E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফুলছড়িতে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক মৌজা

২০১৫ সেপ্টেম্বর ২২ ১৭:১১:২৩
ফুলছড়িতে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক মৌজা

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করায় নতুন বিপদ। শুরু হয়েছে ব্যাপক নদী ভাঙন।

নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক মৌজা। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর অনেকেই দিশেহারা হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।

ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর, ফুলছড়ি, উড়িয়া, কঞ্চিপাড়া, গজারিয়া ইউনিয়নের বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এসব এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের শুরু হয়েছে এক নতুন লড়াই। পানির তীব্র স্রোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেওয়ায় দুই সহস্রাধিক পরিবার তাদের আবাদি জমি ও ঘর-বাড়ি হারিয়েছেন। অব্যাহত ভাঙনে গজারিয়া ইউনিয়নের কটকগাছা, জিয়াডাঙ্গা, গজারিয়া, গলনা ও ভাজনডাঙ্গা মৌজার অধিকাংশ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ পাঁচটি মৌজার ৭ শতাধিক পরিবার বসতভিটা ও ঘরবাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভাঙন কবলিত মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে গ্রামের যেসব বাড়ি অক্ষত আছে সেগুলোতে কেউবা পাশের গ্রামগুলোতে। সরেজমিন জিয়াডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে কথা হয় ওই গ্রামের বিধবা আসমা বেগম (৪৫) এর সাথে।

তিনি জানান, নদী ভাঙতে ভাঙতে তার বসতবাড়ির আঙ্গিনায় এসেছে। তার পরিবারে আর কোন লোক না থাকায় থাকার ঘরটা সড়ানোর জন্য অনেকের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করলেও কেউ এগিয়ে আসছে না। সবাই তাদের নিজের ঘর সড়াতেই ব্যস্ত। আসমা বেগম তার ঘরটা রক্ষা করতে পারবেন কিনা এনিয়ে দুঃচিন্তায় আছেন।

এ বছর নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি হারানো উক্ত গ্রামের আব্দুল কাদের (৫২), ময়নাল হক (৫০), নুর ইসলাম (৪০), ওমর আলী (৫০), আব্দুল বারেক (৫৫), আলী আকবর (৬০)সহ অনেকে জানান, ভাঙন তীব্রতা এতটাই বেশি যে ঘর-বাড়ি সড়ানোর সময় পর্যন্ত পাওয়া যায় না। ভাঙনের শিকার অনেকেই ঘর তোলার জায়গা না পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন।

প্রায় একই কথা জানালেন কটকগাছা মৌজার সাহাজ উদ্দিন (৫০), খাজা মিয়া (৩০), ছোরমান আলী (৬৫), ছামচুল মন্ডল (৬৫), কোমর মুন্সি (৭০), আজিম উদ্দিন (৬২), মোজাম্মেল হক (৫৮), ভাজনডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান (৭০), আহাদ আলী (৫৫), আব্দুল মালেক (৪৭)। ভাঙনের শিকার কটকগাছা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী (৭৫) আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী গলনা গ্রামে।

তিনি বলেন, বন্যা শুরুর আগেও কটকগাছা গ্রামে শতাধিক পরিবারের বসবাস ছিল। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আমার মতো একের পর এক পরিবার বাড়ি-ঘর নিয়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন।

স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন জানান, এ বছরের বন্যা ও নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে পথে বসলেও তেমন কোন সরকারি বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যায়নি। গ্রামের সবাই মিলে দল গঠন করে বাড়ি-ঘর সড়ানো হচ্ছে।

গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোতোষ রায় মিন্টু জানান, গত দুই বছরের ভাঙনে কটকগাছা, গলনা, ভাজনডাঙ্গা ও জিয়াডাঙ্গা মৌজার মূল ভূ-খন্ড নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আশ্রয়হীন হয়েছে শত শত মানুষ। শুধু এ বছরের ভাঙনেই গজারিয়া ইউনিয়নের ৮ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। তিনি সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের লোকজনকে সহায়তা প্রদানের আহবান জানান। এদিকে উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের তিনথোপা, আলগারচর, সন্যাসীর চর, হরিচন্ডি, ফজলুপুর ইউনিয়নের উজালডাঙ্গা, চিকিরপটল ও কুচখালী, উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর, মধ্য উড়িয়া, কালাসোনা, উত্তর উড়িয়া, কাবিলপুর, কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ছাতারকান্দি, রসুলপুর, হাড়ডাঙ্গা, পূর্ব কঞ্চিপাড়া ও উদাখালী ইউনিয়নের সিংড়িয়া গ্রামেও ব্যাপক আকারে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র রায় জানান, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবছর নদী ভাঙনে শত শত পরিবার বাস্তুহারা হচ্ছেন। নদী ভাঙন রোধে সরকারের মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরী হয়ে পড়েছে।

(আরআই/এলপিবি/সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test