E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরার সীমান্ত হাটগুলোতে ভারতীয় গরু ও মহিষের সংখ্যা বাড়ছে

২০১৫ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৮:২৯:২০
সাতক্ষীরার সীমান্ত হাটগুলোতে ভারতীয় গরু ও মহিষের সংখ্যা বাড়ছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সংখ্যায় কম হলেও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু ও মহিষ আসতে শুরু করেছে। ফলে সীমান্তবর্তী হাটগুলোতে কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা আশা করা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাজার মূল্যও থাকবে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্তের সোনাবাড়িয়া খাটালে গেলে উপজেলার রাজপুর গ্রামের গরু রাখাল ইউসুফ আলী (৩৯), আনারুল ইসলাম (৪২), খোকন গাজী (৪৯), মন্টু মিয়া, আব্দুস সালাম কারিকর জানান, প্রতিদিন তারা রাত জেগে উভয় দেশের শূন্য রেখা থেকে গরু ও মহিষ নিয়ে নির্ধারিত খাটালে তুলে দিচ্ছেন। গরু সংকটের কথা অস্বীকার না করেই বলেন, বিগত ১১ মাস ধরে শুন্য পড়ে থাকা খাটালে গত এক সপ্তাহ ধরে গরু উঠছে। এখন পরিমানে কম হলেও ঈদ যত এগিয়ে আসছে গরু আসার পরিমানও তত বাড়ছে।

দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সীমান্তের বিভিন্ন খাটালে গেলে একই কথা বলেন, কেড়াগাছির রবিন মণ্ডল, রহমান গাজী, ভাদিয়ালির জামান গাজী, নজরুল ইসলাম, সদরের কুশখালির আব্দুল খালেক, তলুইগাছার ফজর আলী, ভোমরার জহিরুল ইসলাম, আবু সালেক, পদ্মশাঁখরার জাকির হোসেন, দাউদ আলী, দেবহাটার ভাতশালার সোহাগ হোসেন, মুনছুর গাজী। তারা জানান, ভারত থেকে গরু ও মহিষ এলে তাদের সংসারটা ভালভাবে চলে। নইলে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হয়। গরু- মহিষ আসা অব্যহত থাকলে তারা বাড়ির ছেলে মেয়েদের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে পারবেন।

কলারোয়া সীমান্তের গয়ড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আয়উব আনছারী, আনারুল ইসলাম, লাভলু মোড়ল, তবিবর রহমানসহ আরো অনেকেই বলেন, গত দুই তিন দিন ধরে লাইন একটু ভালো হয়েছে। চোরাই পথে গরু আসছে। চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় রাখালদের সীমান্ত পারাপার খরচ বেশী হচ্ছিল।

হিজলদী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন, জালাল উদ্দীন, আমির হামজা জানান, এক সময় তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার হটাৎগঞ্জ হাট থেকে গরু নিয়ে আসছেন। বিএসএফ কড়া কড়ি আরোপ করায় ভারতীয় রাখালদের গরু পার করে দিতে বেশী টাকা দিতে হচ্ছে।

তারা দাবি করেন, ভারতের গরু হাটে আসলে দেশি গরু না আসলেও কোররবানির হাটে খুব বেশী প্রভাব পড়বে না। কারন হিসেবে তারা জানান, এদেশে গরুর চাহিদা বেশী থাকায় ভারত সীমান্ত দিয়ে বানিজ্যিক ভাবে অসংখ্য গরুর খামার গড়ে উঠেছে। যা কোরবানির ঈদ উপলক্ষে একটু বেশী দামে বিক্রি হয়ে থাকে। গরু বিক্রি না হলে ভারতীয় গরু পালনকারিদের সমস্যায় পড়তে হবে। এ অবস্থায় তারা বিএসএফের চোখ ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে সীমান্ত পার করে এদেশে গরু বিক্রি করে যাচ্ছে। এ জন্য কোরবানির দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ভারতীয় গরু আসাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ,সাতক্ষীরা জেলার ১৩৮ কিলিমিটার সীমান্ত এলাকায় বৈধ ও অবৈধ মিলে ৪৯ জন খাটাল মালিক আছেন। গরু ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে গরু এনে এসব খাটালে জমা করেন। পরে নির্ধারিত শুল্ক অফিসের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা গরু নিয়ে যায়। এখন গরু আসা শুরু হওয়ায় ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী,, ফেণী, বরিশাল, চাঁদপুর, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকার গরু ব্যবসায়িরা সীমান্তের খাটালে আসা শুরু করেছেন। আগে ব্যবসা না থাকায় দুশ্চিন্তায় থাকা প্রতাক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সাথে জড়িত সাতক্ষীরা সীমান্তের লক্ষাধিক মানুষের মনে এখন ঈদ আনন্দ। প্রশাসনসহ সংবাদ কর্মীদের কারণে লাইন বে-লাইন (সীমান্ত গলিয়ে গরু আসা শুরু হওয়া অবস্থা) হওয়ার ভয়ে গরুর রাখাল, খাটাল মালিক, ব্যবসায়ী এমনকি রাজস্ব আদায়কারি কর্মকর্তারাও গরু নিয়ে খুব সাবধানে কথা বলছেন। সঠিক তথ্য প্রদানেও তাদের কপালে ভাঁজ পড়তে দেখা গেছে।
বরগুনার গরু ব্যবসায়ী জাফর আহম্মেদ, কুমিল্লার গরু ব্যবসায়ী আমিন উদ্দীন ওরফে আমিন কসাই জানান, ভারতীয় গরু আসতে শুরু করেছ। গত তিন দিনে তারা ট্রাকে করে সাতক্ষীরা পার্শ্ববর্তী সাতমাইল হাট থেকে কোরবানি জন্য ভারতীয় ২১৭ টি গরুর চালান ঢাকায় পাঠিয়েছেন।

তারা আরো জানান, ভারত থেকে আসা গরুর জন্য আগে সীমান্ত পারাপার খরচ ছিলো ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এখন সংকটের কারণে সীমান্ত পার করতে খরচ হচ্ছে গরু প্রতি দু’ হাজার ৬০০ থেকে দু’ হাজার ৭০০ টাকা। এর উপর রাজস্ব ও বহন খরচ তো আছেই। খরচ বেশী হওয়ায় এবার গরুর দামও একটু বেশী পড়বে। অভিজ্ঞতার আলোকে শেষ পর্যন্ত পশুর দর দামের বিষয়টি আঁকাশ ছোঁয়া থাকে না বলেও তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গরু ব্যবসায়ি জানান, কালীগঞ্জের উক্সা, খাঞ্জিয়া, শুইলপুর, দেবহাটার ভাতশালা, কোমরপুর, সদরের পদ্মশাঁখরা, ভোমরা, দাদভাঙা বিল, গাজীপুর, এলাকা দিয়ে ভারতীয় গরু কম আসছে। তবে সদরের বৈকারী, তলুইগাছা,কুশখালি, কলারোয়ার কাঁকডাঙা, কেড়াগাছি, ভাদিয়ালি ও পুটখালি এলাকা দিয়ে সম্প্রতি বেশি গরু আসছে। তবে এক এক খাটাল মালিক প্রশাসনকে ম্যানেজ করার নামে করিডোর করতে গরু পিছু এক হাজার ৪০০ টাকা থেকে দু’ হাজার ৭—টাকা আদায় করছেন।তবে ভোমরা খাটালের সামছুজ্জামান ও লিয়াকত দু’ হাজার ৭০০ টাকা এবং ভাতশালা খাটালের আব্দুল জলিল বিশ্বাস গরু পিছু এক হাজার ৪০০ টাকা করিডোর বাবদ আদায় করছেন। যদিও ওইসব খাটাল মালিকরা করিডোর বহির্ভুত টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করেছেন।

সাতক্ষীরার সোনাবাড়িয়া করিডোরের উপ-সহকারি পরিদর্শক আব্দুর রশিদ জানান, প্রতিদিন ভারত থেকে আসা গরু তাঁর করিডোরের মাধ্যমে ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার সাকাল ১০ টা পর্যন্ত কাকডাঙ্গা, মাদরা ও চান্দুড়িয়ার খাটাল থেকে আসা ১০৯টি গরুর ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। এবার কোরবানির পশুর সংকট হবে ধারনা করা হলেও দিন দিন পরিস্থি পাল্টে যাচ্ছে।
সীমান্ত পরিস্থিতি জানতে চাইলে সদর থানার তলুইগাছা বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার হায়দার আলী জানান, সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে গরু আনতে বাংলাদেশী রাখালদের ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তবে ভারতীয় রাখালরা তাদের গরু সীমান্ত পার করে দেয়ার সময় কোন বাধা প্রদান করা হচ্ছে না।

সাতক্ষীরা ভ্যাট ও শুল্ক অফিসের উপ-পরিদর্শক মো: আবুল হোসেন জানান, সাতক্ষীরা সীমান্তে আটটি গরু করিডোর আছে। এসব করিডোর দিয়ে চলতি বছরের পয়লা জানুয়ারি থেকে ১৭ সেপ্টম্বর পর্যন্ত সরকারি হিসেবে ৫৩ হাজার গরু এসেছে। প্রতিটি করিডোর থেকে প্রতিদিন গরুর ভ্যাট আদায় শুরু হয়েছে। বর্তমানে গরু থেকে রাজস্ব আদায়ে মন্দাভাব কেটে গেছে। গরু প্রতি ৫০০ টাকা করে ভ্যাট গ্রহন করা হচ্ছে।

বিজিবি’র সাতক্ষীরা ৩৮ ব্যাটেলিয়ন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর নজির আহমেদ বকশি জানান, বিএসএফের হাতে নির্যাতিত অনেক গরু রাখাল নিহত হয়েছে। সীমান্তে গরু রাখাল হত্যাসহ সব ধরনের সীমান্ত অপরাধ রোধে বিজিবি কঠোর অবস্থান গ্রহন করেছে। সীমান্ত পার হয়ে কোনভাবেই বাংলাদেশীদের ভারতে যেতে দেয়া হবে না। তবে গরু নিয়ে ভারতীয় গরু রাখালসহ ব্যবসায়ীরা সীমান্তের শুন্য রেখা এলাকায় ঢুকতে পারবে। প্রয়োজনে তারা বাংলাদেশ সীমানার কাছে (জিরো পয়েন্টের শেষ পিলার) আসলেও অনুপ্রবেশকারি হিসাবে ধরা হবেনা। শুধু গরু প্রদানকারি ভারতীয়দের জন্য এই ছাড় দেয়া হবে। তবে গরু পিছু কেউ করিডোরের নামে তাদের বা প্রশাসনের নামে ৫০০ এর বেশি টাকা আদায় করলে যারা টাকা বেশি দিচ্ছে দায়ভার তাদের ।

(আরএনকে/এসসি/সেপ্টেম্বর১৯,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test