E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বেহাল দশা

২০১৫ সেপ্টেম্বর ২১ ১৪:৫৪:১৩
শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের বেহাল দশা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি :শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪০ কিলোমিটার এলাকার প্রায় ২৫ কিলোমিটারই খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপুযোগি হয়ে পরেছে। প্রতিদিনই সড়কের কোথাও না কোথাও ঘটছে দূর্ঘটনা। খাল-পুকুড়-ডোবায় পরে যাচ্ছে পন্যবাহী ট্রাক। রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। ভোগান্তি হচ্ছে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের। কোন উপকারেই আসছেনা, এমনভাবে সামান্য ইট সুরকি দিয়ে চলছে লোক দেখানো জরুরী মেরামতের কাজ। এলাকার মানুষ ও পরিবহনের লোকেরা জরুরী ভিত্তিতে সড়কটি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে।

মাত্র দেড় বছর আগে সড়কের জেলা সদরের আঙ্গারিয়া বাজার থেকে ভেদরগঞ্জের আলু বাজার ফেরী ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের সংস্কার করা হয়েছিল ২১ কোটিরও বেশী টাকা ব্যয়ে । ওই সময় খুলনা শহরের মেসার্স শফিক এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিন্ম মানের নির্মান সামগ্রী দিয়ে সড়কের উন্নয়ন কাজ করায় মাত্র ৬ মাস পার না হতেই রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে সৃষ্টি হতে থাকে গর্ত ও খানাখন্দ। ৩৮ কিমি সড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটারই চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে।

কিছু দুর পর পর রাস্তার পিচ সুরকি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রায়শই ঘটতে থাকে ছোট বড় দূর্ঘটনা। রাস্তার মাঝখানে, পাশের খাল-পুকুর-ডোবায় প্রায় প্রতিদিনই দেবে যাচ্ছে যাত্রী ও পন্যবাহী বাস-ট্রাক। ফলে মাইলের পর মাইল যানজট সৃষ্টি হয়ে ৬ থেকে ৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত সময় বেশী ব্যয় হচ্ছে গন্তব্যে পৌছতে । এতে ভোগান্তিতে পরছে গণপরিবহনের যাত্রীসহ ব্যবসায়ীরা। গত মে মাসের পর থেকে অবিরাম বর্ষনের কারনে রাস্তা চলাচলের জন্য আরো অধিক অনপুযোগি হয়ে পরেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অচল রাস্তা ইট সুরকি দিয়ে জরুরী মেরামতের নামে এক শ্রেনির অসাধু লোকের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে দিচ্ছে সড়ক বিভাগ।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা শহর থেকে পন্যবাহী ও গণপরিবহনের চাপ কমানোর জন্য চট্টগ্রাম থেকে মংলা, সিলেট থেকে বেনাপোল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ থেকে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সাথে সহজে যাতায়াত করার জন্য ২০০১ সালে শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে শরীয়তপুর জেলার ওপর দিয়ে শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক নামে এ সড়কটি চালু করা হয়। সড়কটি চালু হওয়ায় এসব জেলাগুলোতে সড়ক পথে এক অঞ্চল থেকে অপর অঞ্চলের সাথে যাতায়াত করতে স্থানভেদে দুরত্ব হ্রাস পেয়েছে ১ শত ৫০ থেকে ২শ’ ২০ কিমি পর্যন্ত। ২০০২ সালের পর থেকে এই সড়কটিতে দীর্ঘদিন সংস্কার কাজ হয়নি। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে পূনরায় ক্ষমতালাভের পর পর্যায়ক্রমে জেলার অন্যান্য সড়কের মত এই সড়কটিরও উন্নয়ন করানো হয় ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের শরীয়তপুর পৌরসভার আঙ্গারিয়া বাজার থেকে বুড়িরহাট হয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ন বিরাট এলাকা নিয়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক খানা খন্দের সৃস্টি হয়েছে। ভেদরগঞ্জ বাসস্টান্ড থেকে শুরু করে নারায়নপুর পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ দেবে এবং রাস্তার পিচ সুরকি ওঠে অসংখ্য ছোট বড় গর্তের সৃস্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপুযোগি হয়ে পরেছে। গত ৭ দিনে ভেদরগঞ্জ পৌর শহরের পদ্মা হাসপাতালের সামনে ও বাওই কান্দির মোড় থেকে নারায়নপুর বাজারের পশ্চিম পার্শ্বের মোড়ে পিয়াজ, সিমেন্ট, রপ্তানীজাত চিংড়ি মাছ, চাউল ও সব্জিবহনকারী অন্তত ৮টি ট্রাক দেবে গিয়ে ও পাশের পুকুরে পরে সড়কটির যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অন্তহীন ভোগান্তিতে পরতে হয়েছে এ পথে যাতায়াতকারী কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী গণপরিবহনের বাসসহ সব ধরণের যানবাহন।

ভেদরগঞ্জের নারায়নপুর এলাকার হাবিব হাওলাদার, মোখলেছুর রহমান শিকদার, আবু আলম খান জানান, মাত্র এক বছর আগে রাস্তার সংস্কার করা হয়েছে। নিন্ম মানের কাজ করার ফলে ৬ মাস না যেতেই রাস্তার পিচ উঠে নস্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিনই রাস্তা দেবে এ এলাকায় গাড়ী দেবে যাচ্ছে। শত শত মানুষকে হয়রানি হতে হচ্ছে। রাস্তার দুই দিকেই শত শত গাড়ি জড়ো হয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা সরকারের কাছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি অতি দ্রুত টেকসই মেরামতের দাবী জানাই।

ভেদরগঞ্জ পৌরসভা এলাকার ইখলাসুর রহমান বলেন, সকালে ইটবালী দিয়ে কাজ করে গেছে সড়ক বিভাগের লোকজন। অথচ দুপুরের মধ্যেই সেগুলো উঠে আবার গর্তের সৃস্টি হয়ে গেছে। এটা ঠিকাদারদের পেট ভারী করা ছাড়া আর কিছুই না । এ রকম মেরামত কাজ আমরা চাই না।
সাতক্ষিরা থেকে ছেরে আসা চট্টগ্রাম বন্দরগামী রপ্তানিজাত চিংড়ি মাছ বহনকারী ট্রাকচালক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি ট্রাক নিয়ে চট্রগ্রাম যাওয়ার পথে ভেদরগঞ্জের নারায়নপুর প্রাইমারি স্কুলের মোড়ে এসে ভাঙ্গা রাস্তার কারনে গাড়ি নিয়ে পুকুরে পরে গিয়ে ২ দিন যাবৎ আটকা আছি। গাড়ি উঠানোর তেমন কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না। মাছ গুলো নষ্ট হয়ে গেলে মালিকের কোটি টাকারও বেশী ক্ষতি হয়ে যাবে। সহজে ও কম সময়ে চট্টগ্রাম পৌছানোর জন্য এ পথে এসে এখন ফেঁসে গেলাম।

খুলনা থেকে চট্টগ্রাম গামী দিদার পরিবহনের যাত্রী মনোয়ারা মুন্নি, পিরোজপুর থেকে চট্টগ্রাম গামী রোহান পরিবহনের যাত্রী লিয়াকত হোসেন ও চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল গামী বাস রাখি পরিবহনের চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, পন্যবাহি ট্রাক রাস্তার মধ্যে ফেঁসে যাওয়ায় গত কাল রাত দুইটার পর থেকে আমরা শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ এলাকায় এসে আটকা পরে আছি। ১৬ ঘন্টা পার হয়ে গেছে আমরা এখান থেকে ছারা পাওয়ার কোন লক্ষন দেখছিনা। তারা আরো বলেন, দেশে সরকার থাকতে এমন একটি গুরুত্বপূর্ন সড়কের এত খারাপ অবস্থা বছরের পর বছর থাকতে পারেনা।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, অতি বর্ষনের কারণে শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত হয়ে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক সাথে অনেক গুলো স্থান ড্যামেজ হওয়ায় সংস্কার কাজ করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। যেসব স্থানে বেশী ক্ষতি হয়েছে সেখানে তাৎক্ষনিক ভাবে যোগাযোগ সচল রাখার জন্য সুরকি ও বালু বিছিয়ে জরুরী মেরামত কাজ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের পূন:নির্মানের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রনালয় আবেদন করা হয়েছে।


(কেএনআই/এসসি/সেপ্টেম্বর২১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test