশী ঝুঁকি কম থাকায় লোহাগড়ার মাদক পাচারকারী ও সেবনকারীরা ‘ইয়াবা বড়ি’র নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। বাজারের অলিগলি, পাড়া-মহল্লায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ‘সিন্ডিকেট’ করে ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। এক কথায়, ইয়াবায় ভাসছে লোহাগড়া।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর শহরসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক বাণিজ্যিক পয়েন্টে দেদারসে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। এসব মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে, ঘুমের বড়ি, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ ও ইয়াবা। বছর খানেক পূর্বে ফেনসিডিলের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বর্তমানে তা কমে সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে ইয়াবা। বর্তমানে এখানে এক বোতল ফেনসিডিলের দাম ১ হাজার টাকা থেকে ১২শত টাকা। পক্ষান্তরে ভারতের তৈরি একটি ইয়াবা বড়ির দাম ১শ’ ৩০টাকা থেকে দেড়শ টাকা। মায়ানমারের তৈরি একটি ইয়াবা বড়ি সাড়ে ৩শ টাকা থেকে ৪শ টাকা। মুলতঃ দাম কম হওয়ার কারণে মাদক বিক্রেতাদের পাশাপাশি সেবনকারীরা ইয়াবার বড়ির নেশায় ঝুঁকে পড়েছে।

লোহাগড়ায় সড়ক পথ দিয়ে মাদকদ্রব্য প্রবেশ করে থাকে। সীমান্ত শহর যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের মাদক পাচারকারী চক্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিজস্ব লোকজন দিয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক পাচারকারীরা মাদক পাচারের জন্য পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের বেশি ব্যবহার করছে। এরা ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে পরিচিত। এ সব ক্যারিয়ারদের অধিকাংশ স্বামী পরিত্যক্ত ও তালাক প্রাপ্ত মহিলা। ক্যারিয়াররা মাদকসহ মাঝে মধ্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও ভুল ঠিকানা দিয়ে তারা সহজেই মামলা থেকে অব্যহতি পেয়ে যাচ্ছে।

কালনা-নড়াইল-যশোর মহা সড়কে দিনের বেলায় কোন পুলিশী টহল বা চেক না থাকায় মাদক পাচারকারীরা এই রুটটি ব্যবহার করছে। লোহাগড়ার পূর্বাঞ্চলের কালনা ঘাট দিয়ে মাদকদ্রব্য রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যাচ্ছে। কালনা ঘাট দিয়ে মাদকদ্রব্যের পাশাপাশি অস্ত্র ও সোনা পাচার হচ্ছে।

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ লুৎফর রহমান জানান, ‘বেআইনি মাদকদ্রব্য উদ্ধারে জন সচেতনতা না বাড়ালে মাদকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে মাদক বেচাকেনা বন্ধে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে’।

(আরএম/এএস/সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test